এসএসকেএমের সামনে রাস্তা বন্ধ করে অবরোধ রোগীদের বাড়ির লোকদের, মুখ্যমন্ত্রী দেখুন, বলছেন তাঁরা

প্রত্যাশিত ভাবেই বুধবার সকাল থেকেই রোগীদের চূড়ান্ত হয়রানি ও বিক্ষোভের দৃশ্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। এনআরএস তো বটেই, আউটডোর বন্ধ এসএসকেএম, মেডিক্যাল কলেজেও। শুরু হয়ে গেল পথ অবরোধও।

এনআরএসে হামলা ও চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বারো ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন। অন্য দিকে, এনআরএসে হামলায় গুরুতর আহত জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের অবস্থা স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। অন্য জখম চিকিৎসক যশ টেকওয়ানিও আগের চেয়ে ভালো আছেন।

রোগীর পরিবারের লোকজন রাস্তা অবরোধ করায় কাজের দিন সকলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এসএসকেএম হাসপাতালের কাছে। দূরদূরান্ত থেকে কলকাতায় আসা রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকেরা আউটডোর ও ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে ভিড় করলেও কোনও দরজা তাঁদের জন্য খোলেনি। কেউ এসেছেন মালদা, কেউ সুন্দরবন, কেউ পুরুলিয়া থেকে। কারও আউটডোরে দেখানোর কথা, কেউ এসেছেন জরুরি বিভাগে। কিন্তু দরজা বন্ধ দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। তার পরেই তাঁরা বড় রাস্তায় গিয়ে কেউ শুয়ে পড়েন, কেউ বসে পড়েন। কয়েক মিনিটেই তা পথ অবরোধের আকার নেয়। তবে কিছুক্ষণ পরে তা উঠে যায়।

এসএসকেএমে এমনিতেই প্রচুর রোগীর ভিড় হয়। বুধবার হাসপাতালের ইমার্জেন্সির দরজাও বন্ধ থাকায়. এজেসি বোস রোড ও হরিশ মুখার্জি রোড অবরোধ করেন রোগীদের বাড়ির লোকেরা। পুলিশ হাতে গোনা, তাঁরা বিক্ষোভকারীদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। পুলিশের সাথে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ের রোগীর পরিবারের লোকেরা। মালদা থেকে আসা এক রোগীর পরিবারের লোকেরা বলেন, তাঁরা মন্ত্রী, বিধায়ককেও বলেছেন, কিন্তু দরজা খুলছে না। তাঁদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ যদিও এ দিনের কাজ বন্ধ করা নিয়ে নয়, সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে।

বুধবার মেডিক্যাল কলেজেও ছিল রোগীদের ভিড়. নটায় আউটডোর খুলবে না জেনেও রোগীদের ভিড় ছিল। এই আশায় যে যদি শেষ পর্যন্ত গেট খোলে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও ছিল অনিশ্চয়তার ছবি। আরএন টেগোর হাসপাতালে সকালের দিকে রোগী দেখেননি অনেক চিকিৎসক। তিন মাস আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েও দেখাতে পারেননি বলে অনেক রোগী অভিযোগ করেন।

জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও অশান্তির আঁচ মঙ্গলবার রাত থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্ন ও পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। হাতাহাতিও বেধে যায়। অভিযোগ, পুলিশের হাতে ইন্টার্নরা মার খেয়েছেন। অন্য দিকে, পুলিশের অভিযোগ, তাঁদের মেরেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। হাসপাতাল চত্বর থেকে পুলিশ ক্যাম্প তুলে নেওয়া হয়েছে।

জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে ব্যাপক ক্ষোভ আছড়ে পড়ল মেদিনীপুর মেডিক্যালে । সাতসকালেই হাসপাতালের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান রোগের পরিজনরা। অভিযোগ ডাক্তার না থাকায় একদিকে যেমন পাচ্ছেন না রোগীরা, ঠিক তেমনই মৃত রোগীদের ডেথ সার্টিফিকেটও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি চিকিৎসার স্বার্থে রোগীদের রেফার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ছে রোগীর পরিবার। ঘটনাস্থলে ইতিমধ্যে পৌঁছেছে মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানার পুলিশ, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে। গোটা রাজ্যেই চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও নানারকম হেনস্থা ছড়িয়ে পড়ছে। রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলেই তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.