একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ও পরে উপনির্বাচনে ফোটোফিনিশ জয় পেলেও তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক পরিস্থিতি ঠিক কতটা পোক্ত তা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। বরাবরই শিরোনামে থেকেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। ফের সেই ছবি সামনে এল ফরাক্কায়।
শনিবার ফরাক্কা ব্লক তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি খলিলুর রহমান, সভাপতি কানাইচন্দ্র মণ্ডল ও ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কিন্তু সেখানে দেখা যায়নি প্রাক্তন বিধায়ক ও সদ্য তৃণমূলে আসা মইনুল হককে। আর এ নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
কেন দলের বৈঠকে অনুপস্থিত মইনুল? তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ” এটা তো গরু মেরে জুতো দান! ৬ তারিখ শুনেছিলাম বৈঠক রয়েছে। কিন্তু কীসের বৈঠক কারা রয়েছে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি বৈঠকের কোনও আমন্ত্রণও আমাকে করা হয়নি। দিনের দিন বিকেলে আমায় বলা হয় বৈঠক রয়েছে। ইলিয়াস নামে কোন এক কনভেনার আমায় ফোন করেছিল। কিন্তু, এই আমন্ত্রণ তো জেলা সভাপতির করা উচিত। কেন আমি তাহলে ওই বৈঠকে যাব! তাও বলব, আমি সকলের সঙ্গে কাজ করতে চাই। মিলেমিশেই কাজ করতে চাই।”
অন্যদিকে, ফরাক্কার বর্তমান বিধায়ক মনিরুল ইসলামের মন্তব্য, “দলে নানাভাবে নানাজন যোগ দিচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের মতো গোষ্ঠী ও উপগোষ্ঠী তৈরি করছেন। কেউ যদি এখানে এই ধরনের নিজের গোষ্ঠী তৈরি করেন তাহলে তা জেলা সভাপতির দেখা উচিত। কোনও গোষ্ঠী তৈরি করে দলের কাজ করা যাবে না। সেভাবে দলের কাজ করা যায় না।”
দলের জেলা সভাপতি খলিলুর অবশ্য দলের ভেতরের এই চাপানউতোর নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তাঁর কথায়, “দলকে শক্তিশালী করার জন্যই এগুলোকে তাদের পরামর্শ বলেই মনে করছি আমি। দলকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ায় আমার দায়িত্ব, কাউকে দূরে ঠেলে দেওয়া নয়।”
উপনির্বাচনের প্রাক্কালে ২৩ সেপ্টেম্বর জঙ্গিপুরে তৃণমূলের জনসভাতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূল যোগ দেন মইনুল হক। তার আগে, জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সোনিয়া গান্ধীর কাছে চিঠি লিখে দলত্যাগের কথা ঘোষণা করেন ফরাক্কার প্রাক্তন বিধায়ক। সদ্যই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন মইনুল। যোগদানের আগে জঙ্গিপুরের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেনের বাড়িতে একটি বৈঠকে যোগ দেন মইনুল। দীর্ঘক্ষণ সেই বৈঠকের পরেই নিজের ঘনিষ্ঠমহলে দলত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক।
স্বাভাবিকভাবেই মইনুলের দলে ফিরে আসা বিশেষ ভাল চোখে দেখেননি বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও তাঁর অনুগামীরা এমনটাই খবর সূত্রের। ফলে, সেই বিরোধের জের এসে পড়ছে দলের কাজেও। এদিকে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জেলায় ব্লক কমিটি বাতিল করে তৃণমূলের বিধানসভা ভিত্তিক কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, দলীয় কমিটি না থাকলে বিধায়কভিত্তিক দলীয় কাজকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সংগঠন এমনই আশঙ্কা জোড়াফুল শিবিরের অন্দরে।