হাওড়া কোর্টের আইনজীবী এবং পুরকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নতুন মোড় নিল বুধবার রাতে। জানা গিয়েছে আইনজীবীরা দলমত নির্বিশেষে হাইকোর্টে জমায়েতের ডাক দিয়েছেন বৃহস্পতিবার সকালে।

আইনজীবীদের বক্তব্য, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার সময়েও এমন ঘটনা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। আইনজীবীদের অভিযোগ, কোর্ট চত্বরে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়েছে পুলিশ। যা স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আইনজীবী মহালের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার পিটিশন দায়ের করা হবে হাইকোর্টে। এক আইনজীবী জানিয়েছেন, যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টচার্য সকালের প্রচার কর্মসূচি বাতিল করে মামলা করতে আসবেন। দলমত নির্বিশেষে আইনজীবীরা একজোট হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।

বুধবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে সন্ধে সাড়ে পাঁচটা। সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে চলে উকিল-পুরকর্মী সংঘর্ষ। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ফিরে যান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়। আইনজীবীরা ঘিরে থাকেন কর্পোরেশন দফতর। দফায় দফায় চলে ইটবৃষ্টি। আহত পুরকর্মীকে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে।

কর্পোরেশনের ভিতর আটকে পড়েন কয়েক হাজার কর্মী। অসংখ্য সাধারণ মানুষ যাঁরা পুর দফতরে নিজেদের কাজের জন্য এসেছিলেন, তাঁরাও আটকে পড়েন। কর্পোরেশনের দুটি গেটই অবরুদ্ধ করে রাখেন আইনজীবীরা। কর্পোরেশনের পার্ক অ্যান্ড গার্ডেনস বিভাগের এক মহিলা কর্মী বলেন, “আমরা আতঙ্ক নিয়ে বসে আছি। কী হবে জানি না। খাবার কিনতে বেরোতে পারছি না। ভয়াবহ অবস্থা।”

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ। কর্পোরেশনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের নতুন গেটের সামনে এক আইনজীবীর গাড়ি পার্ক করা ছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, কর্পোরেশনের অস্থায়ী কর্মীদের কেউ সেই গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এর পর খবর যায় কোর্টে। উকিলরা ঢুকে পড়েন কর্পোরেশনে। পুরকর্মীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় আইনজীবীদের। রক্তাক্ত হন বেশ কয়েক জন আইনজীবী।

ঘটনায় আহত হয়েছেন এক পুরকর্মীও। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কর্পোরেশনের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গেও ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় আইনজীবীদের। যত যময় এগোয়, তত চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। কর্পোরেশন এলাকা থেকে গন্ডগোল বেরিয়ে নেমে আসে কোর্টের সামনের রাস্তায়। শুরু হয় ইট বৃষ্টি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বন্ধ হতে শুরু করে দোকানপাট। বেশ কিছু ক্ষণ পর হাওড়া কমিশনারেটের বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে। তাদেরও পরিস্থিতি সামাল দিতে নাকানিচোবানি খেতে হয়। নামানো হয় র‍্যাফ। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

দুপুরে, ফের এক দফা ইটবৃষ্টি হয়। সেই ঘটনায় মাথা ফাটে শর্মিষ্ঠা দত্ত নামের এক পুরকর্মীর। তিনি একশো দিনের কাজের সুপারভাইজার বলে খবর। তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক জন আইনজীবী মিলে ওই অ্যাম্বুলেন্সের চাবি খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় শর্মিষ্ঠা দত্তকে সেখানেই বসে থাকতে হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অ্যাম্বুলেন্স হাওড়া হাসপাতালের দিকে এগোলে সেখানেও আটকে দেওয়া হয় অ্যাম্বুলেন্স। শেষমেশ হাসপাতালে প্রতি করা হয় শর্মিষ্ঠাকে।

পরিস্থিতির খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত। কিছু ক্ষণ থাকার পর তাঁকেও নিরুপায় হয়ে ঘটনাস্থল ছাড়তে হয়। আইনজীবীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কোর্ট রুমে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাঠিয়েছে। সূত্রের খবর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজ্যের মুখ্য সচিবের রিপোর্ট তলব করেছেন।

বুধবার উত্তপ্ত হয়েছিল গঙ্গার পশ্চিম পাড়। বৃহস্পতিবার সেই উত্তাপ ছড়াতে পারে গঙ্গার পূর্ব পাড়ের হাইকোর্ট তল্লাটেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.