টেট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা রাজ্যের, জবাবদিহি করতে হবে সিঙ্গল বেঞ্চে

প্রাথমিক টেট পরীক্ষার মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল রাজ্য। দেশের শীর্ষ আদালত সোমবার স্পষ্ট বলে দিল, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল, তা কেন কার্যকর হয়নি সেই কৈফিয়ৎ সিঙ্গল বেঞ্চকেই দিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা শুনবে না। ফলে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হয়ে বলতে হবে রায় দেওয়া সত্ত্বেও নিয়োগ কেন হয়নি।

২০১৪ সালে হয়েছিল টেট পরীক্ষা। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় তালিকা। তারপরই মামলা হয় হাইকোর্টে। মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন পথে এগিয়েছে মামলা। কী বলেছে কোন আদালত।

১. ২০১৫ সালে নিয়োগ তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পর এক পরীক্ষার্থী মামলা করেন হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে।

. বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চে ওই মামলায় যুক্ত হন আরও এক হাজার জন পরীক্ষার্থী।

৩. তাঁরা আদালতে বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ১১টি প্রশ্ন এবং তার অপশনাল উত্তর ভুল ছিল। যাঁরা ওই প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়েছেন, তাঁদের পুরো নম্বর দেওয়া হোক এবং নতুন তালিকা তৈরি করা হোক।

৪. রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যকে মাথায় রেখে একটি কমিটি গড়ে দেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়।

৫. আদালতকে সেই কমিটি রিপোর্ট দেয়, ১১নয়, ৬টি প্রশ্ন ভুল ছিল।

৬. সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, যে মামলাকারীরা ওই ৬টি ভুল প্রশ্নের উত্তর লিখেছিলেন, তাঁদের পুরো নম্বর দিয়ে নতুন তালিকা প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুক প্রাইমারি বোর্ড।

৭. কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে পাল্টা পিটিশন দাখিল করেন আরেক পরীক্ষার্থী। তিনি আদালতকে বলেন, এটা তো মামলাকারীদের বিষয় নয়। এটা সামগ্রিক ভাবে ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ব্যাপার। নম্বর বাড়াতে হলে (ভুল প্রশ্নের উত্তর) সমস্ত পরীক্ষার্থীকেই এই সুযোগ দেওয়া হোক। শুধু মামলাকারীরা কেন এই সুযোগ পাবেন?

৮. ডিভিশন বেঞ্চ মামলা নিতে রাজি হয়নি।

৯. ওই পরীএক্ষার্থী চলে যান সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চকে। সেখানে বলা হয়, মামলা গ্রহণ করতে হবে। এবং এই বক্তব্যের সারবত্তা রয়েছে।

১০. মামলা গৃহীত হয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। এখনও সেই মামলা চলছে।

১১. এর মধ্যেই ওই হাজার মামলাকারীদের পক্ষ থেকে সিঙ্গল বেঞ্চে গিয়ে বলা হয়, রায়দানের পরও প্রাইমারি কাউন্সিল তা কার্যকর করেনি। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। কোনও গা নেই। এটা কি আদালত অবমাননা নয়?

১২. সিঙ্গল বেঞ্চ রিপোর্ট চায় প্রাইমারি কাউন্সিলের থেকে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ আদালতকে বলে, এই মামলা নতুন করে ডিভিশন বেঞ্চে চলছে। এখন যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়, আবার পরে যদি ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করে দিয়ে বলে সব পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই নম্বর বাড়াতে হবে, তখন আমরা কী করব? আদালত একটা কথা স্পষ্ট করে বলুক।

১৩. সিঙ্গল বেঞ্চ তখন বলে, ডিভিশন বেঞ্চে যে মামলা হয়েছে সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের রায় কেন কার্যকর হল না? বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চ বলে, আগামী ১৯ তারিখ কোর্টে এসে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে এর জবাব দিতে হবে।

১৪. এরপর সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। গিয়ে বলে, ডিভিশন বেঞ্চে মামলা চলছে। এ দিকে সিঙ্গল বেঞ্চ বলছে ওই রায় কার্যকর করতে হবে। শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করুক।

১৫. সোমবার শীর্ষ আদালতে বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ স্পষ্ট বলে দিল, যা বলার সিঙ্গল বেঞ্চে গিয়ে বলুন। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা শুনবে না।

টেট পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকেই বিস্তর চর্চা হয়েছে বাংলার রাজনীতিতে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তৃণমূল নেতার আত্মীয়, এমনকী শাসক নেতার গাড়ির চালকের আত্মীয়ও সুযোগ পেয়েছে। তালিকায় নাম তুলতে শাসক নেতাদের মোটা টাকা দিতে হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন অনেকে।

এ বার সেই মামলায় বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য। এখন দেখার ১৯ তারিখের শুনানিতে কী বলে প্রাইমারি কাউন্সিল। আর কী বলে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.