ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থামছেই না। এক বছর হয়ে গিয়েছে, ভারত-সহ গোটা বিশ্বে এখনও তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে কোভিড-১৯ ভাইরাস। ভারতে শীতের মরশুমে করোনা-সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজধানী দিল্লি। দিল্লির মতোই সংক্রমণ বাড়ছে দেশের অন্যান্য রাজ্যেও। রাজ্যগুলি হল— ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, কেরল, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ। পূর্ব পরিকল্পনা মতোই মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে করোনা-সম্পর্কিত বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারায় বিজয়ন এবং ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ অন্য মন্ত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শেষ প্রধানমন্ত্রী জানান, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগের কারণেই, সুস্থতা এবং মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো স্থানে রয়েছে ভারত। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে পিএম-কেয়ার্স-এরও। পিএম কেয়ার্স-এর সহায়তায় হাজার-হাজার নতুন ভেন্টিলেটর উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। এ জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটর উপলব্ধ করার ক্ষেত্রেও মনোনিবেশ রয়েছে। আমরা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা হাসপাতালগুলিকে অক্সিজেন জেনারেশনের ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। দেশে ১৬০টিরও বেশি অক্সিজেন উৎপাদনের প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রচেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুস্থতার হার দেখে অনেকেই মনে করেছেন, ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তাঁরা শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এজন্যই ব্যাপক অসতর্কতা দেখা দিয়েছে। যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা নিজেদের কাজ করছেন। মানুষজনকে সতর্ক হতে হবে এবং সংক্রমণ রুখতে হবে। পজিটিভিটিটি রেট ৫ শতাংশের নীচে আনতে হবে আমাদের। সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ভ্যাকসিন বিতরণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, রাজ্যের সঙ্গে সম্মিলিত সমন্বয় করে ভ্যাকসিন বিতরণ কৌশল তৈরি করা হবে। রাজ্যগুলিরও উচিত কোল্ড স্টোরেজ সুবিধাগুলি শুরু করা। ভাক্সিনকে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলির কী পরিকল্পনা রয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা পাঠান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিনের বিষয়ে ভারতের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা বিশ্বের বড় বড় দেশেরও নেই। আমাদের কাছে স্পিড যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি সুরক্ষা। ১৩০ কোটি দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুরু থেকেই প্রাণ বাঁচানোকেই প্রাথমিকতা দিয়েছি আমরা। এখন ভ্যাকসিন আসার পরও, সকলের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়াই আমাদের প্রাথমিকতা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশ ও আন্তর্জাতিক স্তরে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি হওয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যদিও, সমস্ত সম্ভাবনার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বৈঠক মোদী-মমতার কথাপূর্ব পরিকল্পনা মতো মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর সরকার কেন্দ্র এবং অন্য সংস্থাগুলিকে সবরকম সহযোগিতা করবে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার করোনা টিকা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ‘‘টিকা পেলেই দ্রুত যাতে তার বন্টন হয়, তার জন্য আমরা কেন্দ্র এবং অন্য সব সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত।’’ পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, টিকা রাখার জন্য কোল্ড চেইন-সহ যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা রাজ্যের রয়েছে। তবে ওই বৈঠকে রাজ্যের ‘বকেয়া অর্থ’ দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন মমতা। বৈঠকে মমতা স্মরণ করিয়ে দেন, দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছটপুজো এবং তার সঙ্গে শহরতলিতে ট্রেন চালানোর পর যে ভাবে করোনার প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে রাজ্য। সেই সঙ্গেই তিনি মোদীকে জানান, বাংলায় কোভিড সংক্রামিত রোগীর সংখ্যার হার এবং মৃত্যু হারও কমেছে।
কেজরিওয়াল-মোদী কথা করোনার পাশাপাশি বায়ুদূষণেও নাজেহাল রাজধানী দিল্লি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে পার্শ্ববর্তী রাজ্যে খড় পোড়ানো বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন কেজরিওয়াল। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে কেজরিওয়াল জানান, গত ১০ নভেম্বর দৈনিক ৮,৬০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন দিল্লিতে। তারপর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে।
খাট্টার-মোদী কথা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার জানিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানকারীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
রূপানি-মোদী কথা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্য কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে পুলিশ কর্মী, স্যানিটাইজেশন কর্মীদের। তৃতীয় পর্যায়ে ৫০ বছরের উর্ধ্বে মানুষজনকে এবং চতুর্থ পর্যায়ে কো মর্বিডিটিদের।