‘তুমি আসবে বলে তাই, আমি স্বপ্ন দেখে যাই। আর একটা করে দিন চলে যায়’। দিন নয় , তবে প্রত্যেক ঘণ্টায় ফণী ঝড়ের দিকে চেয়ে ব্যাপক উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করেছিল মহানগরবাসী। ফণী আসবে, বেশি নয়..অল্প ছোবল দেবে। ভালোবাসার বিষে মন খুশ হয়ে যেত কলকাতার। বারা ভাতে ছাই দিল ঝড়। কিস্যু হল না। এই এল, সেই এল করে সেই পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ঝুলি একেবারে শূন্য নয়। রাতভর ভারী বর্ষণ।

উত্তেজনাপ্রবণ বাঙালির সকাল থেকেই নানাবিধ আশা ছিল এই ফণী নিয়ে। গরম হঠিয়ে তেড়েফুঁড়ে ঝড় হবে , ঝড়ে গা ভাসিয়ে দেবে। শান্তির ঘুম ভুলে কখনও টিভি কখনও মোবাইলের দিকে চোখ রেখেছিল শহরবাসী। সময় এগিয়েছে, ঝড়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দূরত্ব কমেছে। ‘লাগ লাগ লাগ নারদ নারদ’, এমন একটা আশা নিয়ে তত বুক বেঁধেছে শহর। কিন্তু বলা যেতেই পারে অসাধারণ ডজ করে শুধুমাত্র কলকাতাকে ছাড় দিয়েই বাংলাদেশের দিকে চলে গেল ফণী।

উৎকণ্ঠার শেষ কয়েক ঘণ্টা কেমন ছিল ? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আপডেট অনুযায়ী শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পশ্চিম দিক দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে ঝড়। তখনও ‘বিপজ্জনক সাইক্লোন’ ফণী। খড়গপুড়ে ঝড়ো হাওয়া, দীঘায় ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝড়, উত্তাল হলদিয়ার হলদী নদী, গোসাবা, সুন্দরবনের নদীও উত্তাল। শহর থেকে তখন ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে ঝড়।

গত সপ্তাহ দুয়েকের গরমে নাজেহাল শহরবাসী ‘শীতের কাঁথা বর্ষায় ছাতা’ নিয়ে রেডি। এইবার ঝড় উঠবেই। রাত দুটো, ঝেঁপে বৃষ্টি চলছে। তখনও উত্তেজনার পারদ চরমে। একদম শেষ মিনিটে এসে একমাত্র কলকাতাকে অসাধারণ ডজ করে একপ্রকার ধোঁকা দিয়ে ঝড় পারি দিল পূর্ব বর্ধমানের দিকে। এরপর শেষ আপডেট নদীয়া, মুর্শিদাবাদ হয়ে ঝড় ভোরবেলার দিকে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কলকাতা কি পেল? হাওয়া অফিস বলেছিল ৭০ মিলিমিটারের কাছাকাছি বৃষ্টি হতে পারে। ৬৬ মিলিমিটারের ভারী বর্ষণ, এটাই পেল কলকাতা।

কিন্তু কলকাতায় কেন ঝড়ো হাওয়া বইল না? আবহবিদদের ব্যখ্যা, আরামবাগের কাছে এসে অল্প বাঁক নেয় ফনী। সেটাই শহরকে ‘আশাহত’ করেছে। অনেকটা গ্যালপিং ট্রেনের মতো কলকাতাকে না ছুঁয়ে পূর্ব বর্ধমান দিয়ে বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যায়।

উত্তেজনাপ্রবণ শহরবাসী যতই আশাহত হোক হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে প্রশাসন। শহরের ভিত যে কি পরিমাণ নড়বড়ে মেয়র ভালোভাবেই জানেন। কালবৈশাখী হলেই শহরের বাড়ি ঘর চালা ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। এমন জাতের বিপজ্জনক সাইক্লোন যদি ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে শহরের উপর তাণ্ডব চালাত তাহলে কি হতে পারত পুরসভার কর্মীদের চেয়ে ভালো সম্ভবত কেউ জানেন না।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খড়গপুর থেকে নজর রাখছিলেন ঝড়ের গতিবিধির দিকে। মেয়র ববি হাকিমসহ তাঁর টিম উদ্ধার কাজের জন্য তৈরি ছিল। মধ্যবিত্তের কলকাতা বলছে শেষ মিনিটে ফাঁকি, গরীব থেকে রাজনীতি ঝাণ্ডাওয়ালা কলকাতা যেন বলছে , ‘আপদ গিয়েছে’।

সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.