একুশের মঞ্চ হল তৃণমূলের রাজনীতির মঞ্চ। রবিবাসরীয় দুপুরে সেখান থেকেই তাঁর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কার্যত ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কোনও ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের হারে বেতন পাবেন না। অন্তত রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার থাকতে সেই আশা আপাতত আর নেই।
বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা ও পে কমিশনের দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বহু দিন ধরে আন্দোলন করছেন। এক প্রস্ত ডিএ সরকার ঘোষণা করেছে গত বছর। কিন্তু তাতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে ফারাক ঘোচেনি। সেই সঙ্গে পে কমিশনের সুপারিশ পেশ নিয়েও টালবাহানা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকী এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ও পে-কমিশনের সুপারিশ-কমিটির প্রধানের বক্তব্যে পরস্পর-বিরোধিতাও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অথচ ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যেও সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে।
রবিবার ধর্মতলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখনও সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের অন্দোলন পূর্ণ উদ্যমে চলছে। অনশনের দশ দিনের মাথাতেও চোয়াল ও মুঠো শক্ত করে রয়েছেন তাঁরা। মূল দাবি একটাই, কেন্দ্রের স্কেল অনুযায়ী প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টত বলেন, “যারা কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে চান, তারা কেন্দ্রে চলে যান। কেন্দ্রে চাকরি করলে কেন্দ্রের মতো (বেতন) পাবেন, রাজ্যে করলে রাজ্যের মতো।” পরে আবার তিনি বলেন, রাজ্যের অর্থ সঙ্কট রয়েছে। তা সত্ত্বেও ১২৩ শতাংশ ডিএ দিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের।
মুখ্যমন্ত্রী এ কথায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা যে হতাশ তা নিয়ে সংশয় নেই। এমনকী শাসক দলের কর্মচারী সংগঠনের নেতারাও অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাঁদের এক নেতা এ দিন ঘরোয়া আলোচনায় এও বলেন, এর পর তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠন ধরে রাখা যাবে না।
প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রীর কথার যদি এ হেন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কর্মচারীদের মনে, তা হলে তিনি বললেন কেন?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দিদি হয়তো বুঝে গিয়েছেন যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সন্তুষ্ট করার মতো আর্থিক সঙ্গতি তাঁর নেই। অল্প আধটু বাড়ালেও তাতে ওঁদের মন ভরবে না। এমনিতেই লোকসভা ভোটে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একটা বড় অংশ তৃণমূলকে ভোট দেয়নি বলে শাসক দলের নেতাদের ধারনা। কারণ, পোস্টাল ব্যালটের সিংহভাগ ভোট পড়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে।
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, দিদি হয়তো এও ভাবছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এক এক জনের বেতন বাড়াতে কোষাগারে যে ধাক্কা লাগবে, তার থেকে কম টাকা খরচ করে আরও জনমুখী তথা ‘পাইয়ে দেওয়া’র প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যেতে পারে। তাতে গ্রামের ভোট যদি তৃণমূলের দিকে ফেরে তা হলে মঙ্গল।