সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষাপটে

৫০ ও ৬০-এর দশকে বিশেষত ৬০-এর দশকে এ রাজ্যের বামপন্থীরা একটি স্লোগানকে প্রায় ‘মিথ’-এ পরিণত করেছিল। স্লোগানটা ছিল : পুলিশ তুমি যতই মারো মাইনে তোমার একশো বারো।

এই স্লোগান শোনা যেত লাল ঝান্ডাধারীদের মিছিলে। লেখা হতো কলকাতার দেওয়ালে দেওয়ালে। ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ মালিকানাধীন কলকাতা ট্রাম কোম্পানি ট্রামভাড়া ১ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে গোটা কলকাতা জুড়ে ট্রামের বহূৎসব ও প্রতিরোধ আন্দোলনের নামে কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে হিংসাত্মক আন্দোলনের সূচনা ঘটে তার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ১৯৫৮-৫৯ সালের খাদ্য আন্দোলনে যার রেশ চলেছিল ৬০-এর দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত। তৎকালীন শাসকদল কংগ্রেস এই আন্দোলন দমনে কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা নিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই স্লোগান। লাল ঝান্ডাধারীদের চোখে ‘আধাসামন্ততান্ত্রিক’ ‘আধা-বুর্জোয়া রাষ্ট্রের অঙ্গ এই পুলিশও ‘খেটে খাওয়া মানুষেরশত্রু— শ্রেণীশত্রু। সুতরাং তাদের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেওয়া ছিল বামপন্থীদের এক সুচতুর রাজনৈতিক কৌশল। কারণ স্বাধীনতা এবং দেশভাগ পরবর্তী সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজে সরকারকে ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হচ্ছিল পুলিশবাহিনীর উপর। ফলে সেই পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে পারলে রাষ্ট্রকাঠামোটিকে অতি সহজে দুর্বল করে দেওয়া সম্ভব। আবার এই ধরনের স্লোগান আজ একটি দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিবাহিনীর মনোবলের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসাবে দেখা যেতে পারে। তথাকথিত বুর্জোয়া রাষ্ট্রকাঠামোর পুলিশও ভালো নেই এই ভাবনাটিকে পুলিশবাহিনীর মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা ছিল এই ধরনের স্লোগানে। ৬০-এর দশকের শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকরা ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হয়তো এখানে বলার চেষ্টা হয়েছিল সে পুলিশ সরকারের হয়ে কাজ করছে বটে, তবে আসলে সে সরকারের হাতের যন্ত্র মাত্র। যন্ত্রী হওয়ার কোনো ক্ষমতা কিংবা সম্ভাবনা তার নেই। কার্ল মার্কসের বিচ্ছিন্নতা’ তত্ত্বকে বাঙ্গলার রাজনীতির প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করার এ এক অক্ষম প্রচেষ্টা। তবে ইতিহাস তো এক অদ্ভুত প্রক্রিয়া। ইতিহাসের গতিতে এমন ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে মনে হয় গল্প উপন্যাসও যেন হার মেনে গেল। ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন কলকাতাট্রাম কোম্পানি এক পয়সা ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলে সে ব্যাপক প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন বামপন্থীরা। ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে যে Tram and Bus Fare Enhancement Risistance Committee coft post হয়েছিল তার সভাপতি ছিলেন ফরেয়ার্ড ব্লক নেতা হেমন্ত কুমার বসু। এই কমিটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এস.ইউ.সি. নেতা সুবোধ ব্যানার্জি, প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা সুরেশ ব্যানার্জি, মার্কসবাদী ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা সত্যপ্রিয় ব্যানার্জি এবং সিপিআই নেতা জ্যোতি বসু (তখন কমিউনিস্ট পার্টি একটাই ছিল)। ট্রামভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে এঁদের সমবেত কণ্ঠ এ রাজ্যের আকাশ বাতাস মুখরিত করেছিল। তাদের ভাষায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি বর্বরতা কোনো সভ্য সমাজে দেখা যায়নি। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ সংবাদপত্র তাদের সুরে সুর মিলিয়েছিল। এর ৩৭ বছর পরে ১৯৯০ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতার এসপ্ল্যানেড অঞ্চলে বাসভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এসইউসি দলের কর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে মাধাই হালদার নামে এস ইউ সি কর্মী নিহত হন। যদিও দেশের ‘বুর্জোয়া’ কাঠামোর কোনো বদল হয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা কাঠামোটির বদল ঘটেছে ততদিনে। পরপর তিনটি বিধানসভার নির্বাচনে জিতে সিপিআই(এম) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট তখন রাজ্যে বিপুল প্রভাব বিস্তার করে রাজত্ব করছে। বাস বাট্রাম ভাড়া বৃদ্ধি তখন কোনো জনবিরোধী পদক্ষেপ নয়। বরং পুলিশের গুলিতে এসএউসি কর্মীরা হতাহত হলে এক সময়ের আগুনখোর বিপ্লবী নেতা জ্যোতি বসু নিরাসক্তভাবে বলতে পারেন— ‘ওরা পুলিশের দিকে ইট ছুঁড়লে পুলিশ কী রসগোল্লা ছুঁড়বে? অর্থাৎ পুলিশ তখন নয়া-বিপ্লবী শক্তির সহযোগী। তার গুলি চালনাও তাই যথার্থ। ১৯৭৭ থেকে ২০১১ এই ৩৪ বছর বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ নীতি বার বার সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিরোধী দলগুলো পুলিশের বাড়াবাড়ি র অজস্র অভিযোগ তুলেছে। ১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের ডাকে মহাকরণ অভিযানে বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালানোয় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী নিহত হন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই। ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারের দিনহাটায় আইন অমান্য আন্দোলন করার সময় ৪ জন ফরোয়ার্ড ব্লক কর্মী পুলিশের গুলিতে মারা যান। দুই বাম শাসকদল এর পিছনে কোনো দক্ষিণপন্থী বুর্জোয়া শক্তির কালো হাত খুঁজে পায়নি বলে তেমন সমালোচনা কিংবা পালটা আন্দোলন গড়ে তোলা যায়নি। বাঙ্গলার রাজনীতিতে সামান্য বুদবুদ উঠলেও তেমন উথাল পাথাল হয়নি। কোনো খেলোয়াড়ই সেমসাইড গোল করে বসলে ভুলে যেতে চায়। এছাড়া পরিস্থিতি অনেক বদলেছিল। পুলিশের মাইনেও আর একশো বারো টাকায় আটকে ছিল না। অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদেরও মাইনে বেড়েছে স্বাভাবিক নিয়মে। তবে বিতর্ক থামেনি। কারণ পুলিশি ব্যবস্থা পরিচালনার সঙ্গে প্রশাসন পরিচালনার কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত থাকে। সে কারণে ২০১১ সালে এ রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও পুলিশ এবং পুলিশ ব্যবস্থা পরিচালনা নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। বরং তা চলছে সমান তালে।

