সবুজ রসগোল্লা, পদ্ম সন্দেশ ; ভোটের হাওড়ায় বাজার মাতাচ্ছে ‘পলিটিক্যাল সুইটস’

রসগোল্লা সাদা দেখেই অভ্যস্ত চোখ। আর শীত এলেই নতুন গুড়ের হালকা রঙ ধরে তাতে। কিন্তু তাই বলে সবুজ আর গেরুয়া রসগোল্লা!

রঙে আর শৈলীতে নানা সাধের মিষ্টির দেখনদারি হরেক কিসিমের হয় বরাবরই। কিন্তু চেনা চেহারা সরিয়ে সেখানেও এখন কাস্তে-হাতুড়ি-তারা বা ঘাসের উপর জোড়া ফুল।

সবেরই সৌজন্য না কি লোকসভা ভোট!

ঘুম ভাঙছে স্লোগানে। চোখ মেলতেই বাড়ির পাশের চেনা দেওয়ালে অচেনা রঙ। পুলিশের বদলে জায়গায় জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সম্ভ্রম জাগানো জলপাই ইউনিফর্ম। ভোটের দৌলতে দ্রুত পাল্টাচ্ছে আবহ। মিষ্টিই বা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে কেন?

ভোটকে মাথায় রেখেই মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডের একটি জনপ্রিয় দোকান আমূল বদলে ফেললেন তাঁদের মিষ্টি তৈরির কারিকুরি। আর সবকিছুকে সরিয়ে এখন দেদার বিকোচ্ছে তাঁদের ‘পলিটিক্যাল সুইটস’। বিজেপির কর্মী শিবশঙ্কর সাধুখাঁ, এমনি যে খুব একটা যান মিষ্টির দোকানে, তেমনটা নয়। তবে ‘পলিটিক্যাল সুইটসের’ টানে বেড়ে গেছে আনাগোনাটা। নিজেই বললেন, “আসলে পদ্ম আঁকা মিষ্টিগুলো দেখতে বেশ। বিজেপি আমার ভালবাসার দল। তাই পদ্ম আঁকা ওই মিষ্টি কিনে সবাইকে পাঠাতে ভাল লাগছে খুব। আমি একা নই, আমার দলের অন্য কর্মী সমর্থকদেরও পছন্দ হয়েছে ব্যাপারটা।’’

সবুজ রসগোল্লা দেখে যেমন আপ্লুত তৃণমূলের কর্মী অভিষেক পাত্র। তাঁর কথায়, “রসগোল্লা আমাদের বাংলার কৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে। আমার প্রিয় দলের রঙ তার গায়ে লাগায় কী যে আনন্দ হয়েছে বলে বোঝাতে পারবো না।” অভিষেকও নাকি দেদার কিনছেন। খাচ্ছেন, খাওয়াচ্ছেনও।

আর যাঁদের গায়ে রাজনীতির রঙ নেই, তাঁরা? তাঁরাও কি নিচ্ছেন?

দোকানের মালিক প্রদীপ হালদার বললেন, “হ্যাঁ তাঁরাও নিচ্ছেন। তবে পরিচয় যদি বেরিয়ে পড়ে! তাই বেশিরভাগ সময়েই তাঁদের বাক্সে সহাবস্থান। বেশ মিলিয়ে জুলিয়েই পলিটিক্যাল সুইটস কিনছেন তাঁরা। এতে অবশ্য আমাদেরই লাভ।”

প্রদীপবাবু জানাচ্ছেন, চারিদিকে বেশ ভোট ভোট ভাব। এই আবহটাকে মিষ্টিতে তুলে ধরলে কেমন হয়, মূলত এই ভাবনা থেকেই পলিটিক্যাল মিষ্টির জন্ম। সারা বছরের একঘেয়েমির মধ্যে একটু নতুনত্বও হল, আবার তার টানে বাণিজ্যও।

কিন্তু নানা কিসিমের এত রঙ, শরীর বাঁচবে তো?

“রসগোল্লাতেই হোক আর সন্দেশে, আমরা যে রঙ ব্যবহার করছি তার পুরোটাই ভেষজ, এবং সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত। কাজেই এ ব্যাপারে কোনও দুশ্চিন্তা না রেখেই মিষ্টি কিনে নিয়ে যেতে পারেন”, সদম্ভে দাবি করলেন প্রদীপবাবু। “দামও সবার সাধ্যে। সবাই যাতে মিষ্টিমুখ করে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে পারেন সেদিকে আমাদের পুরো খেয়াল।”

মধ্য হাওড়ার ভোট তাই মিষ্টি সুখের উল্লাসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.