২০২৮ সালের অলিম্পিক্স খেলতে চান এখন ৩৮-এর জোকোভিচ! রাফা-রজার-মারের মধ্যে প্রতিপক্ষ হিসাবে কাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিলেন

অনেকেই বলছেন টেনিসজীবনের শেষ প্রান্তে নোভাক জোকোভিচ। কিন্তু ২২ বছর পেশাদার টেনিস খেলার পরও অবসরের কথা ভাবছেন না ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। জানিয়ে দিয়েছেন তিন বছর পরে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সেও খেলবেন তিনি।

ইউএস ওপেনে খেলতে নামার আগে জয় শেঠির পডকাস্টে নিজের টেনিসজীবনের নানা কথা বলেছেন জোকার। উঠে এসেছে তাঁর স্বপ্নের কথা। হতাশার কথা। টেনিসজীবনের উত্থান-পতনের কথা। ৩৮ বছর বয়সে এসে তাঁর লক্ষ্য ২০২৮ সালের অলিম্পিক্সের সোনার পদক। প্যারিসে জেতা সিঙ্গলসের সোনা ধরে রাখতে চান ৪১ বছর বয়সেও!

অস্ত্রোপচারহীন টেনিসজীবন চেয়েছিলেন

প্রথম থেকেই ফিটনেস সচেতন জোকোভিচ। টেনিসজীবনে কখনও অস্ত্রোপচার করাতে চাননি। প্রথম বার অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন সার্বিয়ার টেনিস তারকা। তিনি বলেছেন, ‘‘টেনিসজীবনের প্রথম দিকেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, কখনও অস্ত্রোপচার করাব না। কোনও কারণেই অস্ত্রোপচার করাব না। নিজেকে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি। অস্ত্রোপচারের পর কয়েক দিন ধরে কেঁদেছিলাম। কয়েক দিন ধরে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ভীষণ হতাশ লাগত সেই সময়। কোনও রকম অস্ত্রোপচার ছাড়া টেনিসজীবন কাটাতে চেয়েছিলাম। পারিনি।’’

২০১৮ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেই চোট নিয়ে জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘২০১৭ সালে কনুইয়ে চোট লেগেছিল। অস্ত্রোপচার করে সারাতে হয়েছিল। প্রায় দেড় বছর ধরে চোটটা নিয়ে ভুগছিলাম। আমি সাধারণত যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ খাই না। ওই ধরনের ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন এড়িয়া চলার চেষ্টা করি। আমার মনে হয়, এই ধরনের ওষুধগুলো সমস্যাটাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখে। কখনও কখনও আমাদের টানা পাঁচ-ছ’দিন টেনিস খেলতে হয়। কোনও বিকল্প থাকে না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে খেলা চালিয়ে যেতেই হবে। তাই টানা এক বছরেরও বেশি আমাকে ওষুধ খেয়ে খেলতে হয়েছে। ওষুধের পুরো ডোজ খাওয়ার পরেও যন্ত্রণা কমত না। ব্যথা হত। একটা সময়ের পর মনে হল চোট সম্পূর্ণ ঠিক করার জন্য অস্ত্রোপচার বা কিছু একটা করাতে হবে।’’

