এক যোগি কথা পর্ব ১

পর্ব ১

ইতিপূর্বে অনেকেই তাঁর জীবনী লিখেছেন অনেকে । বহু মাসিক এবং পূজাবার্ষিকী পত্রিকায় তাঁর জীবনী নিয়ে নানা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তবে আমার ভরসা থাকুক তাঁর শ্ৰীচরণ।

বিশ্ব করিছে পূজা তবু মোর মনে হয় ;

আমি না করিলে  পূজা , পূজা তব নাহি হয়।

আমার ঈশ্বর তুমি ,প্রভু তুমি ,

দাস আমি ;আমি না করিলে পূজা ,

পূজা তব  রহে বাকি।

তিনি যে অমূল্য যোগ সাধন লাভ করেছিলেন তাঁর গুরুর নিকট হতে এবং তিনি যা জগৎকে প্রদান করেছিলেন সেসব অনুভবের বিষয়, অনুমানের নয়। এখানে পান্ডিত্য ব্যতীতও আরো অনেক কিছুর অবকাশ আছে। যদি কেউ মূক হয় , যদি কেউ বধির হয় সেও আধ্যাত্মিক  সেও আধ্যাত্মিক রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে এবং প্রত্যক্ষ অনুভূতির মাধ্যমে ঈশ্বর তত্ত্বকে সবকিছু দেখতে শুনতে বা  বুঝতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই ।

হাজার হাজার বছর পূর্বে ত্রিকালজ্ঞ মুনি-ঋষিরা যে সাধন পথ দেখিয়েছিলেন কাল ক্রমে তা লুপ্তপ্রায় হয়ে যায়। কিছু সাধনের প্রণালীর বীজ মন্ত্র রক্ষা করা আছে। কিন্তু কালক্রমে সাধনের সেই ক্রিয়াগুলি লুপ্ত হয়ে গেল এবং বীজ মন্ত্র গুলি রয়ে গেল। সাধনের ক্রিয়াগুলি লুপ্ত হওয়ায়  বীজ মন্ত্র গুলি মৃতবৎ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল সেদিকে কারও লক্ষ্য রইল না। সেই ক্রিয়াহীন বীজ মন্ত্রগুলি বর্তমানে গুরু-শিষ্যের কানে দেন। তাহলেই দীক্ষা হয়ে যায়। ক্রিয়া-প্রক্রিয়াগুলির পরিচয়  না থাকায়  না হয় , না হয় শিষ্যের উপকার না হয় গুরুর উপকার। 
গীতায় বলা হয়েছে – 
 ন তদ্ভাসয়তে সুর্য্যো ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ। 

যদগত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম। । 

ওই যে একটা কথা আছে না – 
কান ফুকনে কা গুরু আউর হ্যায়,

বেহদ কা গুরু আউর;

বেহদ কা গুরু যো মিলে ,

পঁহুচা দেওয়ে ঠৌর।


এই সব “মম” , “ধাম” এই সকল শব্দগুলি র নিগূঢ় অর্থ বুঝিয়ে ছিলেন তিনি। হ্যাঁ , তিনি আর কেউ নন । তিনি হলেন যোগিরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী। এসব অর্থ একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাধু ব্যতীত কে বোঝাতে পারেন।  মহাভারতের যুদ্ধ আঠারো দিনে সমাপ্ত হয়েছিল , কিন্তু প্রবৃত্তি এবং নিবৃত্তি এই দুই পক্ষের যুদ্ধ আদি অন্তত কাল ধরে চলছে  , চলবে। এ জন্মজন্মান্তরেও শেষ হবার নয়। তবে এর নিষ্পত্তি হবার উপায় কি ? সেই উপায়ের জন্য যে সাধন পথ বা কর্ম্মযোগ অবলম্বন করলে উহার নিষ্পত্তি হতে পারে তা লাহিড়ী মহাশয়আপন গুরুর নিকট হতে জেনে জগৎকে প্রদান করেছেন।এই প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি পক্ষের যুদ্ধ সকলের মধ্যে চলছে । যদি প্রবৃত্তি পক্ষ জয়ী হয় তবে মহামূল্যবান মনুষ্য জীবন বিফল হবে এর যদি নিবৃত্তি পক্ষ জয়ী হয় তবে মনুষ্য জীবন সফল হবে। প্রবৃত্তি অর্থাৎ বহু কিছুর চাহিদা এবং নিবৃত্তি অর্থাৎ জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু প্রয়োজন হয়। তাই , দুর্যোধন সুচাগ্র মেদিনীও বিনা যুদ্ধে দিতে চান নি আর পাণ্ডবরা  স্বতন্ত্র  অধিকারে পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলেন।  অর্থাৎ একপক্ষ আসক্ত , অন্য পক্ষ অনাসক্ত।

