এ যেন গোড়াতেই গলদ!
পার্কিং ফি নেওয়ার জন্য রয়েছে আলাদা দফতর। সেই দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন এক জন ইঞ্জিনিয়ার-সহ অফিসারেরা। কিন্তু পার্কিং ফি নেওয়ার জন্য হাওড়া পুরসভা আজ পর্যন্ত একটিও ‘পিওএস’ (পয়েন্ট অব সেল) যন্ত্র কেনেনি। তাই সেখানে কলকাতার মতো এই ব্যবস্থা চালুও হয়নি। শুধুমাত্র ছাপানো কুপন দিয়েই আদায় করা হয় পার্কিং ফি। অভিযোগ, এই ছাপানো কুপনই হয়ে উঠেছে বেআইনি ভাবে পার্কিং ফি আদায়ের অন্যতম হাতিয়ার। যে হাতিয়ার ব্যবহার করে জুলুমের রাজত্ব কায়েম হয়েছে হাওড়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণে। যে যেমন পারছে, পার্কিংয়ের দর বেঁধে দিয়ে টাকা তুলছে। বেআইনি পার্কিং বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ রাস্তাই সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। পথ দুর্ঘটনা আর যানজট হয়ে দাঁড়িয়েছে হাওড়ার নিত্যদিনের সমস্যা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া শহরে পুরসভা-স্বীকৃত পার্কিং লট রয়েছে ৪০টি। যার মধ্যে ২৭টি থেকেই পুরসভার কোনও আয় হয় না। কারণ, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত ওই ২৭টি জায়গার জন্য কোনও এজেন্সি দরপত্র জমা দিতে আগ্রহ দেখায়নি। ওই সমস্ত পার্কিং লট থেকে পুরসভা সরাসরি টাকা আদায় করে না, আদায় করে তাদেরই নির্বাচিত বিভিন্ন এজেন্সি। প্রতি বছর দরপত্র ডেকে এই কাজের বরাত দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর থেকে পুরনো এজেন্সিগুলি অজ্ঞাত কোনও কারণে ওই ২৭টি জায়গার বরাত নিতে চায়নি। যদিও অভিযোগ, দরপত্রে সাড়া না দিলেও বেনামে ওই সংস্থাগুলিই নিয়মিত পার্কিং ফি আদায় করছে। হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘গত বছরের জুন মাসে প্রশাসকমণ্ডলীর বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, যে সব এজেন্সির দু’বছরের টাকা বাকি আছে, তারা তা দিয়ে দিলে পার্কিং ফি আদায়ের চুক্তির নবীকরণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু মাত্র ১৩টি এজেন্সি টাকা মিটিয়ে চুক্তির নবীকরণ করিয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, বাকিরা না করেই বেআইনি ভাবে পার্কিং ফি নিচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জটিলতার মধ্যেই সব ক’টি এজেন্সির মাধ্যমে গত ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে যেখানে মাত্র ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা পার্কিং ফি বাবদ আয় হয়েছিল, ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে মাত্র ১৩টি এজেন্সির মাধ্যমেই সেই আয় গিয়ে পৌঁছেছে ৫৪ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকায়। প্রশ্ন হল, তা হলে বাকি ২৭টি জায়গায় নিজস্ব লোকবল ব্যবহার করলে আরও কত টাকা পুরসভার কোষাগারে ঢুকত?
হাওড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় যে ব্যাঙের ছাতার মতো অজস্র বেআইনি পার্কিং লট গজিয়ে উঠেছে এবং কুপন ছাপিয়ে সেখানে দু’-তিন গুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে, সে কথা মানছে পুরসভাও। এমনকি, সরকারি জায়গায় সারা মাসের জন্য গাড়ি রেখে মোটা টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ, মন্দিরতলা-নবান্ন এলাকায় সেতুর নীচের সরকারি জমিতে পার্কিং তৈরি করে গাড়ি-প্রতি মাসে দেড় থেকে তিন হাজার এবং পুরসভার শৈলেন মান্না স্টেডিয়ামের নীচে গাড়ি-প্রতি তিন হাজার টাকা করে পার্কিং ফি নিচ্ছেন এলাকার এক রাজনৈতিক ‘দাদা’। একই ভাবে টিকিয়াপাড়া স্টেশনের কাছে ট্রাক-পিছু দৈনিক ৫০০ টাকা এবং ছোট লরি-পিছু ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। হাওড়া স্টেশন চত্বর ও মাছবাজারের পার্কিংয়ে দৈনিক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পার্কিং ফি জুলুম করে আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
বেআইনি পার্কিং রুখতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা? হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পার্কিং নিয়ে নানা অভিযোগ আসায় আমরা পিওএস যন্ত্র কিনছি। পাশাপাশি, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে কোনও এজেন্সি নয়, পুরসভার কর্মীরাই পার্কিং ফি আদায় করবেন।’’