গত বছরও জোকোভিচকে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে হাঁটুর চোট সারানোর জন্য। ফরাসি ওপেনের একটি ম্যাচে পাঁচ সেটের লড়াই জেতার পর হাঁটুর যন্ত্রণা অসম্ভব বেড়ে গিয়েছিল জোকারের। তিনি বলেছেন, ‘‘৪ ঘণ্টার ম্যাচ ছিল প্রায়। হাঁটুতে একটু ব্যথা লাগল। অদ্ভুত ছিল সেটা। আগে কখনও হাঁটুতে চোট পাইনি। খেলা চালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু একটু পর থেকে দাঁড়াতেও কষ্ট হচ্ছিল। ব্যথা হচ্ছিল। তা-ও খেলেছিলাম। আমার ফিজিয়ো এবং চিকিৎসককে ডেকেছিলাম। তাঁরা আমার ব্যথার জায়গাটা পরীক্ষা করার সময়ও খুব লাগছিল। চিকিৎসক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কী চাইছ?’ বলেছিলাম, খেলতে চাই। শেষ চেষ্টা করে দেখতে চাই। ব্যথা কমানোর সবচেয়ে কড়া ওষুধ দিতে বলেছিলাম। আমি তখনও কোর্টে ছিলাম। গোটা স্টেডিয়াম আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। তাই চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম। তার পরও ৩০ মিনিটের বেশি খেলেছিলাম। প্রিকোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা জিতে খুব ভাল লেগেছিল।’’ হাঁটুর চোট নিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘এক দিন পর কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল। পরের দিন এমআরআই করাই। রিপোর্ট দেখেই বুঝে যাই, অস্ত্রোপচার করানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। আমাকে প্রতিযোগিতা থেকে নাম তুলে নিতে হয়েছিল। তখন উইম্বলডন শুরু হতে তিন সপ্তাহ মতো বাকি ছিল। আমার টিমের সঙ্গে সেটা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমার ফিজিয়ো বলেছিলেন, পুরো সুস্থ হতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। শুনে বলেছিলাম, আমি এমন কয়েক জন খেলোয়াড়ের কথা জানি, যারা আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েছে। এটা শুনে আমার চিকিৎসক বলেন, ঠিক আছে তুমি উইম্বলডন খেলবে। সেই মুহূর্তে ওঁর ওই কথাটাই আমাকে স্বস্তি দিয়েছিল।’’ জোকার বলেছেন, ‘‘উইম্বলডন আমার সবচেয়ে প্রিয় প্রতিযোগিতা। উইম্বলডন খেলা এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়। আমার টিমের প্রত্যেকে অসম্ভব পরিশ্রম করেছিলেন। আমাকে বলা হয়েছিল, দু’সপ্তাহ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মনে আছে, উইম্বলডন শুরুর ঠিক চার দিন আগে খেলার অনুমতি পাই। পুরো ফিট হয়ে খেলেছিলাম। ফাইনালে উঠেছিলাম। সেই ফাইনালটা হারলেও তার কয়েক দিন পর অলিম্পিক্সেও নেমেছিলাম। অলিম্পিক্স টেনিসে সোনা জিতেছিলাম।’’ উল্লেখ্য, অস্ত্রোপচারের পাঁচ সপ্তাহ পর উইম্বলডন ফাইনাল খেলেছিলেন জোকার।

৩৮-এও লক্ষ্য অলিম্পিক্স সোনা

পেশাদার টেনিসের সব খেতাব জেতা হয়ে গিয়েছে জোকোভিচের। তবু এখনও স্বপ্ন দেখেন। ৩৮ বছর বয়সে কী অনুপ্রাণিত করে তাঁকে? বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় অলিম্পিক্স সোনার কথা বলেছেন। জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সের কথা ভাবলে এখনও অনুপ্রাণিত হই। অলিম্পিক্সের সিঙ্গলস খেতাবটা আমাকে ধরে রাখতে হবে। জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই। গ্র্যান্ড স্ল্যামও খেলতে চাই। তবে গ্র্যান্ড স্ল্যামের চেয়েও বেশি খেলতে চাই দেশের হয়ে। টেনিসই আমার প্রথম ভালবাসা।’’ উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক্সে প্রথম বার সিঙ্গলসে সোনা জেতেন জোকার।

সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ কাকে মনে করেন

রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল, অ্যান্ডি মারের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেছেন জোকোভিচ। মানসিক ভাবে নিজেকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসাবে দাবি করেছেন তিনি। জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘মানসিক ভাবে আমিই সবচেয়ে শক্তিশালী। বাকিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে এ ব্যাপারে। মানসিক দিক থেকে আমাকে কেউ হারাতে পারবে না। কেউ না। আর শারীরিক দিক থেকে আমার সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হয়েছে নাদালকে। খুব শক্তিশালী খেলোয়াড়। সে জন্যই আমার সঙ্গে ওর লড়াই অন্য মাত্রা পেয়েছে। নাদালই আমার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।’’

