সোমবার জঙ্গলমহল তথা সমগ্র ছোটনাগপুরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাতু পূজা বা ছাতু সংক্রান্তি পালিত হয়েছে। আদিবাসীরা মূলত প্রকৃতির পূজারী। কুড়মি তথা সমগ্ৰ আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব হল এই ছাতু সংক্রান্তি বা ছাতু পরব।
এই উৎসবে নিজ নিজ বাড়িতে বা দেশওয়ালী ভাবে কাঁচা শাল পাতায় ছাতু, গুড়, আম, ধূপ, দ্বীপ, শঙ্খধ্বনি সহযোগে গ্রামীণ গরাম দেবতাকে নিবেদন করার পর স্বর্গগত পূর্বাপুরুষদের উদ্দেশ্য ছাতু গুড় আমের তৈরী নৈবেদ্য নিবেদন করেন।তারপর ওই প্রসাদ নিজেরা গ্রহণ করেন। আজ থেকে তারা আম ও ছাতু খাওয়া শুরু করেন। তাঁদের বিশ্বাস এতে গ্রামে স্বর্গীয় পূর্বপুরুষদে আশীর্বাদ লাভ হয়। পরের দিন সকালে চাষের জমি সহ বিভিন্ন স্থানে শুকনো খড় জ্বালিয়ে ধোয়া দেন। এদিন গবাদি পশুকে স্নান করানো হয়। তারপর হয় আঁশ পইড়ান। দলবেঁধে বাঁধ, নদী, পুকুরে মাছ ধরে দুপুরে আম ও মাছের ঝোল সহযোগে মধ্যাহ্ণ ভোজ করা হয়। এই লোকাচার প্রত্যেকটি পরিবারেই পালন করা হয়।
কুড়মি সম্প্রদায়ের এক শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন, আমরা প্রকৃতির পূজারী, মানুষ এই ছাতু উৎসবের ঐতিহ্যবাহী লোকাচার আজও পালন করেন পূর্ব বিশ্বাস থেকেই। প্রকৃত পক্ষে এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও রয়েছে। গরমের সময় মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন।গরমে গবাদি পশুর শরীর ঠিক থাকে আর ধোঁয়া দেওয়ার ফলে পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচা যায়। এইসময় আম-মাছের ঝোল বা আম-ছাতু-গুড় খেলে পিত্ত, জণ্ডিস, মাথা ঘোরা প্রভৃতি থেকে উপশম পাওয়া যায়। ছাতু পেট ঠান্ডা রাখে ফলে ডাইরিয়ার মতো মহামারি থেকেও মানুষ রক্ষা পায়।