স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই, অনশন শুরু বাসিন্দাদের, চিকিৎসক দিবসেই

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটা অন্তত পুরো সময়ের ডাক্তার দিন। আর্জি শুধু এটুকুই। কিন্তু গত তিন দশক ধরে তাও শোনেননি কেউ। তাই দাবি আদায়ে আজ চিকিৎসক দিবসে আমরণ অনশনে বসলেন লোকনাথপুর ও ধওলাঝোড়ার দুই বাসিন্দা।

তুরতুরি লাগোয়া প্রায় ৫টি চা বাগান এলাকার ২৫ হাজার মানুষের ভরসা তুরতুরি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অথচ বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মিত নয়, মাঝেমধ্যে ডাক্তার বসেন এখানে। কখন ডাক্তারবাবু আসেন, অনেক সময় জানতেই পারেন না তাঁরা। ফলে দরকার পড়লে তাঁদের ছুটে যেতে হয় সেই ১৫ কিলোমিটার দূরের কামাখ্যাগুড়ি হাসপাতালে। সেখানেও সবরকম পরিষেবা মেলে না। তখন ভরসা ৫০ কিলোমিটার দূরের আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতাল। হত দরিদ্র চা শ্রমিকদের অধিকাংশেরই সে পথ উজিয়ে যাওয়ার আর্থিক ক্ষমতা নেই।

এলাকার মানুষরা জানান, তুরতুরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে শুধু ডাক্তার নেই, তাই নয়, মেলে না ওষুধও। পরীক্ষা নিরীক্ষারও কোনও ব্যবস্থা নেই। এমন কী লাগোয়া এলাকাতেও নেই কোনও বেসরকারি ল্যাব। কামাখ্যাগুড়ি হাসপাতালে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষার যেটুকু সুযোগ সুবিধা মেলে তাতে কাজ হলে ভাল, না হলে ঘরে বসে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করাই অধিকাংশ বাসিন্দার বিধিলিপি। তাই তুরতুরি হাসপাতালে অন্তত একজন সর্বক্ষণের ডাক্তারের জন্য প্রতীক্ষা করেন তাঁরা। বছরের পর বছর।

আজ সকাল থেকে তাই আমরণ অনশন শুরু করলেন লোকনাথপুরের বাসিন্দা শৈলেন্দ্র নার্জিনারি ও ধওলাঝোড়ার বাসিন্দা ভীম ছেত্রী। বললেন, “অনেক অপেক্ষা করেছি। একজন ডাক্তারের অভাবে এখানকার কত মানুষ প্রতিদিন সমস্যায় পড়ছেন, তা বোজাতে পারিনি কাউকে। তাই শেষপর্যন্ত আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নিলাম। যদি এতে সরকারের ঘুম ভাঙে।” তুরতুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রীনা মগর বলেন, এলাকার বাসিন্দাদের জন্য এই অনশন। আমরা তাই পাশে আছি।

জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, তুরতুরিতে কোনও হাসপাতাল নেই, রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তাই এখানে পুরো সময়ের কোনও ডাক্তার নেই। বাসিন্দাদের অসুবিধার কথা আমরা স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছি। স্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।

এ দিকে আজই কলকাতায় চিকিৎসক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে অনেকে বলেন, এখানে ডাক্তার নেই। কোথা থেকে পাব? এখনও প্রায় চার হাজার ডাক্তারের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের রাজ্যের ডাক্তার, যাঁরা বাইরের রাজ্যের প্র্যাকটিস করেন, তাঁদেরও এখানে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। তাহলে যদি এই সমস্যা মেটানো যায়।”

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে তাই কবে পুরো সময়ের ডাক্তার পাবে তুরতুরি, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.