১৯১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথের বিখ্যাত বই ‘বাংলার ব্রত’। বাংলার নানান স্থান থেকে ব্রতের আলপনার নানান নকশা সংগ্রহ করে এই বইটিতে পরিবেশন করেছেন তিনি, বৃদ্ধি করেছেন তার সৌকর্য।

বইটির গুরুত্ব এই কারণেই, এর মধ্যে ধরা পড়েছে তাঁর স্বদেশানুরাগ এবং সনাতনী লোকসংস্কৃতির প্রতি এক গভীর ভালোবাসা। এই বইটি লেখার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তার কুড়ি-বাইশ বছর আগে থেকেই বাংলার ছেলে-ভুলানি ছড়া আর মেয়েলি ব্রত সংগ্রহ করতে শুরু করে তাঁর লোকায়ত ভাবনাকে রূপ দিতে শুরু করেছেন। পিতৃব্যের এই কর্মনিষ্ঠায় প্রেরণা পেলেন অবনীন্দ্রনাথ। এটাই হচ্ছে ‘বাংলার ব্রত’ বইটি লেখার প্রেক্ষাপট। অর্থাৎ রাবীন্দ্রিক স্বদেশভাবনা এবং স্বদেশীয় সংস্কৃতির প্রতি এক নিখাদ মানবিক টান থেকেই বাংলার ব্রতের প্রতি আকর্ষিত হলেন তিনি।

সমগ্র ভারত, সমগ্র বাংলা জুড়ে সনাতনী সংস্কৃতির এক অবক্ষয়িত পরিবেশ ক্রমাগত বাড়ছিল; বাড়ছিল ধর্মীয় আগ্রাসন; বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছিল বাংলার ব্রতকথা, তার নানান চিত্র-রসদ, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রিক পথে তা রুখে দিলেন অবনীন্দ্রনাথ। এ যে কতবড় সাংস্কৃতিক অবলুপ্তিকে রোধ, তা একসময় বিচার ধারায় আলোচিত হবে।

লোকসংস্কৃতির প্রতি তন্বিষ্ট হয়ে ইউরোপীয় স্বদেশভাবনার এই পথ দেখায় ফিনল্যান্ড; অথচ বাংলা জুড়েই ছিল তার সীমাহীন প্রকাশ। বাংলার মায়েরা, মেয়েরা এ ভাবেই দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অন্বিত থাকতেন। হিন্দু সনাতনী গৃহবধূর আপনার মানসে জন্মানো মৌখিক সাহিত্যের মধ্যে যে সীমাহীন মণিমাণিক্য রয়েছে, তার খোঁজ করতে শুরু করে দিলেন রবীন্দ্রনাথ এবং অবশ্যই অবনীন্দ্রনাথ।

‘বাংলার ব্রত’ বইটি তারই আনুপূর্বিক ইতিহাস-চেতনা।

(আজ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে প্রস্তুত শ্রদ্ধার্ঘ্য, ৭ আগষ্ট)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.