টেনিসজীবনের সবচেয়ে সেরা এবং খারাপ মুহূর্ত

টেনিসজীবনের সবচেয়ে ভাল এবং খারাপ মুহূর্ত বেছে নিয়েছেন জোকোভিচ। প্যারিসে সোনা জয়ের মুহূর্তকে সেরা হিসাবে বেছে নিয়েছেন ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। তিনি বলেছেন, ‘‘মনে হয়, আমার অলিম্পিক্স সোনা জেতার শেষ সুযোগ প্যারিসেই ছিল। আমি সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। ওটাই আমার টেনিসজীবনের সেরা মুহূর্ত। প্রথম উইম্বলডন জয় বা দেশের হয়ে ডেভিস কাপ জয়ের থেকেও এগিয়ে রাখব অলিম্পিক্সের সোনা জয়কে।’’ উল্লেখ্য, নিজের পঞ্চম অলিম্পিক্সে সিঙ্গলসে সোনা জিতেছেন জোকার। সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত হিসাবে বেছে নিয়েছেন রিয়ো অলিম্পিক্সকে। তিনি বলেছেন, ‘‘জীবনের সেরা ফর্মে ছিলাম মনে হয়। চারটে গ্ল্যান্ড স্ল্যামই জেতা হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বের এক নম্বর ছিলাম। কোর্টে ভুল প্রায় করছিলামই না। অথচ খারাপ খেলে হেরে গিয়েছিলাম। ম্যাচটা হারার পর বিধ্বস্ত লাগছিল। বিশ্বাসই করতে পারিনি ওরকম ফর্মে থেকেও হেরে যাব।’’ ২০১৬ সালের রিয়ো অলিম্পিক্সে প্রথম রাউন্ডেই জোকার সরাসরি সেটে হেরে গিয়েছিলেন জুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোর কাছে। প্যারিসে সোনা জেতার আগে বেজিং এবং টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন জোকোভিচ।

কী করে জোকোভিচ হলেন

নিজের বেড়ে ওঠার কথা বলেছেন জোকোভিচ। টেনিস খেলোয়াড় হয়ে ওঠার কাহিনিও ভাগ করে নিয়েছেন। জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘কোর্টে নেমে যতটা লড়াই বা সাফল্য আপনারা দেখতে পান, আমার ভিতরে ততটাই লড়াই রয়েছে। ততটা সাফল্যও আছে। আমার এক জন ‘টেনিস মাদার’ ছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। নিজেকে জানা বা চেনার প্রশিক্ষণ পেয়েছি তাঁর কাছে। সপ্তাহে দু’দিন যেতাম ওঁর বাড়ি। দু’ঘণ্টা করে ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনতাম। নির্দিষ্ট সময় ছিল না। দিনের যে কোনও সময় শুনতাম। পরে রোজ শুনতাম। অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। ভাল লাগত। টেনিস মানে শুধু উইম্বলডন বা ফরাসি ওপেন জেতা নয়। টেনিস আরও বেশি কিছু। টেনিস আমাকে ভাল মানুষ তৈরি করেছে। আমার ‘টেনিস মাদার’ আমাকে সেই পথ দেখিয়েছিলেন।’’

