নরেন্দ্র মোদী এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। সেই সঙ্গে বার্তা দিয়ে গেলেন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেসের দিন শেষ। পরিবর্তন আসন্ন। ব্রিগেডে মানুষের ঢল দেখে তার সহাস্য মন্তব্য, ‘বেশ বুঝতে পারছি দিদির রাতের ঘুম উবে গেছে।’
বস্তুত, নরেন্দ্র মোদীর ৩ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়, লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি। স্মরণযোগ্য কালে এমন বিপুল জনসমাগম ব্রিগেডে দেখা যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহুচর্চিত ‘মহাগঠবন্ধনের’ সভাতেও এমন উপচে পড়া ভিড় ছিল না। চৈত্রের প্রচণ্ড গরমে যাতে কারোও কষ্ট না হয় তার জন্য রাজ্য বিজেপি মাথার ওপর অস্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু ভিড় বাড়তে বাড়তে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে ছাদের নীচে সকলের স্থান-সংকুলান অসম্ভব হয়ে ওঠে। বহু মানুষ রোদে দাঁড়িয়ে প্রিয় নেতার ভাষণ শুনতে থাকেন। যা দেখে অভিভূত নরেন্দ্র মোদী বলেন, “বাঙ্গলার মানুষ এত ভালোবাসা দেবে ভাবিনি। আমি আপনাদের সবাইকে প্রণাম করছি।”
একদিকে বাঙ্গলা মিডিয়ার লাগাতার নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা আর অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদাগিরি— এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে ব্রিগেডের জনসভার ভবিষ্যই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সভা আদৌ হবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছিল তাই নিয়েও। নেতিবাচক পরিস্থিতিতে কঠিন লড়াই করে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব যেভাবে সভার আয়োজন করেছেন তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার, এরপর তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তা চূড়ান্ত বোকামি হবে।
ক্ষমতায় ফিরলে তার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন হবে, এদিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বাঙ্গলার মানুষের অনেকদিনের দাবি, সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত তৃণমূলের নেতাদের কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না কিংবা, ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে যে নেতা-মন্ত্রীদের ঘুষ নিতে দেখা গেছে তারা কেন জেলের বাইরে রয়েছেন—এদিন মোদী তার জবাব দেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আপনাদের ভোটের জন্য প্রতারকেরা জেলের দরজায় পৌঁছেছে, এবার ভোট দিলে তারা জেলে যাবে। একথা শুনে হাততালিতে ফেটে পড়ে জনতা।
বালাকোটে ভারতের এয়ার সার্জিকাল স্ট্রাইকের বিরোধিতা করার জন্য এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করেন নরেন্দ্র মোদী। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন, ‘চোট পাকিস্তানের লেগেছে কিন্তু ব্যথা পাচ্ছেন দিদি। বলছেন, মোদী প্রমাণ দিন। জঙ্গিদের সঙ্গে এরকম করা উচিত নয়। ভারতের সেনাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। তাতে আপনারা খুশি কিন্তু দিদি নন। দিদি এত বেশি কেঁদেছেন সে পাকিস্তানে নায়িকা হয়ে গেছেন।” নরেন্দ্র মোদী জনতার কাছে জানতে চান, ‘প্রমাণ চাওয়ার পাপ কে করেছিল? শহিদ সুদীপ বিশ্বাস আর বাবলু সাঁতরার অপমান নয় এটা?’ চল্লিশ মিনিটের ভাষণে সিংহের গর্জন শুনেছে পশ্চিমবঙ্গ। উত্তাল হয়ে উঠেছে জনতা। ঢাকা পড়ে গেছে দিনহাটায় মমতার সভা। ব্রিগেডে জনপ্লাবন দেখে নিঃশব্দে ভোল পালটে ফেলেছে বাঙ্গলা মিডিয়াও। মমতার তাবেদার এবিপি আনন্দ এদিন মোদীর সভাকে বেশি গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়। দিনহাটায় মমতার সভার সম্প্রসারণ করা হয়েছে বটে কিন্তু চ্যানেলের বিশেষ নজর ছিল মোদীর সভায়। আনন্দবাজারের শিরোনাম অনুযায়ী মোদীর ‘দুপুরের সভার জবাব বিকেলে’ দিতে গিয়ে মমতা আগেই নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছিলেন, সভায় তার দলতন্ত্রের ঊর্ধ্বে উঠতে না পারা এবং মুখে, “আগে দিল্লি সামলা পরে দেখিস বাংলা’—স্লোগান মোদীর পাশে তাকে অনেকটাই স্নান করে দিয়েছে।
চন্দ্রভানু ঘোষাল