বাংলা ক্যালেন্ডারে নববর্ষ আসে বসন্তের শেষে। গ্রীষ্মের আগমনে আনন্দ-বেদনার ধারাবাহিকতা নিয়েই হয় বাঙালির বর্ষবরণ। চৈত্রের চিতাভস্ম উড়িয়ে আসে পয়লা বৈশাখ ১৪/১৫ই এপ্রিল। কবি অক্ষয়কুমার বড়াল নববর্ষ কবিতা লিখেছেন
‘সমীর শিখরে বিহগ কুহরে তটিনী শুধায়ে পড়িছে লুটে
আকাশের ভালে মেঘের আড়ালে সোনামুখী উষা উঠেছে ফুটে’
প্রকৃতপক্ষে নববর্ষের কাছে মানুষের অসীম আশা, নববর্ষকে কেন্দ্র করে মানুষ উদ্দজীবিত হতে চায়। নববর্ষ নামক এক বৎসরের সন্ধিক্ষণে মানুষ তার মন বীণায় বাঁধতে চায় নতুন তার। অতীতের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা স্মৃতি অভিজ্ঞতা নিয়ে শুরু হয় তার নতুন জীবন নতুন অঙ্গীকার নতুন বছরের সাথে।


কিছু অতীত দিনের ভুলের ফর্দ আমাদের পীড়িত করে, আমাদের কুড়েকুড়ে খায়। এখনো যদি আমরা অতীত চায়ী না হই, নিজের সমাজের, রাষ্ট্রের কৃতকর্ম অন্যায়গুলোর সংশোধন না করি তবে আগামী নববর্ষ আমাদের ক্ষমা করবেনা। সমৃদ্ধশালি ভারত (India) , কুশল রাজ্য বাংলা ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা সোনার বাংলা যদি নির্মাণ করতে হয় তবে অতীত চারণ করে অতীতের ভুল ভ্রান্তিকে ক্ষমাহীন ভাবে সংশোধন করে, বাংলাতে যতটুকু আলো এখনো আছে সেই নিভন্ত বাতিতে সত্যের ছটা দিয়ে পুনরায় আলোকিত করার নামই হোক নববর্ষ। বাঙালির বর্ষপঞ্জিতে সনাতনী সংস্কৃতির মেলবন্ধনের দিন হয়ে উঠুক বর্ষবরণের হিন্দু মিলন মঞ্চ। সনাতন বিরোধী একটি জগদ্দল পাথর প্রায় চার দশক ধরে বাংলাকে করেছিল অন্ধকার মন্ডিত। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ভুলে গিয়েছিল বাঙালি। ভারতকেশরী বঙ্গসন্তান শ্যামাপ্ৰসাদ মুখার্জিকে (Shyamapasad Mukherjee) প্রাণত্যাগ করতে হয়েছিল সুদূর কাশ্মীরের বধ্যভূমিতে সেদিনও নিরব ছিল বাঙালি, কিন্তু আর কত?
মধ্যযুগের শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব প্রেমলীলা প্লাবিত স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) সমাজ দর্শন সম্মত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত সমাজ ভাবনা থেকে বিচ্যুত হয়ে আমরা তলিয়ে গেছি বিভ্রান্তির অতল গহবরে। আমাদের বঙ্গাব্দ গণনা নিয়ে যে ভ্রান্ত ইতিহাস চলে আসছে তা বিজাতীয়দের লিখিত, তাদের সুবিধামতো এবং জোর করে চাপিয়ে দেওয়া। আমাদের দুর্ভাগ্যের এখানেই শেষ নয়, সেক্যুলার চাটুকার সনাতন বিরোধীদের অন্ধকারের ছায়া বাংলাকে করে রেখেছিল আচ্ছন্ন আমরা এখনো তার ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারেননি নকল প্রিয় দুর্বল চিত্ত, ভাতঘুমে থাকা বাঙালির চোখের পর্দা খুলে দিয়ে আজ সময় এসেছে সত্য উদঘাটনের, তা না হলে আমরা আগামী দিনের ইতিহাসের কাছে অপরাধী থেকে যাবো।


বঙ্গাব্দ ঠিক কখন শুরু হয়েছিল? কথিত ইতিহাস মানলে সম্রাট আকবর (Akbar) সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে শুরু হয় বঙ্গাব্দ। সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসে ছিলেন ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মাঘ মাস, কিন্তু কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চন্ডীমঙ্গল কাব্যের সময় থেকেই আমরা বৈশাখ কেন্দ্রিক বারোমাস্যা পাই। বাংলা বারোমাসের ছড়াতে তারই প্রভাব।
“চৈত্র মাসে বাসন্তী পূজার ধুমধাম বেশ
বৈশাখ মাসে বছর আরম্ভ চৈত্রেতে শেষ।।”