এখনকার প্লেয়ারেরা কী ভাবে দীর্ঘ দিন খেলেন

এখনকার খেলোয়াড়েরা দীর্ঘ দিন খেলেন। ৩৮-৪০ বছর বয়সেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেন। গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার কথা ভাবেন। আগেকার খেলোয়াড়েরা এত বয়স পর্যন্ত খেলার কথা ভাবতেনই না। কী ভাবে এই পরিবর্তন? জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘এখন সকলে নিজের যত্ন নেয়। ভীষণ যত্ন করে নিজেকে। কেউ একা নয়। একটা বড় দল কাজ করে এক জন খেলোয়াড়ের জন্য। আগের মতো আর নেই। ভাবনা, পদ্ধতি বদলে গিয়েছে। জিমি কোনর্স ৪১ বছর বয়সেও গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলেছিলেন। তখন সেটা ছিল ব্যতিক্রম। এখন আমার মতো বয়সে সকলেই খেলছে। একটা পদ্ধতি আছে। সকলকে এই পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে। খাদ্যাভাস বদলাতে হয়। জীবনযাপন বদলাতে হয়। ব্যাপারটা কঠিন। প্রথম প্রথম বেশ অসুবিধা হয়। পদ্ধতিটা সম্পূর্ণ করতে ২১ দিন সময় লাগে। এটা যারা করতে পারছে, তারাই দীর্ঘ দিন খেলতে পারছে। এখন প্রায় সকলেই করছে। তাই খেলোয়াড়জীবনও দীর্ঘ হচ্ছে।’’

দুষ্কৃতীদের থেকে টাকা ধার নিতেন জোকোভিচের বাবা

বিশ্বের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড়ের ছোটবেলাটা এখনকার মতো ঝকঝকে ছিল না। অনিশ্চয়তায় ভরা ছিল। তার মধ্যেও ছেলেকে টেনিস শিখিয়েছেন তাঁর বাবা। জোকার বলেছেন, ‘‘আমার ছোটবেলাটা বেশ কঠিন ছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত সার্বিয়ায় আমার জন্ম। যুদ্ধ, দারিদ্র, অভাব দেখেছি ছোট থেকে। এগুলো আমাকে অন্যদের তুলনায় অনেক কম বয়সে পরিণত করে তুলেছিল। যে সময় আমার জন্ম, তাতে আমাকে কোনও না কোনও ভাবে সফল হতেই হত। আমাদের পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সফল হতেই হত আমায়। বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে খেলা শিখিয়েছেন। আমাকে আমেরিকায় পাঠানোর জন্য দুষ্কৃতীদের কাছ থেকেও টাকা ধার নিতে হয়েছে। ১৫ শতাংশ সুদে টাকা ধার নিতেন বাবা। সঙ্গে সঙ্গে টাকার দরকার হলে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ চাইত দুষ্কৃতীরা। এ জন্য আমার সঙ্গে বাবার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাবা চাইতেন আমাকে সব সময় জিততে হবে। যে করে হোক জিততে হবে। টাকা শোধ দেওয়ার জন্যই আমার জয়টা বাবার কাছে খুব প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু সব সময় কি জেতা যায়? আমিও পারতাম না। জেতার চাপটা মাঝে মাঝে অসহ্য লাগত। আমিও তো একটা মানুষ।’’

ঈশ্বর বিশ্বাস করেন জোকোভিচ

জোকোভিচ ঈশ্বর বিশ্বাস করেন। তাঁর মতে, সর্বশক্তিমান সহায় না হলে ভাল কিছু সম্ভব নয়। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক বলেছেন, ‘‘ভীষণ ভাবে ঈশ্বর বিশ্বাস করি। অদৃশ্য একটা শক্তি আছেই। এমন কিছু ম্যাচ জিতেছি, যেগুলো জেতা অসম্ভব ছিল। নিশ্চিত ভাবে আমার উপর অলৌকিক কিছু ভর করেছিল বলেই জিততে পেরেছি। যেমন সেই ঐতিহাসিক উইম্বলডন ফাইনাল। রজার ফেডেরারকে হারানো কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না। রেকর্ড দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ফেডেরার আমার থেকে অনেক এগিয়েছিল সব দিক থেকে। তা-ও জিতেছিলাম! বিশ্বাস করুন, জানি না কী ভাবে ওই ম্যাচ জিতেছিলাম। জানি না কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল। ঈশ্বর সঙ্গে না থাকলে খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।’’