 
সকল বিষয় এই রকম অনাসক্ত না হতে পারলে সাধনায় জয়ী হওয়া যায় না।  “আমি অনাসক্ত”, এই কথা মুখে বললেই তো হয় না। তাকে হৃদয় থেকে হতে হয়। হৃদয় , মন চঞ্চল হলেই আসক্তির উৎপত্তি হয়। তাই মনকে যদি মনঃশূন্য করতে পারলে তবেই মুক্তি। তার উপায় বা সাধন কৌশল গীতাতে এবং পাতঞ্জল যোগদর্শনে পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। কিন্তু বর্তমানে সাধন কৌশল দেখবার লোকের বড় অভাব। এই সকল শাস্ত্রগ্রন্থগুলির ব্যাখ্যা বা টীকা অনেক বড় বড় বিদ্বান বা পন্ডিত গন করেছেন। দার্শনিক ব্যাখ্যা , বুদ্ধিগত ব্যাখ্যা প্রভৃতি অনেক আছে কিন্তু সাধনের দ্বারা প্রত্যক্ষ , কিন্তু সাধনের দ্বারায় প্রত্যক্ষ অনুভবগত বা উপলব্ধিগত ব্যাখ্যা কেউ করেন নি। যে সকল মহাপুরুষ বা মহাযোগিগণ একল কে অনুভব করেছিলেন হয়তো তাঁরা এই কারণেই এসবের আভাস দেননি কারণ তাঁরা মনে করেছিলেন যে , কেবলমাত্র মুখে বা লিখে বললে কে বুঝবে এসব ? নিজে কোনোদিন চিনি না খেয়ে অপরের কথা শুনে চিনির মিষ্টত্বকে কি উপলব্ধি করা যায়। ফলত, কালক্রমে এই বিজ্ঞান সম্মত সাধন কৌশল লুপ্ত হবার উপক্রম হল। 


লাহিড়ী মহাশয়ের গুরুদেব ( যাঁকে তিনি বাবাজী বলতেন এবং তাঁর স্বহস্ত লেখা দিন লিপিতে কেবল বাবাজী এই মাত্র লেখা ব্যতীত আর কোনো উল্লেখ প্রাপ্ত হয় না) তাঁকে রাণীক্ষেত  নিয়ে যান এবং দীক্ষা দান করেন। দীক্ষা প্রাপ্তির পর যখন লাহিড়ী মহাশয় কাশীতে ছিলেন তখন তিনি তাঁর গুরুদেবের সঙ্গে আধ্যাত্মিক আলোচনা হতো তা তাঁর দৈনিক ডায়েরি থেকে প্রাপ্ত হয়। লাহিড়ী মহাশয় তাঁর গুরু বাবাজীর নিকট থেকে সেই বিজ্ঞানসম্মত সাধন কৌশল যা প্রায় লুপ্ত হয়ে এসেছিল তা তিনি পুনরায় পেয়ে জগৎকে দিলেন।
সাধারণত দেখা যায় বেশিরভাগ লোক হঠযোগ অভ্যাস করে । আসনাদি করেই মনে করে যোগাভ্যাস করছে। এগুলিতে শারীরিক উপকার অবশ্যই হয় , কিন্তু এই উপায়ে শরীরস্থ আত্মার কোনো সন্ধান প্রাপ্ত হয় না এবং মনও স্থির হয়ে না। আবার মন স্থির না হলে সাধন রাজ্যে প্রবেশ করা যায় না । মন স্থির করার জন্য রাজযোগের প্রয়োজন। কেবল মন স্থির হলেও হবে না । মনের চঞ্চলতা অনেকটা কমে গেলেও হবে  না। , যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মসাক্ষাৎকার না হচ্ছে , ব্রাহ্মীস্থিতিলাভ না হচ্ছে , ভ্রূমধ্য স্থলে কূটস্থচৈতন্যর দর্শনলাভ না হচ্ছে , ততক্ষণ পর্যন্ত মনুষ্য জীবন সফল হল না। 
ভ্রুবোর্ম্মধ্যে প্রাণমাবেশ্য সম্যক্।