অতএব আমাদের নববর্ষ পয়লা বৈশাখ ১৪-১৫ এপ্রিল এর সাথে তা কোনমতেই মিলছে না। দ্বিতীয়তঃ আকবর আশেপাশের সমস্ত রাজ্য ছেড়ে সেই সুদূর বাংলায় এসে হঠাৎ বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন কেন? তার কারণ হিসেবে বলা হয়, ফসল ওঠাবার সময় জানতে এবং খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য আকবর এই সিদ্ধান্ত নেন আরও বলা হয় হিজরী ৯৬৩ সালের সাথে মিল রেখে ওই সালকেই ৯৬৩ হিসেবে ঘোষণা করে বাংলা সন চালু করা হয়।


এবার আসা যাক যুক্তিতে। সিংহাসন আরোহণের সময় আকবরের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। ওই বয়সের একজন নতুন রাজার পক্ষে এতগুলো রাজ্য পেরিয়ে এই বাংলায় এসে কি নতুন বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করা সম্ভব? খাজনা আদায়ের সুবিধা বা ফসল তোলার সাথে সঙ্গতি রেখে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া তো দূরের কথা, ১৩ বছরের সদ্য সম্রাটের পক্ষে সম্ভব না একথা বুঝিয়ে বলতে হয় না। এবার দেখা যাক বাংলা সনের প্রবর্তক হিসাবে তারই আমলে রচিত ইতিহাস তাকে কতটা স্বীকৃতি দেয়। ‘আইন-ই-আকবরী’ নামে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে তারই সভাসদ আবুল ফজল দ্বারা রচিত একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থে আছে, তাতে কিন্তু কোথাও বাংলা সনের কোন উল্লেখ নেই। তবে আকবর ১০৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইরানে প্রচলিত ‘জেলালি সৌর পঞ্জিকা’র অনুসরণে ভারতে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে ‘তারিখ-ই-ইলাহী’ নামের একটি সৌর পঞ্জিকা চালু করেছিলেন। এই সৌর পঞ্জিকার প্রচলন অনেক বেশি যুক্তি সঙ্গত। কারণ ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছুদিন রাজ্য পরিচালনা করেছেন এবং আরবি হিজরী সনের অবাস্তবতা থেকে একটি সৌর পঞ্জিকার প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে।


