নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ভুলের প্রায়শ্চিত্য

কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাজনকে স্বীকার করে যে ঐতিহাসিক ভুল করেছিল তার পরিণামে নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে বসবাসরত কয়েক কোটি হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানদের স্বার্থ রক্ষায়, তাদের সম্মানে নাগরিকত্বের দীর্ঘদিনের দাবি বিজেপি সরকার পূরণ করেছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পরে, ভারত এখন আইনত এই তিনটি দেশ থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে আসা সংখ্যালঘুদের স্থায়ী বাসস্থান হবে। সরকারের এই পদক্ষেপ কোনও বিশেষ ধর্মের বিরোধিতা করার পদক্ষেপ হিসেবে না দেখে মূল ভারতীয় সমাজকে তার শিকড়ে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত।
এই পুরো বিষয়টিকে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হিসেবে দেখার প্রয়োজনীয়তা আছে। ভারতের স্বাধীনতার জন্য দেশপ্রেমিকরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজন হয় এবং পাকিস্তান নামে একটি নতুন দেশ গঠিত হয়। ধর্মের ভিত্তিতে এই বঙ্গপ্রদেশের একটি অংশও পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়, যা অবশেষে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশকরে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বহু লোক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। তারা বিভাজনের পরে সেখানেই রয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গপ্রদেশের এমনই এক মহান দেশপ্রেমিক ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ চ্যাটার্জি। জন্মস্থানে থেকে যাওয়া কি তার দোষ হিসেবে দেখা উচিত?
যে সমস্ত দেশভক্ত মাতৃস্বরূপা ভারতের সম্মানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পিছপা হননি, তাদের মতন অসংখ্য মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব আজকের রাষ্ট্রভক্ত সমাজের ওপর। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বসবাসকারী সকল হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর মানুষকে সমন্বিত করার জন্য কাজ করেছে।
যে দলগুলি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে ভোটের রাজনীতি করে আসছে। এই বিরোধিতার মূল ভিত্তি হলো তাদের রাজনৈতিক সুবিধা। সকলেই সবর্সম্মতিক্রমে সরকারকে সংসদে ও বাইরে মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার অস্বীকার করার অভিযোগ এনেছে, যদিও এই বিলের মূল প্রস্তাবটিতে স্পষ্ট যে এই আইনের উদ্দেশ্য তিনটি দেশ অর্থাৎ পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশে ধর্মের ভিত্তিতে নির্যাতিত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানদের ভারতের সম্মানজনক নাগরিকত্ব প্রাপ্তিতে সহায়তা করা। এটি পুরোপুরি ভাবে স্পষ্ট যে নাগরিক সংশোধনী আইন ভারতীয় মুসলমানদের বর্তমান পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন করে না। এই আইনটি কোনওভাবেই তাদের নাগরিকত্বের ক্ষতি করবে না। যাইহোক, যে কোনও দেশের যে কোনও ব্যক্তি আইন অনুযায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই বিধানটি ইতিমধ্যে দেশের আইনে উপস্থিত থাকলেও কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দলে নাগরিকত্ব আইনের নামে দেশের মুসলমানদের মধ্যে ভয় ও সংশয় সৃষ্টি করছে, তাদের পূর্ববর্তী অভ্যাসবশত।
যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার প্রথমবারের মতো ওই দেশগুলির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য এ জাতীয় কাজ করেছে এমন নয়, এর আগে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের দাবিতে ১৩,০০০ শিখ ও হিন্দুকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও ২০০৩ সালে বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসা হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানকে সমর্থন করেছিলেন।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ১৯৪৭ সালের পর থেকে আজও পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানরা ভয়াবহ অত্যাচারের শিকার হয়ে চলেছে। বিশেষত নারীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণ, ধর্ষণ, জোর করে ধর্ম পরিবর্তনের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে ও এখনও প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। সুতরাং এত বছর ধরে নিপীড়িত হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া, তাদের সম্মান ও কর্তৃত্বের সঙ্গে জীবনযাপন করতে দেওয়া ভারতের প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য হওয়া উচিত।
প্রতিবেশী দেশগুলিতে সংখ্যালঘুদের বর্তমান অবস্থা কী তা সকলেই জানেন। শুধু পাকিস্তানের পরিসংখ্যানেই দেখা যায় যে, সেখানে কীভাবে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার সময় সেখানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল ২৩ শতাংশেরও বেশি, আজ তাদের সংখ্যা আড়াই শতাংশেরও কম। স্বাধীনতার পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের লিয়াকত আলি খানের মধ্যে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত এই চুক্তিকে যথাযোগ্য সম্মান জানিয়েছিল, তবে পাকিস্তান যা করেছে বা আজও করে চলেছে তা সেখানকার পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪ নং এর উদ্ধৃতি দিয়ে বিরোধী দলগুলি সরকারের জনগণের প্রতি ধর্মনিরপেক্ষতার অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে। এই দলগুলি আরও বলেছে যে নির্বাচনী রাজনীতির কথা মাথায় রেখে বিজেপি সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা এবং তিন। তালাক বাতিল করার সময়ও একই অভিযোগ করা হয়েছিল, তবে এই দলগুলির ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে বিজেপি সর্বদা এগুলির বিরোধিতা করে এসেছে এবং আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে এটি কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ভুল এবং যা সংশোধন করা প্রয়োজন।
শিব প্রকাশ
(লেখক বিজেপির মহাসচিব যুগ্ন সংগঠন)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.