স তং পরং পুরুষমুপৈতি দিব্যম্।।


এরজন্য চাই রাজযোগ , হঠযোগ এবং লয়যোগের একত্র সমাবেশ । রাজযোগের  দ্বারা মন স্থির হবে , লয়যোগের দ্বারা আত্মসাক্ষাৎকার হবে এবং এইসব সাধন করার জন্য শরীরে যে ক্লান্তি উপস্থিত হয় তা দূর করবার জন্য হঠযোগ আবশ্যক। 
ঈশ্বরকে আমরা স্বর্গে খুঁজি , এখানে খুঁজি ওখানে খুঁজি, কিন্তু তিনি যে এই জগৎ সংসারের প্রতিটি কণায় , প্রতি শক্তিতে এবং আপন দেহের ভ্রূমধ্যস্থলে সদা বিরাজমান তার সন্ধান জানি না। এই পরমাত্মা পরমব্রহ্মকে সাধনার কথা সকল ত্রিকালজ্ঞ ঋষিগণ বলে গেছেন। সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বার বলপূর্বক রুদ্ধ করে মনকে চারিদিক থেকে গুটিয়ে এনে ভ্রুমধ্যে স্থাপন করে গুরু নির্দিষ্ট পথে অভ্যাস করতে করতে সেই অবিজ্ঞেয় আত্মাকে দর্শন করে সাধক কৃত কৃতার্থ হন । তাঁকে দর্শন করে জন্ম সফল করেন। এই পরমাত্মাকে যিনি দর্শন করেন তাঁর আর জন্ম হয় না। ওই বলে – 
রথে চ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ।


মরতে মরতে জগ মরা ,

মরনা না জানা কোয়।

এয়সা মরনা কোই না মরা,

জো ফির না মরনা হোয়।।

মরনা হ্যায় দুই ভাঁতি কা,

জো মরনা জানা কোয়।

রামদুয়ারে জো মরে

ফির না মরনা হোয়।।
হ্যাঁ, সেই মৃত্যু অসাধারণ মৃত্যু যা #রামদুয়ারে হয়। সেই রামদুয়ার কি তা লাহিড়ী মশায় ব্যাখ্যা করেছেন। দেহের মধ্যেই পরমাত্মা স্বরূপ থাকেন রাম। সেই রামকে প্রাপ্ত করতে হয়। সেই রামের শক্তি হলে কুলকুন্ডলিনী স্বরূপ মা সীতা। এই দুয়ের মিলনের জন্য সাধনার মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরে বহু যুদ্ধ করতে হয় ।  এই দুই মিলে গেলেই যে পরমব্রহ্ম দর্শন ঘটে তাই হল রাম প্রাপ্তি।  এই দর্শন এই প্রাপ্তি নির্বাণ ঘটায়। একে একদিনের চেষ্টায় লাভ করা যায় না।  সকল জীবনের যোগসাধনায় তা প্রাপ্ত হয় । 
লাহিড়ী মহাশয় আধ্যাত্মিক রাজ্যে প্রবেশের যে পথ দেখিয়েছেন ইদানিংকালে কেউ তেমন করে দেখান নি।


যা হোক , অনেক ভারী ভারী কথা বললাম।  যোগিরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয়ের জীবনের কিছু কথা বলি – 
ধুতি ,পাঞ্জাবি , জুতো পরা টেরিকাটা অফিসের বাবুটি যোগীরাজকে চিনতে মানুষের অনেক সময় লেগেছিল। তাঁর যাপিত জীবন ছিল অতীব সাদাসিধে। ধুতি ,পাঞ্জাবী , ফিতে দেওয়া কাপড়ের জুতো এবং বাড়িতে তিনি খড়ম ব্যবহার করতেন। সম্পূর্ণ নিরামিষাশী লাহিড়ী মহাশয় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার হলেও তাঁর বিশালত্ব এতই ছিল যে সকলে তাঁর নিকট মাথানত করে দাঁড়াতেন। 


