আপনি কাটমানি খেয়েছেন? প্রশ্ন শুনেই বিস্ফোরক জবাব বৈশালী ডালমিয়ার

কাটমানি নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রাজ্যের সর্বত্র। সেই ক্ষোভ এ বার তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেও। জেলায় জেলায় নানা অভিযোগ উঠছে। তা বলে দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে দলেরই নেতারা অভিযোগ তুলবেন? সেটাই হয়েছে রবিবার। বালি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক শিল্পপতি বৈশালী ডালমিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে কাটমানি খাওয়ার। আর তাতেই বেজায় ক্ষুব্ধ বৈশালী। এ বার তিনি দলেরই নেতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে যাচ্ছেন।

আপনি কি কাটমানি খেয়েছেন? সরাসরি এমন প্রশ্ন শুনেই ক্ষিপ্ত বালির বিধায়ক। বললেন, “যাঁরা অভিযোগ তুলছেন তাঁরা কি আমার পরিচয়টা জানেন? আমি জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে। আমি এম এল ডালমিয়া অ্যান্ড কোম্পানির কর্ণধার। বিশাল ব্যবসা সামলে দিদির কথায় রাজনীতিতে এসেছি। রাজনীতি করে আমাকে রোজগার করতে হয় না। বিশাল বাংলো ছেড়ে আমার কেন্দ্র বালিতে পড়ে থাকি সাধারণের জন্য কাজ করব বলে।” কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে তো তেমনই অভিযোগ উঠেছে। “যাঁরা অভিযোগ তুলেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আমি আদালতে যাচ্ছি। প্রমাণ করতে হবে আমি কাটমানি খেয়েছি।”

রবিবার ছিল হাওড়া জেলার সাংগঠনিক বৈঠক। রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর সামনেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বৈঠক। পরে বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া অভিযোগ তোলেন, তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বৈঠকে।

জানা গিয়েছে, রবিবারের বৈঠকে হাওড়ার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তফজিল আহমেদ সরাসরি অভিযোগ তোলেন, বিধায়ক কাটমানি খান। তাতেই ফুঁসে ওঠেন বৈশালী। সেই ক্ষোভ সাংবাদমাধ্যমের সামনেও উগরে দেন তিনি। বলেন, “আমাকে হেনস্থা করেছে মিটিং-এ। বলছে, আমি নাকি কাটমানি খাই। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রমাণ না দিতে পারলে ওঁর বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করব।”

কিন্তু মামলা করলে তো দলের অস্বস্তি বাড়বে। এমন কথায় ফের আক্রমণাত্মক বৈশালী। বলেন, “এটা সম্মানের ব‌িষয়। আমি বিধায়ক হিসেবে এলাকার জন্য কী কী করেছি তা বালির সাধারণ মানুষ জানে। আজ যাঁরা অভিযোগ তুলেছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও আমি পাবলিকলি অভিযোগ তুলতেই পারতাম কিন্তু সেটা করিনি।” আপনাকে প্রার্থী করেছিলেন খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদিকে জানাবেন না এই হেনস্থার কথা? এ বারেও আক্রমণাত্মক বৈশালী বললেন, “ওই বৈঠকে ববিদা ছিলেন। দিদি তাঁর কাছে সবই শুনবেন। এত ছোট বিষয়ে আলাদা করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়া ঠিক হবে না। দেখিই না দল কী ব্যবস্থা নেয়।”

তাঁর বিরুদ্ধে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ ওঠায় জগমোহন কন্যা যে রীতিমতো ক্ষিপ্ত সেটা বুঝিয়ে তিনি বলেন, “এলাকায় জয়সওয়াল হাসপাতালের উন্নতির জন্য আমি কী করেছি সেটা এলাকার মানুষ জানে। আমি রাজ্যের বিধায়ক হিসেবে সংসদে গিয়ে কী ভাবে বিভিন্ন প্রকল্প কাজে লাগানো যায় তা বলে রাজ্যের অহঙ্কার প্রতিষ্ঠিত করেছি। এটা দল জানে। লালবাবা কলেজে ভর্তির জন্য তোলাবাজি আমি বন্ধ করেছি। এর পরে কেউ আমার সম্পর্কে এমন খারাপ অভিযোগ তুললে রাগের থেকেও কষ্ট হয় বেশি।”

এর আগেও স্থানীয় নেতৃত্বের তরফে বৈশালীর সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নিজেই সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আমি নিজের টাকা দিয়ে মহিলাদের গোষ্ঠী তৈরি করে ব্যবসা করার রাস্তা দেখিয়েছি। তখনও বলা হয়েছিল আমি নাকি ডালের ব্যবসা করছি। এসব মেনে নেওয়া যায় না। এখন বলা হচ্ছে, আমি সাধারণ মানুষের বাড়ি তৈরির টাকা ডাকাতি করেছি। এ তো মারাত্মক অভিযোগ।”

বৈশালী এদিন বলেছেন, এখনও পর্যন্ত তিনি কখনও দলের অস্বস্তি বাড়াননি, বাড়াতেও চান না। তবে যে ভাবে মানহানির মামলা করতে চেয়েছেন তাতে বড় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস বনাম তৃণমূল কংগ্রেস মামলায় দলের অস্বস্তি নিঃসন্দেহে বাড়বে। তবে তার আগেই দলের পক্ষে এই অভিযোগ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.