গত কয়েক মাসে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটনায় চিনুক হেলিকপ্টারের উড়ান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকার সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে কপ্টার নির্মাতা সংস্থা বোয়িংয়ের কাছে নয়াদিল্লির তরফে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে। তবে এখনই ভারতীয় বায়ুসেনার ব্যবহৃত চিনুক কপ্টারগুলির উড়ান বন্ধ করা হচ্ছে না বলে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি, সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার ভারী পরিবহণ হেলিকপ্টার (পোশাকি নাম, ‘হেভি ডিউটি মাল্টি মিশন ট্রান্সপোর্ট হেলিকপ্টার’) চিনুক এইচ-৪৭-এর ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়েছে। ছোটখাটো আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের সামরিক বিভাগের প্রায় ৪০০টি চিনুকের উড়ান সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমেরিকা সেনার মুখপাত্র সিন্থিয়া স্মিথ সে কথা স্বীকার করে বলেছেন, প্রযুক্তি সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি সংশোধনের জন্য সাময়িক ভাবে চিনুকের উড়ান বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে বর্তমানে চিনুক কপ্টারের ১৫টি এইচ-৪৭এফ মডেল রয়েছে। ২০১৫ সালে ১৫টি চিনুক এবং ২২টি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার কিনতে বরাত দেওয়া হয়েছিল প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িংকে। খরচ পড়েছিল মোট ১৮,০০০ কোটি টাকা। বায়ুসেনা ব্যবহৃত সোভিয়েত জমানার এমআই-৩৬ ভারী পরিবহণ হেলিকপ্টারগুলির মেয়াদ শেষ হয়ে আসার কারণেই ‘পরিবর্ত’ হিসেবে চিনুক আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সেই চুক্তিমাফিক ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম চিনুক হেলিকপ্টারটি পায় ভারতীয় বায়ুসেনা। পরে ধাপে ধাপে বাকি ১৪টি কপ্টার এসে পৌঁছয়। বায়ুসেনা সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক কালে পূর্ব লাদাখের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) চিনা ফৌজের সঙ্গে সঙ্ঘাতের সময় সফল ভাবে দুর্গম সেনাঘাঁটিগুলিতে অস্ত্র এবং রসদ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে চিনুক কপ্টারগুলি। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকায় চিনুকের ত্রুটি ধরা পড়ায় চিন্তায় পড়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই কপ্টারগুলি সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারে। উড়তে পারে রাতেও। সেনা জওয়ানদের স্থানান্তরের পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাবারুদ নিয়ে যাওয়া, পরিকাঠামো নির্মাণের জিনিসপত্র বহনের মতো কাজ করতে পারে। এক লপ্তে অন্তত ৪৫ জন সেনা জওয়ান এবং ১১ টন বা ১১০ কুইন্টাল ওজন পেটের মধ্যে উড়ে যেতে পারে এই হেলিকপ্টারগুলি। এ ছাড়া নীচে ঝুলিয়ে আরও ১০০ কুইন্টাল ভারী জিনিস বহন করে উড়তে পারে চিনুক এইচ-৪৭।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত যে কোনও দুর্গম পরিবেশে স্বচ্ছন্দে পৌঁছে যেতে বা নামতে পারে। খুব সহজেই অভিমুখ বদল করতেও সমান দক্ষ। ফলে অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় সামরিক সামগ্রী, সেনা জওয়ানদের খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এর জুড়ি নেই। বস্তুত, দুর্গম এলাকায় সামরিক প্রয়োজনে যাতায়াত ও পরিবহণের জন্যই এই কপ্টারগুলি ব্যবহার করা হয়।