এক চৈত্রমাস। আমি তখন পিএইচডি (Ph.D.) কাজের জন্য সার্ভেতে গিয়েছিলাম বারুইপুরের (Baruipur) এক আম বাগানে। পুরনো বাগান, চারপাশ থেকে বেশ কিছু বুনোলতা গাছ বেয়ে উঠেছে উপরে। বাগানী গাছ বেয়ে ওঠা একটি লতা থেকে কিছু সবুজ ফুলের কুঁড়ি পেড়ে এনে আমায় দেখালেন। বললেন, চেনেন এরে? বললাম, না তো!
“এই ফুলেরে আমরা খাই শুক্তো রেঁধে।”
তাই নাকি? কেমন খেতে?
“বেশ তিতো; উচ্ছের বদলি দিই, সঙ্গে ছোটো করে কেটে নিই সজনে ডাঁটা, বেগুন, কাঁচকলা, সামান্য আলু। ফাল্গুনের শেষ, চৈত্র বৈশাখে ফুল ফোটে যুক্তি লতায়। দক্ষিণ ২৪ পরগণায় (South 24 Parganas) এই সময় খাওয়া হয় গো। গড়িয়া, সোনারপুর, বারুইপুর, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর বাজার-হাটে খোঁজ করলে পাবেন।
সেদিন খানিক যুক্তি ফুল আমায় দিলেন তিনি শুক্তো রেঁধে খাবার জন্য।
উপকার শুনবো কী, আমি তো লতার ফুলের রূপে মুগ্ধ! অদ্ভুত সুন্দর থোকা থোকা ফুল। বোটানিক্যাল নাম Dregea volubilis,এটি Apocynaceae (অ্যাপোসাইনেসী) গোত্রের একটি লতা। যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে লোকসমাজ দীর্ঘদিন যুক্তি ফুলের ব্যঞ্জন রেঁধে খেতে দেখা যায়। ভারতবর্ষই এর আদি নিবাস। তামিলনাড়ু, কেরালাতেও দেখা যায়। ক্রান্তীয় এক উদ্ভিদ লতা। লোকবিশ্বাস এই ফুলের তরকারি খেলে চোত-বোশেখের নানান মরশুমি রোগ-ব্যাধি থেকে রেহাই মেলে। বসন্ত রোগ, জন্ডিস রোগ থেকে রেহাই পেতেও যুক্তিফুল খাওয়া হয়, এমনটাই জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নানান চর্মরোগের হাত থেকে রেহাই পেতেও অল্প তেলে যুক্তি ফুল ভাজা ও শুক্তো খাওয়ার রেওয়াজ আছে।