নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের মূল বিষয়বস্তু নিয়ে মূলত কংগ্রেস ও প্রায় বিরল প্রজাতি হয়ে ওঠা সিপিএমের অতীত ভূমিকা কী ছিল

হালকা শোনালেও অপ্রাসঙ্গিক হবে না হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক … ছন্দে ছন্দে কত রং বদলায়। দেশের সব বিরোধী দলই মাত্র ক’মাস আগে জনতার কাছে মূলত সপরিবারে বিধ্বস্ত হওয়ার জ্বালায় মলম লাগাতে আলোচ্য নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের বিরোধিতায় দেশব্যাপী অরাজকতা শুরু করেছে। ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে তাদের রং অর্থাৎ পূর্বাবস্থান। সকলেই জানেন বাস, গাড়ি, ট্রেন, পুলিশ ভ্যানের মত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি পোড়ানোর কাজেও তারা তুরীয়ে আনন্দ উপভোগ করছে। কিন্তু বিলটির মূল বিষয়বস্তু নিয়ে মূলত কংগ্রেস ও প্রায় বিরল প্রজাতি হয়ে ওঠা সিপিএমের অতীত ভূমিকা কী ছিল দেখলেই এই ভণ্ডামি ও কেবল সংখ্যালঘুদের ক্ষেপিয়ে তুলে তাদের ভোটের বাঁটোয়ারার উচ্ছিষ্ট পাওয়ার লালসাই নজরে পড়বে। সম্প্রতি কংগ্রেসের পারিবারিক পণ্ডিত চিদম্বরম তিনটি কড়া ইংরিজি বাণী দিয়েছেন। এই বিল controversial legislation, done in undue haste, by arrogance of majority rian attitude। এ নিয়ে ২০০৩-এ আলোচনাসূত্রে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা ড. মনমোহন সিং রাজ্যসভায় বলেছিলেন বাংলাদেশের অত্যাচারিত, বিতাড়িত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ভারতের আরো উদারতার সঙ্গে আইন করা প্রয়োজন। সংসদে সচরাচর সব পক্ষ একমত হয় না। এদিন তৎকালীন গৃহমন্ত্রী আদবানিজি একবাক্যে প্রস্তাব সমর্থন করেছিলেন, বামেরা খুব হাততালি পিটিয়েছিলো। যে কোনো কারণে হোক, বিষয়টি আর এগোয়নি।

২০০৪-১৪ কংগ্রেস জমানায় সংখ্যালঘু তোষণের উপকারিতা সম্পর্কে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে হিন্দুটিন্দুদের বিষয় বলে এদিক থেকে তারা নজর ঘুরিয়ে নেয়। পশ্চিমবঙ্গে তারা ধরে নেয় বরাবরের মতো অস্ত গেছে, এখানে কোনো স্টেক নেই। শরণার্থীদের বড় অংশই কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে, যা নিয়ে এখানকার পূর্বতন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বলেছিলেন এখানে জন-আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ২০১৪ সালে বিজেপি আসার পর ম্যানিফেস্টো অনুযায়ী ২০১৫-তে ঠান্ডা ঘরের বিল বার করে আবার আলোচনা শুরু হয়। ২০১৫-তে এটি সিলেক্ট কমিটিতে দীর্ঘ চর্চিত হয়। কমিটি এগারো বার সরেজমিনে ফিল্ড ভিসিট করে। এ সংক্রান্ত নয় হাজার প্রস্তাব বহু ক্ষেত্র থেকে প্রেরিত হয়। মনে পড়বে ২০১৮ সালে বিজেপির শেষলগ্নে বিলটি লোকসভায় পাস হয়। রাজ্যসভায় চিদাম্বরমর ভাষায় সংখ্যাধিক্যের ঔদ্ধত্য দেখিয়ে কংগ্রেস অবিভক্ত ভারতের এই পূর্বতন বাসিন্দাদের নির্যাতনের সুরাহার সুযোগ কেড়ে নেয়। রাজ্যসভায় বিল ছুতো করে আটকে দেয়। এবার দীর্ঘ আলোচনা ও চিদাম্বরমের হুমকি স্বাভাবিক কারণেই অগ্রাহ্য করে বিপুল সংখ্যাধিক্যে বিল গৃহীত হয়। ফলে অহঙ্কারী চিদাম্বরম কারাবাসের অপমান ভুলতে নির্জলা মিথ্যে বলা শুরু করেছেন। ১৯৭৬-এ জরুরি অবস্থার সময়ে বিরোধীশূন্য সংসদে জোর করে সংখ্যার পশুবলে সংবিধানে মুসলিম ও কমিউনিস্ট তোষণের উদ্দেশে সেকুলার ও সোশ্যালিস্ট শব্দ দুটি গুঁজে দেয় কংগ্রেস। চিদাম্বরম আইনজীবী, সকলেই জানেন পেশার খাতিরে তাঁরা সত্য কথা কমই বলেন। চিদম্বরমের সে দোষ সম্ভবত মজ্জাগত হয়ে গেছে। তিনি আবার তার প্রমাণ রেখেছেন।

