কয়লা পাচার মামলায় এখনও পর্যন্ত ৪১ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। তবে তাতে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের নাম নেই। বুধবার সকালে আসানসোল ও কলকাতায় একযোগে মলয়ের নানা বাড়িতে তল্লাশি শুরু হওয়ায়, কোন সূত্রে কয়লা-কাণ্ডে মলয়ের নাম জড়াল, সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়। সিবিআই সূত্রের দাবি, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই তল্লাশি।
মলয়ের অবশ্য দাবি, “বিজেপির কর্মী-সমর্থক ছাড়া, আসানসোলের কোনও বাসিন্দা যদি বলেন, আমার সঙ্গে কয়লার যোগ আছে, রাজনীতি ছেড়ে দেব।” তাঁর আরও দাবি, ইডি-র তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করেছেন।
২০২০ সালে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। অনুপ মাজি ওরফে লালা এই মামলায় মূল অভিযুক্ত। তিনি সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। লালার সঙ্গী বলে পরিচিত গুরুপদ মাজি-সহ চার জন গ্রেফতার হন। তিন জন জামিন পেলেও, গুরুপদ এখন তিহাড় জেলে বন্দি। লালা যে জেলার বাসিন্দা, সেই পুরুলিয়ায় দলের পর্যবেক্ষক পদে রয়েছেন আসানসোল উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক মলয়। সিবিআই সূত্রের দাবি, লালার কিছু নথি থেকেই তাঁর সঙ্গে মলয়ের যোগাযোগের সূত্র মিলেছে। এ ছাড়া, গুরুপদর সঙ্গেও মলয়ের যোগযোগ ছিল বলে তথ্য মিলেছে, দাবি ওই সূত্রের।
ইডি সূত্রের দাবি, কয়লা-কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মলয়কে এখনও পর্যন্ত সাত বার তলব করা হলেও, তিনি এক বার এসেছেন। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ফের তাঁকে ডাকা হয়েছে। তার আগে আচমকা সিবিআই তল্লাশি চালাল কেন? সিবিআইয়ের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, ইডি যদি মলয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে কোনও কারণে নিজেদের হেফাজতে নেয়, তখন তাদের পক্ষে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা কঠিন হবে।
সিবিআইয়ের এই তৎপরতা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “প্রতিহিংসার কারণে বিজেপির মদতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি আমাদের নেতাদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে।” কারও নাম না করে তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, ‘এজেন্সির’ হাত থেকে বাঁচতে খনি অঞ্চলের এক ‘প্রভাবশালী’ তৃণমূল নেতা বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। এমনকি, ওই নেতার বিধানসভা এলাকায় ‘কয়লা চোর’ লেখা পোস্টারও পড়েছিল তা-ও জানান। উজ্জ্বলের এ বিষয়ে প্রশ্ন, “তিনি বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন বলেই কি তাঁকে তদন্তের আওতায় আনবে না সিবিআই?” ওই নেতা অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই এ প্রসঙ্গে দাবি করেছেন, “কয়লা পাচারের সঙ্গে বিজেপির নয়, তৃণমূলেরই যে সম্পূর্ণ যোগ, তা রাজ্যের সবাই জানেন।”