রাজ্য়েই কদর নেই শিল্পের, হতাশ বাঁকুড়ার টেরাকোটা গ্রাম

বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। আর মাত্র হাতে গোণা কয়েকটা দিন পরেই বাঙালি মাতবে মাতৃ আরাধনায়। প্রতিমা শিল্পী, মণ্ডপ শিল্পী থেকে পুজো উদ্যোক্তা সবার মধ্যেই ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। কিন্তু ‘টেরাকোটার গ্রাম’ বলে সারা বিশ্বে পরিচিত বাঁকুড়ার তালডাংরার পাঁচমুড়ার কোন মৃৎশিল্পীই এবার কলকাতার পুজো মণ্ডপে প্রতিমা বা মণ্ডপ সজ্জার বরাত পাননি।

তবে এতসবের পরেও এখানকার একমাত্র শিল্পী বিশ্বনাথ কুম্ভকারের তৈরী টেরাকোটার দুর্গামূর্তি পাড়ি দিল পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে। সেখানকার হলদিয়ার মঞ্জুশ্রীর একটি পুজো মণ্ডপে জায়গা করে নিল তাঁর প্রতিমা।

বাঁকুড়া শহর থেকে ৩৬ কিলোমিটার, অন্যদিকে বিষ্ণুপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী জনপদ পাঁচমুড়া। বর্তমানে এখানকার ১২০টি পরিবারের পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে হাজারেরও বেশী সদস্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে টেরাকোটা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। গত বছর এই শিল্পী বিশ্বনাথ কুম্ভকারের তৈরী টেরাকোটার দুর্গা প্রতিমা দক্ষিণ কলকাতার বাবুবাগানে পৌঁছে গিয়েছিল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই পুজো উদ্বোধন করেন। বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের তরফেও শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পায় বিশ্বনাথ কুম্ভকারের তৈরী এই প্রতিমা। পরে কার্ণিভাল শেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঐ টেরাকোটার প্রতিমার শহরের ‘মা আর্ট গ্যালারিতে সংরক্ষণ করা আছে বলে জানা গিয়েছে৷

পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্প বহু পুরনো। গ্রামের অসংখ্য শিল্পী এই কাজ করে যেমন রাজ্য স্তরের পুরস্কার পেয়েছেন তেমনি ১৯৬৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেনের হাত থেকে মৃৎশিল্পের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান এই গ্রামেরই রাসবিহারী কুম্ভকার। প্রসঙ্গত প্রয়াত রাসবিহারী কুম্ভকার বিশ্বনাথ কুম্ভকারের দাদু।

পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার ঐ পুজো কমিটির এবারের থিম ‘মাটি আমার মা’। সেই ভাবনাকে সামনে রেখে আট ফুট উচ্চতার টেরাকোটা দুর্গা তৈরী করেছেন বিশ্বনাথ কুম্ভকার। দীর্ঘ দু’মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে ঐ মণ্ডপে পাড়ি দিল তাঁর তৈরী দুর্গাপ্রতিমা। ‘মাটি আমার মা’ থিমকে সামনে রেখে প্রতিমাতেও তারা টেরাকোটার মূর্তি রাখার কথা ভেবেছেন বলে জানা গিয়েছে৷ বিশ্বনাথ কুম্ভকারের প্রতিমার পাশাপাশি টেরাকোটার শিল্প সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ সজ্জার করেছেন তার দাদা বিশ্বনাথ কুম্ভকার।

পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পী ভূতনাথ কুম্ভকার বলেন, এবার গ্রাম থেকে একমাত্র বিশ্বনাথ কুম্ভকারের মূর্তি হলদিয়া যাচ্ছে। বাইরের কোন পুজো মণ্ডপ থেকে আমরা আর কেউ কোন অর্ডার না পেয়ে প্রত্যেকেই খুব হতাশ৷ টেরাকোটা শিল্প নিয়ে উদ্যোক্তাদের ভাবতে হবে। তা না হলে সমস্যা বলে তিনি মনে করেন।

শিল্পী বিশ্বনাথ কুম্ভকার বলেন, প্রায় দু’মাসের পরিশ্রমে তিনি এই টেরাকোটা প্রতিমা তৈরী করেছেন। তাঁর আক্ষেপ বিদেশে টেরাকোটা শিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উন্নত প্যাকেজিং ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা নেই। প্রশাসন এবিষয়ে প্রশিক্ষণ দিলে সুবিধা হয় শিল্পীদের৷

এবিষয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরা বলেন, জেলা, রাজ্য, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এবার পুজোয় এখানকার শিল্পীরা সেভাবে কাজের বরাত পাননি স্বীকার করে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমরা যথেষ্ট প্রচার চালাবো। তিনি আশাবাদী পরবর্তী সময়ে এখানকার শিল্পীরা অনেক বেশী মণ্ডপ সজ্জা ও প্রতিমা তৈরীর বরাত পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.