কারণ আকবর বুঝতে পেরেছিলেন যে ইসলামের নবী, বিজ্ঞানের বিজ্ঞানী মুহাম্মদ এবং তার অনুসারী খলিফা কর্তৃক প্রবর্তিত হিজরী মাসের কোন জন্মপরিচয় ঠিক ঠিকানা নেই। হিজরী ক্যালেন্ডার মুসলমানদের রমজান মাস এবং ঈদের দিন ঠিক করা ছাড়া আর কোন কাজে লাগে না।
এছাড়া এই সময়ের পূর্বে ইরান থেকে নুরজাহানের পিতা আকবরের সভায় এই সময় এসে পড়েছিলেন, অতএব তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘ইরানি সৌর পঞ্জিকা’ এবং তার কার্যকারিতা জেনে একটি নতুন সৌর পঞ্জিকার প্রবর্তন অসম্ভব ছিল না। কিন্তু কয়েক দশক পর এই তারিখ-ই-ইলাহী-র ব্যবহার মুখ থুবড়ে পরে এই ঘটনার উল্লেখ আইন-ই-আকবরীতে আছে। এইবার একটু তুলনামূলক আলোচনায় যাওয়া যাক ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সম্রাট আকবরের রাজ্যাভিষেকের দিন থেকেই হিজরী ৯৬৩, বঙ্গাব্দের প্রথম বছর ধরে আমির ফতেউল্লাহ নিয়াজির প্রচেষ্টায় বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন শুরু হয়। এই যুক্তি অনুসারে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগে কোন বঙ্গাব্দ ছিল না। কিন্তু বাঁকুড়ার দিহারি গ্রামে অতি প্রাচীন একটি শিব মন্দিরে ১০২ বঙ্গাব্দের উল্লেখ আছে কি করে? আরও একটি প্রাচীন শিব মন্দির এর প্রতিষ্ঠা ফলকেও আমরা বঙ্গাব্দের উল্লেখ পাই নীতিশ সেনগুপ্তের লেখা ‘Land of Two Rivers: A History of Bengal from Mahabharata to Mujib’ বইটিতে। বৃন্দাবনচন্দ্র পুততুন্ড রচিত ‘চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস’ গ্রন্থেও ৫০৬ বঙ্গাব্দের উল্লেখ আছে। পাণ্ডুলিপি পুরাতত্ত্ব গবেষকদের মতে ষোড়শ শতাব্দী পূর্ব পাণ্ডুলিপিতে অনেক স্থানেই শকাব্দ এবং বঙ্গাব্দের সুস্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়। কোন ঘটনার আগে সেই বিষয়ে কোনো কথাবার্তা ইতিহাসে থাকে না একথা পাগলেও জানে। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে যদি বঙ্গাব্দ চালু হয় তাহলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গ্রন্থে পান্ডুলিপিতে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ফলকে কি করে বঙ্গাব্দের সন তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায়?
তাছাড়া পৃথিবীর সকল সাল ক্যালেন্ডার তৈরি হয় পহেলা তারিখ থেকে। তাহলে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে অনুযায়ী ৯৬৩ হিজরী সালকে ভিত্তি করে বাংলা সন চালু হয়ে গেল কেন? আরো বড় প্রশ্ন এক থেকে শুরু না হয় সেটা ৯৬৩ থেকে শুরু হবে কেন? বাংলার বারো মাসের অধীনের নামগুলি এসেছে ভারতীয় জ্যোতিষ বিজ্ঞানে ব্যবহৃত গ্রহ নক্ষত্রের নাম থেকে। এইসব নামগুলো যদি আকবরের সময় থেকেই প্রচলিত হয় তবে মহাভারতে মহর্ষি জেমিনি এবং পরবর্তীকালে বরাহমিহির খনার মতো বিখ্যাত জ্যোতিষীগণ কিভাবে এবং কোন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাদের হিসেব নিকেশ করতেন? এবারে নোবেল প্রাইজ জয়ী বাঙালি, পরজীবি, পরদেশবাসী শ্রীযুক্ত মাননীয় অমর্ত্য সেন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন আকবর প্রতিষ্ঠিত বঙ্গাব্দ কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেই অতি বুদ্ধিমান পরদেশবাসীকে আমার বিনীত প্রশ্ন, আকবর সমগ্র ভারতের সম্রাট ছিলেন না শুধু বাংলার সম্রাট ছিলেন? ফসল শুধু বাংলাতেই হত না সমগ্র ভারতে হত? তাহলে সমগ্র ভারতের সম্রাট বাংলার জন্যই সন তৈরি করতে যাবেন কেন? অন্য রাজ্যগুলি পাশের দেশ পাঞ্জাব আর হরিয়ানা এবং অন্যান্য রাজ্যে কি ফসল হত না ? নাকি তিনি সেখানকার খাজনা নিতেন না?
তাহলে সত্যটা কি? মুসলমানদের মিথ্যার ধ্বংসস্তূপে এতদিন চাপা পড়ে থাকা বাঙালির নববর্ষ নিয়ে এবার আমরা চলি সত্যের সন্ধানে। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের কিছু সময়ে বাংলা তথা গৌড়ের রাজা ছিলেন শশাঙ্ক তিনি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অসাধারণ সামন্ত রাজা থেকে নিজের দূরদর্শিতা এবং বাংলার ছোট ছোট জনপদগুলো করে নিজেকে বাংলা তথা গৌড়ের রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসন আরোহন করেন
হিন্দু রাজা শশাঙ্ক ছিলেন কট্টর শৈব। এই ব্যাপারে শ্রী সুনীল কুমার বন্দোপাধ্যায় ‘বঙ্গাব্দের উৎস কথা’ শীর্ষক একটি পুস্তিকায় বলেছেন সৌর বিজ্ঞানভিত্তিক গাণিতিক হিসেবে ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ এপ্রিল সোমবার সূর্যোদয় কালই বঙ্গাব্দের আদি বিন্দু। শৈবদের জন্য পরম পবিত্র সোমবার রাজা শশাঙ্ক তার রাজ্যাভিষেকের শুভ দিনকে অক্ষয় করবার জন্য এবং বঙ্গাব্দ সূচনার জন্য নির্ধারণ করবেন এটাই সর্বজন গ্রহণযোগ্য এবং স্বাভাবিক। বহুভাষাবিদ রহমতউল্লাহ বাঙালি তার ‘বঙ্গাব্দে জন্মকথা’ গ্রন্থেও ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গাব্দের সূচনা এবং রাজা শশাঙ্কই বঙ্গাব্দের প্রবর্তক বলে মত প্রকাশ করেছেন। সেই ১২ এপ্রিল বারবার সংস্কারের ফলে আজ ১৪ই এপ্রিল এসে দাঁড়িয়েছে। নিন্দুকরা প্রশ্ন তুলতে পারে সপ্তাহের সাত দিন এবং মাসের নামগুলি দিয়ে যে বাংলা ক্যালেন্ডার তা তিনি পেলেন কোথায়?
তর্কবিদরা তার উত্তর দিয়েছেন। ভারতের জ্যোতিষ বিজ্ঞানে দেওয়া বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্রের নাম থেকেই সপ্তাহের সাতদিন এবং মাসের নামগুলি নেওয়া। বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশ তাদের নিজের ভাষায় এই নামগুলি ব্যবহার করে আসছে। আর্য সভ্যতা পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন সভ্যতা এবং পৃথিবীর সবলোক যে একসময় সনাতনী ছিল, এটি তার একটি প্রমাণ। বারো মাসের হিসেব জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি অপরিহার্য অংশ এবং জ্যোতিষশাস্ত্র হল বেদের একটি অংশ, বেদ রচিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় আট থেকে দশ হাজার বছর পূর্বে, আর্য সভ্যতা এবং তার পরবর্তী লোকেরা যে তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত দিনও বর্ষ গণনা পদ্ধতি ব্যবহার করত তার বহু প্রমাণ আর্য সভ্যতার দুই প্রাচীন গ্রন্থ বা মহাকাব্য রামায়ণ মহাভারত থেকে পাওয়া যায়।


