নির্বাচনের আগেই কুলতলিতে হদিশ মিলল অত্যাধুনিক অস্ত্র কারখানার। কুলতলির কুন্দখালি –গোদাবর পঞ্চায়েতের নাপিত খালি এলাকায় প্রত্যন্ত গ্রামে এমব্রয়ডারি মেশিনে শাড়ি ও পোশাকে নক্সা তৈরির আড়ালে চলত অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি। লোকসভা ভোটের আগে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কুলতলি থানার পুলিশ ও বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশান গ্রুপের পুলিশকর্মীরা এই বাড়িতে হানা দিয়েই প্রচুর অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় ৬৫ বছরের বৃদ্ধ বাবা আব্দুল কাহার লস্কর ও ৩২ বছরের ছেলে আব্দুল রউফ লস্করকে।

ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩টে সিঙ্গেল ব্যারেল লং পাইপগান, ৩ টে একনলা বন্দুক, ২ টি অসম্পূর্ণ বন্দুক, ১৪৬ রাউন্ড কার্তুজ, ৫৫ রাউন্ড খালি গুলির খোল, ৬ টি ছোট পাইপগান ও ১৮ টি ছোট পাইপগান তৈরির ব্যারেল, দুটি বন্দুকের বাঁট, ২ টি ড্রিল মেশিন, ২ টি পালিশের মেশিন, ১ টি লেদ মেশিন, একটি হ্যাক্স ব্লেড, হাতুড়ি, দুটি মোবাইল ফোন। ধৃতদের মঙ্গলবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আরও অস্ত্রের সন্ধানে তল্লাশি চালানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। একই সাথে দেখা হবে কোথায় এবং কার কাছে এই বেআইনি অস্ত্র যেত। লোকসভা ভোটের আগে এই বিশাল পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় খুশি পুলিশ কর্মী ও স্থানীয় মানুষজন।

মঙ্গলবার ভোরে গোপন সুত্রে খবর পেয়ে বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খানের নির্দেশে বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশান গ্রুপের ওসি লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাসের নেতৃত্বে ও কুলতলি থানার ওসি অর্ধেন্দু শেখর দে সরকারের নেতৃত্বে কুলতলি থানার পুলিশ যৌথ তল্লাশি চালিয়ে কুলতলির এই প্রত্যন্ত গ্রামে হানা দেয়। প্রচুর অস্ত্র উদ্ধারের পর বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বারুইপুরের জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করেন। গোপন সুত্রে পুলিশ খবর পায় কুলতলিতে বেআইনি অস্ত্র নির্মাণ হচ্ছে। আব্দুল কাহার লস্কর ও তার ছেলে আব্দুল রউফ লস্কর দুই বছর ধরে এই কারবার চালাচ্ছিল। মেশিন দিয়ে শাড়ির নক্সা করার আড়ালে এই কাজ করতো তারা। এত জোরে মেশিনের শব্দ হত বাইরে থেকে বোঝা যেত না ভেতরে অস্ত্র তৈরি হচ্ছে না অন্যকিছু হচ্ছে। ঘরে ৬ টি এমব্রয়ডারি মেশিন ছিল। ঘরের ভেতরে অন্য জিনিসের আড়ালে কাঁচের জারে তুলো দিয়ে কার্তুজ রাখা হত। বিহারের মুঙ্গের থেকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম আসতো বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। বাবা অস্ত্র তৈরি করতো আর ছেলের মাধ্যমে তা পৌঁছে যেত জয়নগর, কুলতলি সহ ক্যানিংয়ের গোলাবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায়। এই বেআইনি অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করে মোটা টাকায় তা বাইরে বিক্রি করা হত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.