মুখ্যমন্ত্ৰীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র সংবরণ করে পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের ১,০৪০ জন সশস্ত্র ক্যাডারের আত্মসমর্পণ

হিংসার পথ ছেড়ে মূলধারায় যারা ফিরে আসবে তাদের অবশ্যই দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে হবে। বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। আজ মঙ্গলবার অস্ত্র সংবরণ করে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছে ১,০৪০ জন সশস্ত্র জঙ্গি। কারবি উপজাতি জনগোষ্ঠীভিত্তিক পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডার ছিল তাঁরা। আজ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, কারবি আংলং স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য (সিইএম) তুলিরাম রংহাং, রাজ্যের মুখ্যসচিব জিষ্ণু বরুয়া, পুলিশ-প্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্ত প্রমুখের কাছে তারা অস্ত্র সংবরণ করেছে। 
স্থানীয় শংকরদেব কলাক্ষেত্রে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল অব কারবিলংরি (পিডিসিকে), কারবিলংরি এনসি হিলস্ লিবারেশন ফ্রন্ট (কেএলএনএলএফ), কুকি লিবারেশেন ফ্রন্ট (কেএলএফ) এবং ইউনাইটেড পিপলস্ লিবারেশন আর্মি (ইউপিএলএ) এবং কারবি পিপলস লিবারেশন টাইগার্স (কেপিএলটি)-এর সশস্ত্র সক্রিয় সদস্যকে নিকে স্বঘোষিত পিডিসিকে-প্রধান ইংতি কাথার সংবিজিৎ অস্ত্রসংবরণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। তারা বিভিন্ন সিরিজের ৩৩৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সহ ১১,২০৩টি কার্তুজ জমা করেছে। 
এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল কারবি জঙ্গি সংগঠনের এই সব ক্যাডারদের সমাজের মূলধারায় ফিরে আসায় স্বাগত জানিয়েছেন। দেশের সংবিধানের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে অস্ত্র সংবরণ করার সিদ্ধান্তে তাদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, কারবি আংলং রাজ্যের অন্যতম সুন্দর জেলা। আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের আত্মনির্ভর অসমকে আত্মনির্ভর কারবি পার্বত্য অঞ্চলে পরিণত করতে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, কারবি যুবকদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কারবি আংলঙের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের একটি অন্যতম উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্ৰী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রতিটি কোণে সমউন্নয়নের প্রয়াস জারি রেখেছেন। সেজন্য অসমও দ্রুত সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি আরও যোগ করে বলেন, সরকারের ভূমিকা কেবলমাত্র জঙ্গিদের ফিরিয়ে আনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যারা অস্ত্রশস্ত্ৰ সহ আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে সম্মানজনক জীবনধারনের সুযোগ নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 
কারবি পাহাড়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সিইএম তুলিরাম রংহাঙের নেতৃত্বাধীন কারবি আংলং স্বশাসিত পরিষদেরও প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই অঞ্চলে শান্তি আনার ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অসম পুলিশ, ভারতীয় সেনা, আধাসামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত ইউনিফাইড কমান্ডো কাঠামোর প্রশংসা করেছেন তিনি। সনোয়াল করবি সাহিত্য সভার প্রতিনিধি এবং কারবি সাংস্কৃতিক সমিতির সদস্যদের পাশাপশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি রংবং তেরনকেও ধন্যবাদ জানান। 
অনুষ্ঠানে রাজ্যের অতিরিক্ত ডিজিপি (বিশেষ শাখা) হীরেন নাথ স্বাগত বক্তব্য পেশ করেছেন। বক্তব্য পেশ করেছেন কারবি আংলং স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য তুলিরাম রাংহাং, মুখ্যসচিব জিষ্ণু বরুয়া, ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা হৃষীকেশ গোস্বামী, ডিফুর সাংসদ হরেনসিং বে, মুখ্যমন্ত্রীর অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পবন কুমার বরঠাকুর, গৃহ ও রাজনৈতিক বিভাগের প্রধানসচিব নীরজ ভার্মা, অতিরিক্ত ডিজিপি (আইন-শৃঙ্খলা) জিপি সিং, ভারতীয় সেনাবাহিনীর জিওসি ২১ (পার্বত্য বিভাগ) মেজর জেনারেল এসপি সিং, এসআইবি-র যুগ্ম অধিকর্তা রশ্মি সিনহা সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়াও অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি পদ্মশ্রী রংবং তেরন, বেশ কয়েকজন গ্রামপ্রধান সহ কারবি আংলং জেলার অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নাগরিকগণও উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.