বাংলায় ভোটের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল রাতারাতি।
বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে কমিশনের তরফে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য মুখ্য নির্বাচন অফিসারের কাজে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তিনি চিঠি লিখে মুখ্য নির্বাচন অফিসারকে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। তাঁর পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রসচিব পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন অফিসার আরিজ আফতাবকে চিঠি লিখে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী বাংলার পরিস্থিতি বোঝে না। তাদের সঙ্গে রাজ্য পুলিশ দেওয়া হোক। বিশেষ করে কুইক রিঅ্যাকশন টিমের সঙ্গে রাজ্য পুলিশ না দিলে সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে কোথাও কোথাও নিগৃহীত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
অত্রি ভট্টাচার্যের চিঠির পরই বিরোধীরা পাল্টা অভিযোগ করে বলেছিলেন, আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশ দিয়ে আসলে বিভ্রান্তির পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে রাজ্য। রাজ্য পুলিশের অধিকাংশ অফিসারই সরকারের পেটোয়া। ফলে তাতে হিতে বিপরীত হবে।
পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করানোর জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশন এ বার গোড়া থেকেই বদ্ধপরিকর। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরই পরই কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার বদল করেছিল কমিশন। সেই সঙ্গে ডায়মন্ডহারবার ও কোচবিহারের পুলিশ সুপারও বদল করা হয়।
তাতে প্রচণ্ড ক্ষেপে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে। রাজনৈতিক প্রভু যেমন যেমন নির্দেশ দিচ্ছে তেমন তেমন ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন। মমতার সেই চিঠির জবাবও দিয়েছিলেন কমিশনের কর্তারা।
তবে গোড়ার দিকে এই প্রবল চাপানউতোরের পর পরিস্থিতি সাময়িক ভাবে কিছুটা শান্ত ছিল ঠিকই। কিন্তু নবান্নের শীর্ষ সূত্রের দাবি এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে ফোন করে একদিন বলেন, আর কোনও অফিসার যদি বদল করা হয়, তা হলে তিনি পদত্যাগ করে দেবেন। নির্বাচন কমিশনার সরকার চালাক।
কিন্তু তার পরেও কমিশনের এই পদক্ষেপ সংঘাতের বাতাবরণকে যে আরও তীব্র করে দিল সংশয় নেই। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দর্শন অন্যরকম। চাপের মুখে আরও ক্ষীপ্র, আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সে ভাবেই ঘোরানোর চেষ্টা করেন তিনি। মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন। ফলে কমিশনের এই সিদ্ধান্তের পর তিনি এখন কী করবেন, গোটা রাজ্য তথা দেশের কৌতূহল এখন সেটাই।
তবে তার আগে তৃণমূলের নেতারা বলছেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে বিজেপি যে চাপে পড়েছিল তার থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই কমিশন এই পদক্ষেপ করেছে। তাঁদের অভিযোগ বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে কমিশন।