পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী এক শ্রমিক। কোনওক্রমে দিন চলে। উঠে বসার ক্ষমতা নেই। চিকিত্সা করানোর মতো সামর্থ্য় নেই। তৃণমূল নেতার দুর্নীতির হাত থেকে নিস্তার পেলেন না এমন হতদরিদ্র শ্রমিকও। অভিযোগ, কাটমানি না দিলে সরকারি আবাস যোজনার টাকাও মিলবে না বলে হুমকি দেন তৃণমূল নেতা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি হরিশচন্দ্রপুরের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিলডাঙি গ্রামের।
জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা রামহরি দাস দিনমজুরের কাজ করতেন। কিন্তু, প্রায় একবছর ধরে তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। শয্যাশায়ী। নিজে থেকে হাত-পা নড়াচড়া করতে পারেন না। স্ত্রী রুমা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সামান্য কিছু রোজগার করেন। তা দিয়ে কন্যাসন্তান-সহ তিনজনের পেট চলে না। সম্প্রতি, তাঁরা আবাস যোজনা প্রকল্পের তালিকায় নাম ওঠার পর প্রকল্পের টাকা নিতে পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই টাকা কিস্তিতে পেতেও শুরু করেন।
আচমকাই তারপর টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে রামদাসের স্ত্রী জানতে পারেন মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেত্রীর স্বামী পঙ্কজ দাস দুই মাসের কিস্তির ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগ, পঙ্কজ এসে টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু, রামদাসের পরিবার তা দিতে অস্বীকার করেন। এরপরেই আর টাকা পাননি ওই শ্রমিক পরিবার।
রামদাসের স্ত্রী রুমা দেবীর কথায়, “প্রথমে বেশ কয়েকমাস টাকা পেয়েছি। তারপর পঞ্চায়েত থেকে বলল আমায় কিছু টাকা দিতে হবে, তবেই আমি টাকা পাব। প্রথমে প্রায় ৫ হাজার টাকা চেয়েছিলেন পঙ্কজবাবু। আমি টাকা দিতে চাইনি। তারপর থেকেই টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। দুটো কিস্তি ধরে মোট ১৫ হাজার টাকা ওঁরা নিয়ে নেন। পরে জানানো হয়, কাটমানি না দিলে আবাস যোজনার টাকা পাব না।”
এরপরেই অবশ্য ব্লক আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রুমাদেবী। অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। মহেন্দ্রপুরের ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পরেই গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, টাকা হাতানোর এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে সুর চড়াতে কসুর করেনি বিজেপি। স্থানীয় বিজেপি নেতার কথায়, ” তৃণমূল সরকার চলছেই কাটমানি আর সিন্ডিকেটের রাজত্বে। এখন, ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে সামনাসামনি এই কাটমানিরাজ চালাচ্ছে।”
অন্যদিকে, এই ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। ইতিমধ্যেই ব্লক নেতৃত্বের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছে জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব। শোকজ নোটিস পাঠানো হয়েছে অভিযুক্ত পঙ্কজ দাসকে। হরিশচন্দ্রপুরের ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস জানিয়েছেন গোটা ঘটনাটি জেলা সভাপতিকে জানানো হবে।