রোহিত বিদায় ত্বরান্বিত করতেই কি ভারতীয় ক্রিকেটে ব্রঙ্কো টেস্ট আমদানি! আদতে কী এই পরীক্ষা, ইয়ো ইয়ো টেস্টের সঙ্গে ফারাক কী

বিরাট কোহলি-রবি শাস্ত্রীর জমানায় শুরু হওয়া ইয়ো ইয়ো পরীক্ষা অতীত। কোচ গৌতম গম্ভীরকে সন্তুষ্ট করতে হলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের এ বার থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে ব্রঙ্কো পরীক্ষায়। ক্রিকেটারদের ফিটনেসের মান সর্বোচ্চ পর্যায় নিয়ে যেতে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন এই পরীক্ষা শুরু করতে চলেছেন গম্ভীর। ইয়ো ইয়োর থেকে খানিকটা কঠিন ব্রঙ্কো পরীক্ষা। ক্রিকেট মহলের একাংশের আশঙ্কা রোহিত শর্মার মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছেঁটে ফেলতে ফিটনেসের নতুন মানকে হাতিয়ার করতে পারেন গম্ভীর।

ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে শুধু মহম্মদ সিরাজ পাঁচটি টেস্ট খেলেছেন। ক্রিকেটারদের ফিটনেসে খুশি নন গম্ভীর। তাই দেশে ফিরে ব্রঙ্কো পরীক্ষার নিদান দিয়েছেন তিনি। দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ আদ্রিয়ান লে রুর পরামর্শ অনুযায়ী নতুন এই পরীক্ষায় ক্রিকেটারদের বসাচ্ছেন গম্ভীর।

ব্রঙ্কো পরীক্ষা কী?

‘ব্রঙ্কো’ পরীক্ষায় প্রথমে ২০ মিটার দৌড়ে আবার স্টার্টিং পয়েন্টে ফিরে আসতে হয়। এর পর ৪০ মিটার দৌড়ে ফিরতে হয়। তার পর ৬০ মিটার দৌড়ে ফিরতে হয়। এই পুরো প্রক্রিয়া হল একটা সেট। এ ভাবে এক বারে পাঁচটা সেট করতে হয়। পাঁচটা সেট শেষ করার জন্য সময় দেওয়া হয় ৬ মিনিট। এই পরীক্ষায় এক জনকে মোট ১২০০ মিটার দৌড়তে হয়। পরীক্ষার মধ্যে বিশ্রামের সুযোগ থাকে না।

ব্রঙ্কো পরীক্ষা কেন লাভজনক?

প্রথমত, যে কোনও জায়গায় এবং যে কোনও সময় এই পরীক্ষা নেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সর্বত্র প্রচলন বাড়ছে ব্রঙ্কো পরীক্ষার। ইয়ো ইয়ো পরীক্ষা ছেড়ে বহু খেলাতেই এখন ব্রঙ্কো পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তৃতীয়ত, এই পরীক্ষায় ক্লান্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। তাই বেশি কার্যকর মনে হচ্ছে এই পরীক্ষাকে।

পরীক্ষায় পাশ করার মাপকাঠি কী?

কেউ ৬ মিনিটের মধ্যে সেট শেষ করলে ফিট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে দারুণ ফিট হিসাবে বিবেচিত হতে হলে ৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ড থেকে ৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে সেট শেষ করতে হয়।

রাগবিতে প্রচলিত ব্রঙ্কো পরীক্ষা

ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন হলেও রাগবিতে ব্রঙ্কো পরীক্ষা অত্যন্ত পরিচিত। খেলোয়াড়দের স্ট্যামিনা, স্পিড এবং কন্ডিশন বোঝার জন্য এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। পেশাদার রাগবি খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা এবং শক্তির শীর্ষে থাকতে হয়। বিশ্বের বহু রাগবি দলে সুযোগ পাওয়ার প্রাথমিক শর্তই হল ব্রঙ্কো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। ভারতীয় ক্রিকেটেও সেটাই করতে চাইছেন গম্ভীর।

ইয়ো ইয়ো পরীক্ষা

২০ মিটার দূরত্ব দৌড়ে যাতায়াত করতে হয়। প্রতি বার দৌড়ের সময় আগের বারের তুলনায় বেশি গতিতে দৌড়তে হয়। প্রতি ৪০ মিটার দৌড়ের পর ১০ সেকেন্ড বিশ্রামের সুযোগ থাকে।

২ কিলোমিটার দৌড়

ভারতীয় ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন ধরে ২ কিলোমিটারের দৌড়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) নির্ধারিত মান অনুযায়ী, জোরে বোলারদের ৮ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে দৌড় শেষ করতে হয়। বাকিদের ক্ষেত্রে এই সময় ৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড।

কেন কঠিন ব্রঙ্কো পরীক্ষা?

