দুই দিনের জন্য হলদিয়া সফরে এলেন ‘মিঠে জল মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট'(সিফা’র) বিজ্ঞানী গবেষক দল। হলদিয়ার মাছ চাষের ক্ষেত্রগুলি পর্যবেক্ষণ করতে এদিন ভুবনেশ্বরের অবস্থিত মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী সহ গবেষকদল এখানে এসে উপস্থিত হন। তাঁদেরকে স্বাগত জানান, হলদিয়ার বিডিও তুলিকা দত্ত ব্যানার্জি, সভাপতি সুব্রত কুমার হাজরা, সহ সভাপতি সেখ সাইফুল, কর্মাধ্যক্ষ গোকুল মাঝি, এবং হলদিয়ার মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু।
জানা গিয়েছে, পূর্বমেদিনীপুর জেলার হলদিয়ায় মাছ চাষের অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ড হয়ে চলেছে কয়েক বছর ধরে। মাছ চাষের ক্ষেত্রে অভিনব প্রযুক্তি অবলম্বন করা হচ্ছে হলদিয়ায়। বিশেষত, হারিয়ে যাওয়া দেশিয় মাছগুলি যেমন, মাগুর, শিঙ্গি , কই, পাবদা প্রভৃতি মাছের সফল বানিজ্যিক চাষ হচ্ছে এখানে। শুধু তাই নয়, হলদিয়ার মাছ চাষিরা রাজ্যে প্রথম বেশ কয়েকটি মাছের সফল চাষ করে নজর কেড়েছে সবার। আমুর কার্প, পেংবা, জয়ন্তী রুই, গিফট তেলাপিয়া প্রভৃতি মাছের চাষ হচ্ছে হলদিয়ায়। তাছাড়াও “ফ্যামিলি ফার্মিং ফার্ম স্কুল” এর মাধ্যমে অভিনব প্রশিক্ষন পদ্ধতি এশিয়া মহাদেশে প্রথম হলদিয়া ব্লকে অনুষ্ঠিত হয়। যার ফল স্বরুপ, মাছ চাষিরা জৈব পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকর মাছের উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। জৈব-জুস, হলুদ, লবন, চুন , গোবর প্রভৃতি জৈব উপাদানে লাভজনক মাছ চাষের পথ দেখাচ্ছে হলদিয়া।
২৫শে নভেম্বর সোমবার ‘সিফা’-র প্রধান বিজ্ঞানী হিমাংশু কুমার দে, বিজ্ঞানী সুভাষ সরকার সহ দুজন গবেষক এসেছেন।তাঁদেরকে হলদিয়ার মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু হলদিয়ার মাছের খামার গুলি ঘুরিয়ে দেখান।
বিজ্ঞানীদের দল দ্বারিবেড়িয়া গ্রামের নারায়ন বর্মনের ফিশ-ফার্মেও যান। সেখানে মাছ চাষিদের চাষের অভিজ্ঞতা সহ মত বিনিময় করছেন তাঁরা। এরপর তপন বর্মন, পঞ্চানন মন্ত্রী, মৃন্ময় সামন্ত, সুদীপ বিকাশ খাটুয়া, সফি আহমেদ এবং আরতী বর্মন সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল মাছ চাষিদের মাছের খামার গুলি পরিদর্শন করেন গবেষকদের ওই বিশেষ দলটি। হলদিয়ায় যে ছয় জন মাছ চাষি রাজ্য ও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তাদের মাছের খামারগুলিও পরিদর্শন করেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, মিঠেজল মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আধুনিক মাছ চাষে জলজ ব্যবস্থার জীবনচক্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে টেকসই জলজ চাষ অর্থাৎ মাছ চাষের অনুশীলনগুলির বিকাশ এর এক উল্লেখযোগ্য গবেষনার কাজ করছেন। হলদিয়ার এই অভূতপূর্ব কর্মকান্ড এর খবরে দুই দিনের সফরে ছুটে এসেছেন সিফার বিজ্ঞানীরা।
এদিকে সরাসরি বিজ্ঞানিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ে করতে পেরে হলদিয়ার মাছ চাষিরাও অত্যন্তি খুশি। জানা গিয়েছে,বিশ্ব-উষ্ণায়ন ঋতু পরিবর্তনের এই সময় জলাশয়ের সদ্বাব্যাবহার করে পরিবেশ বান্ধব জৈব উপায়ে বৈচিত্রময় মাছের চাষ এর প্রতি হলদিয়ার মাছ চাষিদের এই আগ্রহ এক ইতি বাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছে। যা মাছচাষের ক্ষেত্রে হলদিয়া এক অনন্য পথ দেখাবে বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞরা । শুধু তাই নয়, রঙিন মাছ, মিষ্টি জলের মাছ সহ বিভিন্ন ধরনের নোনা জলের মাছের বৈচিত্রময় এই চাষ দেখে অভিভূত হয়েছেন তাঁরা।