১৯৭৭ সালের পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাম সরকারের আমলে পুলিশ ব্যবস্থা পরিচালনা নিয়ে প্রধান অভিযোগ ছিল রাজনীতিকরণের। শাসকদল যদি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে আরক্ষাবাহিনীকে ব্যবহার করতে থাকে তবে সমাজে এই বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, সন্দেহ দেখা দেবে। কারণ পুলিশের কাজ দলমত নির্বিশেষে মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। সমাজের একটা অংশ যদি মনে করে তারা শাসকদলের কেউ নয়। সুতরাং তারা ন্যায়বিচার পাবেনা, তাহলে কেবল পুলিশ নয় প্রশাসনের অন্যান্য অংশের উপরও আস্থাহীনতা তৈরি হয়। রাজনীতির পক্ষে এটা ভালো লক্ষণ নয়। যে কোনো প্রশাসনের দুটো অংশ থাকে, একটি হলো রাজনৈতিক প্রশাসন এবং অপরটি হলো স্থায়ী প্রশাসন। সে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ব্যক্তিরাই প্রশাসনের শীর্ষে অবস্থান করেন। প্রশাসন পরিচালনার মূল নীতিগুলো তারাই ঠিক করে দেন। সেই অনুযায়ী কাজ করে স্থায়ী প্রশাসন। রাজনৈতিক প্রশাসক নির্বাচিত হতে না পারলে চলে যান। কিন্তু স্থায়ী প্রশাসকরা তাঁদের কর্মজীবনের শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে কাজ করেন। ফলে স্থায়ী প্রশাসনের দক্ষতা, মনোবল কিংবা নিরপেক্ষতা নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে তবে সমাজের উপর তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে। পুলিশ প্রশাসন এই সাধারণ প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের উপর ন্যস্ত। ১৯৫৩-৫৪ সালে ট্রামভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে যে হিংসাত্মক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, ১৯৫৮-৫৯ সালের খাদ্য আন্দোলন কিংবা ১৯৬৬ সালের খাদ্য আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল সেই প্রেক্ষাপটে সামাজিকশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশকেই নিতে হয়েছিল। ১৯৬৭-৬৮ থেকে ১৯৭৩-৭৪ পর্যন্ত সময়কালে উগ্র-বাম রাজনীতি গোটা পশ্চিমবঙ্গে যে ভয়ংকর সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল তার হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করতে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়েছিল। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন কিংবা বিতর্ক থাকলেও তাদের প্রতি সমর্থনও কম ছিল না। কারণ সমাজে বিপ্লবের নামে যারা সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছিল তারাও সাধুপুরুষ ছিল না। তাদের প্রতি সমাজের একটা বড়ো অংশের কোনো সজাগ সহানুভূতি ছিল না। এখনো নেই।

