মমতার স্পিডব্রেকার ব্যর্থ শিলিগুড়িতে জনসুনামি

সংখ্যাতত্ত্বে না গিয়ে এক কথায় বলা যায় গত ৩ এপ্রিল শিলিগুড়ির কাউয়াখালির ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভায় জনসুনামি আছড়ে পড়েছিল। অনেকেই বলছেন উচ্ছ্বাসে ও জনসমাগমে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ময়ানগুড়ির চূড়াভাণ্ডারে প্রধানমন্ত্রীর সভাকে ছাপিয়ে গেছে এই নির্বাচনী সভা। চূড়াভাণ্ডারে সভায় যাতে মানুষ আসতে না পারে তার জন্য সে সময় তৃণমূল ও প্রশাসন বিনিদ্র রজনী যাপন করেছে। গাড়ির মালিক, কর্মচারী থেকে শুরু করে আমজনতা সবাইকে মোদীর সভায় গেলে ভয়ংকর পরিণতির হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। এবার কাউয়াখালির সভায় জনসুনামি রুখে মাস্টার স্ট্রোক দিতে তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং হাজির হয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে। একই দিনে কোচবিহারের দিনহাটায় আয়োজন করেছিলেন নির্বাচনী জনসভার। মানুষের সমর্থন কার দিকে এটা প্রমাণ করে দেবেন বলে আগে থেকেই হুংকার দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু জনসভার দিন দেখা গেল ভিড় তো দূরের কথা, দলের সুপ্রিমোর উপস্থিতিতে তৃণমূলের পতাকাবাহী দুষ্কৃতীরা ভয় দেখিয়ে টাকা ছড়িয়েও মাঠ ভরাতে ব্যর্থ হলো। মাঠ ফাঁকা থাকার জন্য কোন কোন নেতার গর্দান যাবে সেটা দলের অন্দরমহলের লোকেরাই বলতে পারবে। তবে সভায় উপস্থিত মানুষ ও মিডিয়ায় যারা চোখ রেখেছেন তারা দেখছেন এদিন মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে নেত্রী এদিন গলার শিরা ফুলিয়ে নরেন্দ্র মোদীর মুণ্ডপাত করেছেন। অনেকেই বলছেন তৃণমূল নেত্রীর এদিনের ভাষণ কুকথার সেরা সংগ্রহ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর কাউয়াখালি নির্বাচনী জনসভায়। একদিকে ভিড়ের চাপে হাজার হাজার মানুষ ঢুকতে পারছে না, অন্যদিকে জল কম থাকায় মানুষ হেঁটে মহানন্দা পার হয়ে সভাস্থলে ঢুকছে। এক কথায় সভায় হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনার জন্য মানুষের উন্মাদনা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ব্যাপার। মোদী মোদী রবে সভাস্থল মুখরিত হয়েছে বারে বারে। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাজু আমাদের ঘরের ছেলে, আমার সঙ্গে ওর বহুদিনের সম্পর্ক। ওকে ভোট দিন। সারা বছর রাজু আপনাদের সঙ্গে থাকবে, আপনাদের কথা শুনবে।” প্রধানমন্ত্রী বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই রাজ্যে উন্নয়নের গতি রুদ্ধ হয়েছে। নেত্রীর সঙ্কীর্ণ রাজনীতির কারণে রাজ্যের মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে রয়েছে স্পিডব্রেকারের জন্য। রাজ্যবাসী যাকে দিদি বলে জানে তিনি আসলে স্পিডব্রেকার দিদি, কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে দেন না, সমস্ত কাজেই বাধা দেন। তাই স্পিডব্রেকার দিদিকে সরাতে হবে।
চিটফান্ডের মাধ্যমে আমজনতার টাকা লুট করা হয়েছে। দিদির দলের নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী, বিধায়করা গরিবের টাকা লুটেছেন।
গরিব সাধারণ মানুষের জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের মানুষ এই প্রকল্পে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেয়ে উপকৃত হয়েছে। কিন্তু স্পিডব্রেকার দিদি ব্রেক লাগিয়ে দিয়ে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকে রাজ্যে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
৪০ লক্ষেরও বেশি কৃষকের প্রাপ্য আটকে দিয়েছেন দিদি। কৃষক সম্মান যোজনায় ব্রেক লাগিয়ে সরাসরি রাজ্যের কৃষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছতে দেননি স্পিডব্রেকার দিদি।
দেশের প্রতিটি গ্রামে স্বচ্ছ ভারত যোজনার মাধ্যমে গরিব মানুষ শৌচালয় পেয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। লক্ষ লক্ষ গ্যাসের কানেকশন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প গুলিতে আরও মানুষ উপকৃত হতো কিন্তু দিদির বাধায় তা হয়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখানে এশিয়ান হাইওয়ে হয়েছে। রোড কানেকটিভিটি বেড়েছে। নতুন নতুন ট্রেন চালানো হয়েছে। জলপাইগুড়িতে সার্কিটবেঞ্চ চালু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জনজাতির উন্নয়নে নজর দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ভাবে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে। কোচ, রাজবংশী, জনজাতিদের উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোর্খা ভাই-বোনদের আশ্বস্ত করছি এনআরসির জন্য আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে অনুপ্রবেশকারীদের ছাড়া হবে না। আগে বামেরা যা করত, এখন দিনি তাই করছেন। বাম-কংগ্রেস- তৃণমূল একই থালায় খাচ্ছে। তৃণমূলে থেকে যারা ভয় দেখাচ্ছে, তাদের বলছি দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্য আমাদের সরকার অনেক কাজ করেছে। অসমে আমাদের সরকার রয়েছে বলে চা-শ্রমিকরা উপকৃত।
এই রাজ্যে জগাই-মাধাইয়ের দিন খতম হচ্ছে। এই বার আর কেউ ভোট আটকাতে পারবে না। স্পিডব্রেকার দিদি এর জবাব পাবে।
পুলওয়ামার বদলা বালাকোটে নিয়েছি। ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসবাদীদের মেরেছি। দেশবাসীর গর্ব হয়েছে। দিদির কান্না বেড়েছে। ইসলামাবাদ রাওয়ালপিন্ডির থেকে কলকাতার দিদির বেশি কষ্ট হয়েছে।
কংগ্রেস সেনাদের বিশ্বাস করে না। তাই বদলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বীর জওয়ানদের পরিবর্তে উপত্যকায় যারা পাথর ছুঁড়ছে তাদের হিরো বানাচ্ছে।

সাধন কুমার পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.