বেঙ্গালুরুতে বিসিসিআইয়ের উৎকর্ষ কেন্দ্রে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্রঙ্কো পরীক্ষা। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার ব্রঙ্কো পরীক্ষা দিয়েছেন। ইয়ো ইয়ো পরীক্ষা এবং দু’কিলোমিটার দৌড়ের পরীক্ষাও দিতে হয়েছে তাঁদের। ব্রঙ্কো পরীক্ষায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই গতিতে দৌড়তে হয় এবং বিশ্রামের সুযোগ না থাকায় বেশ কঠিন। পরীক্ষা শেষ করার সময় যেমন মাপা হয়, তেমনই দেখা হয় ক্লান্তির পরিমাণ। সব মিলিয়ে করা হয় মূল্যায়ন।

২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ খেলতে চান বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। ভারতীয় ক্রিকেটে ব্রঙ্কো পরীক্ষা শুরু হওয়ায় তাঁদের পথ কঠিন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি বলেছেন, ‘‘গম্ভীর দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্রঙ্কো পরীক্ষার কথা বলেনি। ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর হঠাৎ কেন মনে হল? অন্য কেউ পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারেন। এত কঠিন পরীক্ষা শুরুর নেপথ্যে অন্য কারণ থাকতে পারে। আমার মতে, ২০২৭ সালের বিশ্বকাপের দল থেকে কোহলিকে বাদ দেওয়া কঠিন হবে। তবে রোহিতকে পরিকল্পনায় রাখা হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটে যা যা হচ্ছে, সে দিকে নজর রাখছি। আমার বিশ্বাস, রোহিতের মতো ক্রিকেটারদের ছেঁটে ফেলতেই ব্রঙ্কো পরীক্ষা আনা হয়েছে। বিসিসিআই ওদের আর দলে রাখতে চাইছে না বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ব্রঙ্কো পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন ফিটনেস পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটা। এই পরীক্ষায় পাস করতে হলে রোহিতকে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। না হলে ফিটনেসের মাপকাঠিতেই ছেঁটে ফেলা হবে।’’

সমালোচনা করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। ভারতীয় দলের প্রাক্তন অলরাউন্ডারের বক্তব্য, “আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। ক্রিকেটারদের কাছে ধারাবাহিকতা চাওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতা তো ট্রেনিংয়েও দরকার। সেটা কেন হচ্ছে না? যখন নতুন ট্রেনার আসেন, তিনি আগের নিয়ম বদলে দেন। সেটা ঠিক নয়। যখন একটা ট্রেনিং পদ্ধতিতে সাফল্য আসছে তখন তা বদলানোর কী দরকার। তাতে কিছু পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু পুরোটা বদলে ফেলার কোনও মানে নেই।” তিনি আরও বলেছেন, “ট্রেনার পরিবর্তন হলে ট্রেনিংয়ের পদ্ধতিও বদলায়। যখন সেটা হয় তখন ক্রিকেটারদের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে একটা নির্দিষ্ট ট্রেনিং পদ্ধতিতে আপনি থাকেন। হঠাৎ তাতে বদল করা মুশকিল। এতে চোট পাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।”

ভারতীয় ক্রিকেটে ব্রঙ্কো পরীক্ষা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন খেলায় এবং বিভিন্ন দেশে ব্রঙ্কো পরীক্ষার দ্রুত প্রচলন হচ্ছে। ফলে বেশি দিন হয়তো গা বাঁচিয়ে থাকতে পারতেন না ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও। সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে হলে ফিটনেসের মানও সর্বোচ্চ রাখতে হবে এ বার থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.