খারাপ সময়ে কী করেন জোকোভিচ

সকলের মতো জোকোভিচও জীবনে অনেক বার কঠিন বা খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন। সেই সময় কাটিয়ে ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। জোকার বলেছেন, ‘‘খারাপ সময়ে প্রকৃতির কাছে চলে যাই। এক শিক্ষক বলেছিলেন, নেতিবাচক ভাবনা সকলের মধ্যে আসে। যাঁরা তিব্বতের মনেস্ট্রিতে (বৌদ্ধ ভিক্ষুক) ২৪ ঘণ্টা ধ্যান করেন বা কোনও খ্রিষ্টান সন্ন্যাসী গ্রিসের কোনও গির্জায় ২৪ ঘণ্টা ধ্যান করেন, তাঁদের মনেও নেতিবাচক ভাবনা আসে। বাকিদের সেই ভাবনা থেকে বেরতে অনেক সময় লাগে বা বেরতেই পারে না। সন্ন্যাসীদের নেতিবাচক ভাবনা থেকে বেরতে এক সেকেন্ড সময় লাগে। ওই শিক্ষক বলেছিলেন, নেতিবাচক ভাবনা এলে প্রকৃতির কাছে চলে যেতে। আমি তাই করি। সঙ্গে মোবাইল রাখি না। পাখির ডাক শুনি। সমুদ্রে যাই। উপভোগ করি প্রকৃতিকে। বেশি নেতিবাচক কিছু মনে হলে পাহাড়ে যাই। পাহাড়ের উপরে ওঠার সময় বুকের মধ্যে যে ধুকপুক হয়, তাতে প্রকৃতির কাছে নিজেকে বেশি করে সমর্পণ করা যায়। প্রকৃতিকে আরও বেশি করে অনুভব করা যায়। ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে ফিরে আসা যায়। প্রকৃতিই সব ঠিক করে দেয়।’’

টেনিসের পরের প্রজন্মকে নিয়ে আশাবাদী

এখনকার তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা দেখেন জোকোভিচ। তাঁর বক্তব্য, যত নতুন রেকর্ড তৈরি হবে, টেনিস তত এগোবে। জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘পিট সাম্প্রাসকে দেখে বড় হয়েছি। নাদাল আমার আগে খেলা শুরু করেছে। ওকেও দেখেছি। প্রথম প্রথম যখন একই কোর্ট, লকার রুম শেয়ার করতে শুরু করলাম, তখন অন্য একটা অনুভূতি হত। মনে হত, এরা আমার আদর্শ। এদের সঙ্গে একই জায়গায়। কিন্তু তার পরই ভাবতাম, এদেরই তো হারাতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও আমার একই রকম প্রত্যাশা। দারুণ সব খেলোয়াড় উঠে এসেছে। আমার সব শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ওদের জন্য উজাড় করে দিতে চাই। এটা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। না হলে টেনিস এগোবে কী করে? চাইব, আমার সব রেকর্ড ভেঙে যাক। তবেই তো টেনিস এগোবে। না, আমার একটুও দুঃখ হবে না রেকর্ডগুলো হাতছাড়া হলে। সব সময় চাই ওরা আমার কাছে আসুক। যা জানতে চায়, জিজ্ঞেস করুক। ওদের জন্য সব সময় আছি। ওদের সব কিছু শেখাতে চাই। আমার টেনিসজীবনের সবটা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। অনেক সময় হয়তো ওদের টিমের কোনও সদস্য আমার টিমের কারও কাছে কিছু জানতে আসে। কিন্তু আমি চাই, কারও মাধ্যমে নয়। ওরা নিজেরা আমার কাছে আসুক। ওদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে তৈরি আমি।’’

এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে লড়াই করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী জোকোভিচ। র‌্যাঙ্কিং নিয়ে ভাবেন না এখন। বেছে প্রতিযোগিতায় খেলতে চান। যত দিন টেনিস উপভোগ করবেন, তত দিন খেলা চালিয়ে যেতে চান ৩৮ বছরের ‘তরুণ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.