মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বারবার দাবি করছেন, বাংলায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভাল, তখন বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক সোনা কাণ্ড তথা শুল্ক দফতরের অফিসারদের হেনস্থার ঘটনা নিয়ে শুক্রবার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

সর্বোচ্চ আদালতের কথায়, “বাংলায় গুরুতর কিছু হচ্ছে। আমরা একেবারে গভীরে গিয়ে তা দেখতে চাই।” এ কথা বলে বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরের অফিসারদের হেনস্থার ঘটনা নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

গত ১৫ ও ১৬ মার্চের মাঝের রাতে কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল। যুব তৃণমূল সভাপতি তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা থাই এয়ারওয়েজের বিমানে ব্যাঙ্কক থেকে ফিরছিলেন। আরও একজন মহিলা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে সাতটি ব্যাগ ছিল। শুল্ক দফতরের কর্তারা ওই ব্যাগ স্ক্যান করতে চাওয়ায় তিনি বাধা দেন বলে। এমনকী শুল্ক দফতরের কর্তাদের এও অভিযোগ, এর পর দফায় দফায় বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে তাঁদের হেনস্থা করে।

এর আগেও একবার সোনা কাণ্ড সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপন করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। তার পর সর্বোচ্চ আদালতে ওই ঘটনা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইন্ডাইরেক্ট ট্যাক্স অ্যান্ড কাস্টমসের সদস্য রাজকুমার বার্থওয়াল।

শুক্রবার ওই মামলার শুনানিতেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি সঞ্জী খান্নার বেঞ্চ বলে, কোনও একজন একটি ভীষণ গুরুতর বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা বিষয়টি শিকড়ে গিয়ে দেখতে চাই।

যদিও সোনা কাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকারকে নোটিস পাঠানোর ব্যাপারে আপত্তি করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ভি। তিনি বলেন, এক জন সিবিআইসি-র সদস্য এ ভাবে ব্যক্তিগত অধিকারে মামলা করতে পারেন না।
কিন্তু বিচারপতিরা জবাবে বলেন, তা পারেন কি পারেন না পরের ব্যাপার। বাংলায় যা হচ্ছে তা আর উপেক্ষা করা যায় না। দরকারে সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে এ ব্যাপারে মামলা করবে।

কলকাতা বিমানবন্দরে সোনা কাণ্ড নিয়ে এর আগে গত ২৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের তরফে অভিযোগ করেছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা। তিনি বলেন, বাংলায় অরাজক পরিস্থিতি চলছে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এমনকী শুল্ক দফতরের অফিসাররা বিমানবন্দর থানায় এফআইআর দায়ের করতে গেলে তাও গ্রহণ করা হচ্ছিল না। পরে শুল্ক দফতরের তরফে ২২ মার্চ একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

শুল্ক দফতরের দাবি, পুলিশ দাবি করেছিল ভিআইপি-দের সঙ্গে যে রকম ব্যবহার করা হয়, ওই দুই মহিলার ক্ষেত্রেও তা যেন মানা হয়। অর্থাৎ তাঁদের ব্যাগ কোনওরকম পরীক্ষা না করে ছেড়ে দিতে হবে। পরে পুলিশ আবার জানিয়েছে, ওই দুই মহিলাকে হেনস্তা করা হয়েছে খবর পেয়ে তারা সেখানে গিয়েছিলেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট এ দিন শুনানিতে যা বলেছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সম্প্রতি কলকাতার সদ্য প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গেলে তাঁদের হেনস্তা করে রাজ্য পুলিশ। বিমানবন্দরে এক প্রকার সে ধরনের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে অভিযোগ। তা ছাড়া বৃহস্পতিবার কোচবিহারে এও দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসা করছে রাজ্য পুলিশ। সব মিলিয়ে সাংবিধানিক ব্যবস্থার উপর কোথাও আঘাত লাগছে বলেই অনেকে আশঙ্কা করছেন। এখন দেখার কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। তবে আপাতত এটা ঠিক, সর্বোচ্চ আদালতের এই মন্তব্য ভোটের মধ্যে অস্বস্তিতেই ফেলে দিল তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.