১৯৭৭-২০১১ সময়কালে বাম সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল পুলিশের রাজনীতিকরণ। ২০১১ সালের পর এ রাজ্যের একটি বড়ো অংশের মানুষের আশা ছিল রাজ্য সরকারের পুলিশ নীতিতে বদল আসবে। পুলিশ বাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে এ রাজ্যে সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করে। কিন্তু একের পর এক এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। যাতে পুলিশি ব্যবস্থর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা আরও বাড়ছে। মিডিয়ার দৌলতে সব ঘটনাই এখন কোটি কোটি মানুষ দেখে ফেলছে। ২০১৪ সালে আলিপুরে শাসকদলের সমর্থকের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশকে টেবিলের তলায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। ২০১৭ সালে বীরভূমে শাসকদলের ‘ডাকসাইটে’ নেতার প্রকাশ্যে পুলিশকে হুমকি কিংবা মানুষকে পুলিশের দিকে বোমা ছুঁড়তে বলা এ রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহেরই সর্বশেষ সংযোজন গত ২৮ এপ্রিল হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় লকডাউনের সরকারি নির্দেশ কার্যকরী করতে গিয়ে প্রায় ২০০ জনের এক উন্নত্ত জনতা কর্তৃক পুলিশের ওপর আক্রমণ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর প্রভৃতি। মিডিয়ার দৌলতে সেই দৃশ্যও এখন এ রাজ্যে মুখোরোচক আলোচনার বিষয়।

লকডাউন কার্যকরী করতে গিয়ে অনেক রাজ্যে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে, পঞ্জাবের পাতিয়ালায় পুলিশের ওপর ভয়ংকর আক্রমণ হয়েছে, উত্তর প্রদেশেও পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। পুলিশ পালটা ব্যবস্থাও নিয়েছে। অনেক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টিকিয়াপড়াতেও অনেক দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তবু পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসন ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে এতো আলোচনা কেন? কারণ অনেকদিন ধরেই, প্রায় বিগত পাঁচ দশক ধরে পুলিশ প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক প্রশাসকদের প্রভাব এবং তার মাত্রা ও চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ সম্পর্কে পুলিশের মনোবল আবার শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানো সম্ভব হবে তো? দুষ্কৃতীদের দ্বারা পুলিশের ওপর আক্রমণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। এ ঘটনা ঘটে। হয়তো ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ হলো পুলিশ এক্ষেত্রে পালটা ব্যবস্থা নেয় কী না কিংবা পুলিশকে পালটা ব্যবস্থা নিতে দেওয়া হয় কী না। টিকিয়াপাড়ার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা পার পেয়ে যান। আর রাজনৈতিক বিরোধী হলে তার উপর খঙ্গ নেমে আসে। শুধু পুলিশ প্রশাসন নয়, সাধারণ প্রশাসনের সমস্ত অঙ্গগুলিকেই তৈরি করা প্রয়োজন তাদের সামজিক ভূমিকার কথা মাথায় রেখে। বহুদিন এদিকে নজর দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে এই বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করতে হবে পশ্চিমবঙ্গের সমাজ ও রাজনীতির স্বার্থে।

বিমলশঙ্কর নন্দ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.