হ্যাঁ, সারা বিশ্বে সর্বহারার পদাঘাতের হতাশায়, এই আইন নিয়ে জেএনইউতে প্রকাশ কারাত তাঁর দত্তক ছেলেপুলেদের লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা সব জেহাদি উন্মাদনায় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় নেমেছে। উনি অলীক বিপ্লবের আঁচ নিচ্ছেন। বিষয় তো সেই সিএএ যাতে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব। প্রবঞ্চনার তীব্রতা বুঝতে ফিরতে হবে পেছনে। ২০১২ সালের পার্টির প্রস্তাব অনুযায়ী এই মহানুভব প্রধানমন্ত্রী মনমোহনকে লিখছেন ‘Please sympathytically consider the logical demand of large number of bangladeshi refugees to recognize them as citizens of India’।

বাঃ বাঃ বাঃ। অনুবাদ নিষ্প্রয়োজন। সালটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতায় আসার আগে ঠাকুরনগরে তাঁরা, তৃণমূল সকলেই হত্যে দিয়েছিলেন মতুয়াদের নাগরিকত্ব দে‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ওয়ার অঙ্গীকার করে। প্রধানমন্ত্রীকে দরবার করে কিছু করতে পারলে মমতার ভোট কাটা যেতে পারে কেননা তখন আর তাদের কেউ বিশ্বাস করতো না। ততদিনে স্নায়ুরোগে আক্রান্ত বামমন্ত্রী গৌতম দেবও ২৮।১২।২০১০-তে মতুয়াবাড়িতে গিয়ে সর্বদলীয় প্রস্তাব পাস করিয়ে নাগরিকত্ব বিল সংশোধনের ধাপ্পা দিয়ে এসেছিলেন। তাহলে দেখুন গিরগিটি লজ্জায় লুকোবার জায়গা পাচ্ছে না। আর দিদি তো কবে ২০০৫-এ এই উদ্বাস্তুর হিসেব লোকসভার অধ্যক্ষকে ছুঁড়ে আসেন। এখন কিন্তু তাঁর বাড়ির ভোটের মতোই তিরিশ শতাংশ বাঁধা নামাজী ভোট যা বাঁচাতে তিনি মরিয়া। ওদিকে মুলায়মের কথা বোঝা সোজা সেটি পারিবারিক কাম মুসলিম দল। তারা রাষ্ট্রসম্পত্তির ধ্বংসকারী কে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে এসেছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একশো মুসলমান প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন মায়াবতী। হিন্দু কল্যাণে জন্ম হওয়া শিবসেনা আজ ক্ষমতার লোভে মুসলিম দল কংগ্রেসের খপ্পরে পড়ে মুসলিম পক্ষে ঝুঁকে পড়েছে। অনেক হলো। এক কথায় বুঝে নিন বিজেপি এখন চক্রব্যূহে। ইসলাম অনুযায়ী ভারত এখন দারুল হার্ব অর্থাৎ যেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। লড়াই জিতে দারুল ইসলামই লক্ষ্য যেখানে অন্য ধর্মের মর্যাদা নেই।

শাহীনবাগে মহিলা বিক্ষোভকারীরা এক মাস ধরে মূল রাস্তা আটকে বসে থেকে এখন পুলিশ পেটাচ্ছে, শিশুরাও যোগ দিয়েছে। টিভিতে দেখুন। আমাদের দাবার বোড়েরা অসাড় উল্লাসে তাদের বাহবা দিচ্ছে, আন্দোলন ছড়িয়ে দিচ্ছে। কয়ামতকে দিন ভয়ঙ্কর। হায়।

সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

(সূত্র : শ্রী অরুণ কুমারের ভাষণ, ১৫।১।২০২০)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.