মারণ করোনার দ্বিতীয় (Second Wave of Coronavirus) ঢেউয়ে কার্যত বেসামাল গোটাদেশ(India)। তারই মধ্যে অতিমারী (Pandemic) মোকাবিলায় কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে রীতিমত হতাশ ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন(IMA)।
শনিবার এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে আইএমএ(IMA) তরফে জানানো হয়েছে যে, “করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এরকম উদাসীন মনোভাব ও অনুপযুক্ত পদক্ষেপ দেখে আমরা সত্যিই স্তম্ভিত।”
এই বিষয়ে আইএমের আরও অভিযোগ, “বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কার্যত তুড়ি মেরে উরিয়ে ফেলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গ্রাউন্ড রিয়েলিটি না বুঝেই এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।”
দিন যতই যাচ্ছে ততই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে করোনা। এটির বাড়বাড়ন্তের প্রতিকার হিসেবে পূ্র্ণ লকডাউনের পক্ষেই সওয়াল করেছে আইএমএ।
আলাদা আলাদা রাজ্যে ১০-১৫ দিনের লকডাউন নয়, সুপরিকল্পিতভাবে হাতে সময় রেখেই দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা উচিত বলে তারা দাবি করছেন।
বিবৃতিতে তারা স্পষ্ট করে অভিযোগের তির কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই তুলেছেন। তাদের অভিযোগ , ‘তাঁদের প্রস্তাব সত্ত্বেও লকডাউন করেনি কেন্দ্র। প্রতিদিন ৪ লক্ষের বেশি মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে অনেক রোগীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
এমনকি দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন চরম সঙ্কট। এর জন্যও কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কার্যত তুলোধনা করেছে আইএমএ(IMA)। তাঁদের বক্তব্য, দেশে যথেষ্ট অক্সিজেন রয়েছে কিন্তু বিতরণে ভুল হচ্ছে।
তবে শুধু আইএমএ নয়,করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা নিয়ে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটের(The Lancet) সম্পাদকীয়। তাঁদের মতে, “করোনা বিপর্যয়ের সময় প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi) যেভাবে সমালোচনা দমনে উঠে-পরে লেগেছিলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।”
অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রকে অবিলম্বে কয়েক সপ্তাহের লকডাউনের(Lockdown) পরামর্শ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত(Supreme Court) । এছাড়াও দফায় দফায় নয়, একটানা বেশকিছু দিন সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করা হোক তার সপক্ষে সওয়াল করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল(Rahul Gandhi) গান্ধী সহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতা মন্ত্রীরা।
অন্যদিকে, মাঝে কিছুদিন আশার আলো জাগিয়ে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনার গ্রাফ। শনিবারের থেকে রবিবারের রিপোর্টে ফের বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা। এদিনও আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে ৪ লক্ষের উপরে। মৃত্যুর সংখ্যা এদিনও ৪ হাজারের উপর। তবে শনিবারের চেযে রবিবারের রিপোর্টে মৃতের সংখ্যা অল্প কম।
রবিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গোটা দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৪ লক্ষ ৩ হাজার ৭৩৮ জন। শনিবারের থেকে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার বেশি। শনিবার ৪ লক্ষ ১ হাজার ৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনার বলি হয়েছিলেন ৪ হাজার ১৮৭ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯২ জনের। এই নিয়ে পরপর ২ দিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজারের উপরে রইল। মৃত্যুর সংখ্যা এদিন খানিকটা কমেছে। তবে এদিন দৈনিক সুস্থতার হার বেড়েছে। যেখানে শনিবার ৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৬০৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন সেখানে রবিবার সুস্থ হয়েছেন ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৪৪ জন। এই মুহূর্তে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪১৪ জন। সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৪৮ জন। এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৪০৪ জন। দেশের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৬২ জনের। মোট ১৬ কোটি ৯৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬৬৩ জনকে এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে।