গণধর্ষণ থেকে বাঁচতে ওই রাতে বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল রিয়া, পুলিশের জেরায় জানাল সাদ্দাম

খুনের আগে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল রিয়া দে-কে। বাঁচার জন্য দোতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল রিয়া। মাটিতে পড়ে গুরুতর চোট পায়। কিন্তু তখনও প্রাণ ছিল তাঁর দেহে। মেয়ের অবস্থা দেখে মা রমা দে চিৎকার শুরু করতেই সাদ্দাম হোসেন, শুকদেব দাস, মঞ্জুর আলম ও আমিনুর হোসেন তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করার চেষ্টা করে। এরপর মা ও মেয়ে, দুজনকে নিয়ে হলদি নদীর চরে চলে যায় তারা। সেখানে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

হলদিয়ার ঝিকুড়খালিতে মা মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ধৃত সাদ্দাম হোসেন, মঞ্জুর আলম ও শুকদেব দাসকে জেরা করে এমনই তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। সোমবার এই ঘটনায় অন্যতম আরেক অভিযুক্ত আমিনুর হোসেনকে মুম্বইয়ের গোরেগাঁও থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজই ট্রানজিট রিমান্ডে দূর্গাচকে নিয়ে আসা হচ্ছে তাকে। পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই গ্রেফতার সাদ্দাম হোসেন, মঞ্জুর আলম ও শুকদেব দাসের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে আমিনুরকে। তাহলেই সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তা আরও স্পষ্ট হবে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ার সাত নম্বর ওয়ার্ডের ঝিকুড়খালি এলাকায় দু’জনকে আগুনে দাউদাউ করে পুড়তে দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। জল ঢেলে আগুন নেভানোর পরে দুটি দেহাংশ, পোশাকের কিছু অংশ এবং মাথার চুলের বেঁচে যাওয়া টুকরো দেখে পুলিশ অনুমান করেছিল, দগ্ধ দু’জনেই মহিলা। তাঁদের পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পুলিশ। এর পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই মৃত মহিলার পোশাক ও চুলের বর্ণনা দিয়ে পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করে জেলা পুলিশ। পরে জানা যায়, মৃত দুই মহিলার নাম রিয়া দে(২২) ও রমা দে (৪০), তাঁরা নিউ ব্যারাকপুরের নরেশ চন্দ্র সরণিতে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রথমে মঞ্জুর আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করেই বাকিদের নাম জানতে পারে পুলিশ। জানতে পারে রিয়া ও তাঁর মা রমাকে পরিকল্পনা করেই সেদিন হলদিয়ায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিল মূল অভিযুক্ত হলদিয়ার ঠিকাদার শেখ সাদ্দাম হোসেন। এও জানতে পারে রিয়ার সঙ্গে সাদ্দামের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সাদ্দামের বিয়ের পর থেকেই তাকে ব্ল্যাকমেল করছিল রিয়া ও তাঁর মা রমা। রিয়া ও সাদ্দামের ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি ও ভিডিও সাদ্দামের বউয়ের হাতে তুলে দেবে, এই ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ও ফ্ল্যাট দাবি করা হয়েছিল বলে জেরায় জানায় সাদ্দাম। অতিষ্ট হয়েই মা-মেয়েকে হলদিয়ায় ডেকে এনে খুনের ছক বলেও জানতে পারেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, মা মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত সাদ্দাম ও আমিনুর। ওইদিন বারান্দা থেকে পড়ে রিয়া অজ্ঞান হয়ে যায়। আর তার মাকে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা হয়। পরে দুজনকেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিল মঞ্জুর ও শুকদেব। কিন্তু সাদ্দাম ও আমিনুর তাদের কথায় কান না দিয়ে গাড়ি করে দুজনকে নদীর চরে পুঁতে দেওয়ার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু পরে তাদের মনে হয় এ ভাবে প্রমাণ লোপাট করা যাবে না। তখন আমিনুরের নির্দেশেই গাড়ি থেকে পেট্রোল এনে রমা ও রিয়ার গায়ে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। তাই সাদ্দাম, মঞ্জুর, শুকদেব ও আমিনুরকে আরও জেরা করা দরকার বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তিনজন আগেই ধরা পড়লেও মুম্বইতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিল আমিনুর। সেও ধরা পড়ায় দ্রুত এই হত্যা রহস্যের জট খোলা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.