রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ভারতের বুকে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনা। অগনিত মানুষ স্বজনহারা। বহু মানুষ হারিয়েছেন অঙ্গ, কাউকে হয়তো বাকি জীবনটা কাটাতে হবে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। বালেশ্বরের সেই মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনস্থল ঘুরে দেখার পর হাসপাতালেও আহত যাত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর তিনি বলেন, “এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবে রেল। যাতে আগামী দিনে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।” তিনি ফের যোগ করেছেন, “এই দৃশ্য ভীষণ বেদনানায়ক। যারা আহত তাঁদের সুস্থ করার জন্য সরকার কোনওরকম ত্রুটি রাখবে না। যাদের আমরা হারিয়েছি তাদের তো ফেরাতে পারব না। সরকার তাঁদের দুঃখে শরিক হতে চাই। পরমাত্মা সবাইকে এই দুঃখ ভুলতে সাহায্য করবেন। আমরা এই দুর্ঘটনা থেকে শিখব, দ্রুত এই বেদনার সময় অতিক্রম করবে দেশ।”
শনিবার অর্থাৎ ৩ জুন বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বর পৌঁছন নরেন্দ্র মোদী। ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। শুক্রবার সন্ধেবেলা দুর্ঘটনার পর পরই ট্যুইট করে শোকপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।
গোটা ঘটনায় বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে রেলের ভূমিকা। সমন্বয়ের অভাব, মানুষের ভুল, নাকি কারিগরি সমস্যা, প্রধানমন্ত্রী সেসব নিয়ে মুখ খোলেননি। তিনি শুধু বলে গেলেন, “সরকারের জন্য এটা গুরুতর বিষয়। আমরা সবরকমভাবে তদন্ত করব। যেই দোষী হবে, সেই কঠোর শাস্তি পাবে। রেল নিজের সব শক্তি নিয়োজিত করেছে উদ্ধারকার্যে। আহতদের চিকিৎসাতেও কোনও ত্রুটি হবে না।”
রেলের তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছে ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হবে। ইতিমধ্যে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণও ঘোষণা করা হয়েছে রেলের তরফে। ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকা, গুরুতর আহতদের জন্য ২ লাখ টাকা এবং অল্প চোটআঘাত প্রাপ্তদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
শুক্রবার ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ১২৮৪১ চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস হাওড়ার শালিমার থেকে দুপুর বেলায় রওনা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে নাকি একটি মালগাড়িকে ধাক্কা মারে। মালগাড়ির সঙ্গে ট্রেনটির সংঘর্ষ এতটাই জোরালো ছিল যে করমণ্ডলের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপর চেপে যায়। এই তিনি ট্রেনের দুর্ঘটনায় ওড়িশার বালেশ্বর এখন মৃত্যুপুরী। রেল দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজ, আহতদের চিকিৎসা চলছে বিভিন্ন হাসপাতালে।
এদিকে দুর্ঘটনার পরই একাধিক হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। হাওড়ার হেল্পলাইন নম্বর – ০৩৩ ২৬৩৮২২১৭, খড়গপুরের হেল্পলাইন নম্বর – ৮৯৭২০৭৩৯২৫, ৯৩৩২৩৯২৩৩৯, বালেশ্বরের হেল্পলাইন নম্বর – ৮২৪৯৫৯১৫৫৯, ৭৯৭৮৪১৮৩২২, শালিমারের হেল্পলাইন নম্বর – ৯৯০৩৩৭০৭৪৬, চেন্নাইয়ের হেল্পলাইন নম্বর – ০৪৪ ২৫৩৩০৯৫২/০৪৪-২৫৩৩০৯৫৩/০৪৪-২৫৩৫৪৭৭১, ভদ্রক- ৮৪৫৫৮৮৯৯০০, কেওনঝড় রোড- ৮৪৫৫৮৮৯৯০৬, কটক- ৮৪৫৫৮৮৯৯১৭, ভুবনেশ্বর- ৮৪৫৫৮৮৯৯২২, খুরদা রোড- ৬৩৭০১০৮০৪৬।