ইডির তালিকায় থাকলেও কোর্টে পেশ করা পর্ষদের তথ্যে নেই, দুই প্রাথমিক শিক্ষক গেলেন কোথায়

ইডির তৈরি করা ‘সন্দেহভাজন’ বেআইনি শিক্ষকদের তালিকায় নাম আছে। কিন্তু নাম নেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তথ্য ভান্ডারে!

২০২০ সালে নিযুক্ত দু’জন শিক্ষক সম্পর্কে এমনই তথ্য পর্ষদ থেকে কোর্টে জমা পড়েছে বলে সূত্রের দাবি। ‘রজক’ এবং ‘শেখ’ পদবিধারী ওই দুই প্রাথমিক শিক্ষক তা হলে কোথায় গেলেন তা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। কোনও তথ্য না থাকায় এ ব্যাপারে দিশা দেখাতে পারেনি পর্ষদের সূত্রও। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশে সিবিআই এবং ইডি তাদের তৈরি করা তালিকা পর্ষদকে দিয়েছিল। তদন্তে নেমে যাঁদের নিয়োগ তদন্তকারীদের চোখে ‘অবৈধ’ ঠেকেছে, সেই তালিকায় তাঁদের নাম এবং বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছিল। সেই তথ্য যাচাই করে আদালতে হলফনামা দিয়েছে পর্ষদ। তবে ইতিমধ্যেই উত্তরপত্রে (ওএমআর শিট) কারসাজি করার অভিযোগ এবং যথাযথ ডিজিটাল প্রতিলিপি না থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে। সে ক্ষেত্রে খোদ বিচারপতি সিংহই প্রশ্ন তুলেছেন, কোন তথ্য দেখে তা হলে যাচাই করল পর্ষদ?

সূত্রের খবর, ইডির তালিকায় মোট ২২০৭ জনের নাম আছে। তার মধ্যে ১৮০৪ জন ২০১৬-১৭ সালে নিযুক্ত। ২৫০ জন ২০২০ সালে নিযুক্ত। এ ছাড়াও ৬৩ জনের নাম ইডি পর্ষদকে দিয়েছিল যাঁদের নাম ২০১৬-১৭ সালের নিয়োগে অতিরিক্ত প্যানেল থেকে নেওয়া হয়েছিল। পর্ষদের দাবি, ২০২০ সালের তালিকায় ওই দু’জন ছাড়া বাকি ২৪৮ জনের নিয়োগ ঠিকই আছে। তাঁদের নিয়োগ নিয়ে তদন্তে যে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে তাও উল্লেখ করেছে পর্ষদ। ১৮৯৪ জন এবং বাকি ৬৩ জন টেট পাশ করেছিলেন বলেও পর্ষদের দাবি। বরং ২২০৭ জনের নিয়োগ নিয়ে ইডি কী ভাবে সন্দেহ প্রকাশ করল তা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলেছে পর্ষদ। তবে অনেকেই বলছেন, ২ জনের তথ্য তো পর্ষদের ভাঁড়ারে নেই। কিন্তু হলফনামা দিতে গিয়ে তাঁদের নিয়োগকেও কার্যত বৈধ বলে দাবি করেছে তারা।

সূত্রের খবর, ইডির তালিকা নিয়ে প্রত্যুত্তর দিলেও সিবিআইয়ের দেওয়া তালিকায় এসে কিছুটা হোঁচট খেয়েছে পর্ষদ। সিবিআই তাদের তালিকায় টেট পাশ না করা ৯৬ জন এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ (ডিইএলএড) ডিগ্রি না থাকা ৪৬ জনের নাম দিয়েছিল। ৯৬ জনের মধ্যে ৪ জন এমন আছেন যাঁরা সরাসরি টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। পৃথক ভাবে ২৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে যাঁদের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল কিংবা কুন্তল ঘোষের দু’জন দালালের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ। পর্ষদ জানিয়েছে, ওই ৯৬ জনকে তাঁদের নথি যাচাইয়ের জন্য তলব করা হয়েছে। অন্য ৪৬ জনকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাকারী চাকরিপ্রার্থী সৌমেন নন্দীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য, ‘‘নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে বার বার বলা হয়েছে। এত দিন পুরোপুরি অস্বীকার করলেও এ বার অন্তত নথি যাচাইয়ে ডাকতে বাধ্য হয়েছে পর্ষদ। পুরো তদন্ত হলে আরও অনেক কিছুই বেরোতে পারে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.