উদাহরণস্বরূপ পুরুষোত্তম রামচন্দ্রের জন্মদিন উপলক্ষে আমরা রামনবমী পালন করি যা বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরে চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষে নবমী তিথি তা প্রায় ৭১০০ বছর আগের, জন্মের সময় যদি দিন,মাসের হিসাব না থাকতো তবে এতদিন ধরে এই দিনটাকে আমরা কিভাবে রামনবমী হিসেবে চিহ্নিত করি?
১৪ বছর রামচন্দ্রের বনবাস সময়ে ১৩ বছর রাবণ কর্তৃক সীতার অপহরণ চৌদ্দ বৎসরান্তে রাবণ বধের পর তাদের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের দিনটিকে অযোধ্যা বাসীরা দীপমালা ও আলোক শয্যার দ্বারা তাদের প্রত্যাবর্তনকে অভিনন্দিত করেছিল আজও আমরা সেদিনকে দীপাবলি হিসেবে মান্যতা দেই
মহাভারতেও এমন ভুরি ভুরি নিদর্শন আছে পঞ্চপান্ডব এর বারো বছর বনবাস এক বছর অজ্ঞাতবাস মোট ১৩ বছর অতিক্রান্ত হলে বিরাট রাজার পক্ষে যুদ্ধকালীন দুর্যোধন কর্তৃক ছদ্দবেশী পঞ্চপান্ডবের পরিচয় প্রকাশ এবং যার ফলস্বরূপ ছিল মহাভারতের যুদ্ধ।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন পালন করা হয় কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে। দিন মাস বছর হিসাব না থাকলে অদ্যাবধি কিভাবে তা প্রচলিত হয়ে আসছে? রাজা শশাঙ্ক (Shashanka) তাঁর সিংহাসন আরোহণের দিনটিকে স্মরণীয় করার জন্য সুদূর বেদের যুগ থেকে প্রচলিত দিন মাস বছর হিসাবকে ভিত্তি করে বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। অতএব এই হিন্দু বর্ষ গণনা রীতি যে কত প্রাচীন হিন্দু সনাতনী প্রথা,কতযে সমৃদ্ধ তা একান্তভাবে যুক্তিগ্রাহ্য। মননশীল হিন্দু, আবেগ প্লাবিত হিন্দু যুগে যুগে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ এ বিশ্বাসী হিন্দু বারবার প্রতারিত, পরাস্ত, পদানত হয়ে আজও তাদের শিক্ষা হয়নি। সর্বভূতে দেবোপম বিশ্বাসে আজও তারা আঁকড়ে আছে এমন অনেক মিথ্যাকে। কিন্তু এবার সময় এসেছে সত্যকে উজাগর করে সগৌরবে এই ঐতিহ্যময় ইতিহাস সবার সামনে নিয়ে আসার। নববর্ষ বাঙালির বর্ষবরণ বাংলা জীবনের এক আনন্দময় অধ্যায়। তার কৃতিত্ব কিছুতেই আমরা কোন বিজাতীয় মুসলমান বা কোন পর দেশবাসী নোবেলজয়ীর কাছে বিকিয়ে দেব না। বাংলা যেন নিজের সনাতনী শক্তিকে চিনে নিয়ে আবার ভারত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করতে পারে। বাংলার আকাশ নির্মল হোক, কালবৈশাখীর পিনাকের ঠ্যংকারে মিথ্যার বাঁধ ভেঙে সত্যের বিজয় রথ নেমে আসুক বাংলার বুকে।

মিতালি মুখোপাধ্যায় (Mitali Mukherjee)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.