১৮৮৫ সালে কর্মে অবসর নিয়ে কাশীবাসী হন। ততদিনে সমাজে তাঁর যোগীরাজ বা কাশীবাবা নাম খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। কেবল নানা প্রদেশের গৃহীভক্ত নন তাঁর সান্নিধ্যে আসতেন বহু সন্ন্যাসী সম্প্রদায়।  তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন  – উত্তরকালেরর দেওঘরের শ্রীমৎ বালানন্দ ব্রহ্মচারী , কাশীর ভাস্করানন্দ স্বরসতী প্রমুখ।কাশীর নরেশ ঈশ্বরীনারায়ণ সিংহও ছিলেন তাঁর শরনাগত। জীবনের শেষ দশটা বছর অসংখ্য অলৌকিক লীলার মধ্যে পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি কাশীর গৌড়েশ্বর মহল্লায় থাকতেন বলে জানা যায় । এখানেই তাঁর অত্যন্ত অন্তরঙ্গ শিষ্য ছিলেন যুক্তেশ্বর। কিংবদন্তি আছে যে একদিন যুক্তেশ্বর তাঁর বন্ধু রামের অসুস্থতার কথা শুনে কান্নাকাটি জুরে দিলেন গুরুদেবের নিকট।  গুরুদেব বললেন ডাক্তার দেখাও। বাড়ি ফিরে যুক্তেশ্বর ভেঙে পড়লেন। রাম মৃত্যুপথযাত্রী স্বরে বললেন, ” ভাই গুরুদেবকে বল – আমি চললুম ।”
একথা শুনে যুক্ত ছুটে চললেন লাহিড়ী মহাশয়ের কাছে। যুক্তকে দেখেই যোগিরাজ প্রশ্ন করলেন,  কি খবর? তোমার সখা এখন কেমন আছে বল? ” কান্নায় ভেঙে পড়ে যুক্তেশ্বর বন্ধুর শেষ কথাটি বললেন । শোনা যায় সে যাত্রায় নাকি অদ্ভুতভাবে যুক্তেশ্বরের বন্ধু রাম বেঁচে গিয়েছিলেন এবং সোজা চলে এসেছিলেন গুরুদেবের নিকট প্রণাম জানাতে । হতে পারে অলৌকিকত্ব হতে পারে মনের বিশ্বাস ; সেই বিশ্বাসই হয়তো দেহের মধ্যে সঞ্জীবনী সুধার সৃষ্টি করেছিল। প্রসঙ্গত এই স্বামী যুক্তেশ্বরের প্রকৃত নাম ছিল প্রিয়নাথ কড়ার। তিনি যোগীরাজের অন্যতম প্রিয় শিষ্য ছিলেন। 


এমনই অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা যোগিরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ীর জীবনীকারদের কলমে পাওয়া যায় । তাঁর জীবনী যাঁরা ব্যাখ্যা করেন তাঁদের মধ্যে শ্ৰী সত্যচরণ লাহিড়ী ছিলেন অন্যতম। তাঁর কথা এবং আরো নানা কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে , যোগীরাজের জীবনের নানা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন প্রচুর । তবে কেউই সহজভাবে গোড়ায় এসে এসব কথা মানতে চাননি । অবশ্য এগুলোকে তো কোনোদিন যোগীরাজ মানতে বলেননি। কারণ তিনি নিজে বৈজ্ঞানিক যৌগিক পন্থায় বিশ্বাস করতেন। তিনি তাঁর স্বকীয় ধারায় অবলীলায় জাগতিক সমস্ত যুক্তি তর্ক খন্ড বিখন্ড করে গিয়েছেন বারবার ।

যোগসাধনায় কতটা পারঙ্গম হলে তবে অবিদ্যা স্বরূপ মায়ার জগৎকে সংসারের মধ্যেই ত্যাগ করে বিদ্যা স্বরূপ মহামায়াকে গ্রহণ করে এমন লৌকিকে অলৌকিক খেলা যায় ? এমন কি করেছিলেন তাঁর ৬৭  বছরের লীলার মধ্যে? সে প্রশ্ন সমাধানে ফিরে যেতে হয় আজ থেকে প্রায় একশ সাতান্ন বছর আগে , ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ।
তখন চাকরি উপলক্ষে শ্যামাচরণ লাহিড়ী রাণীক্ষেতে । সেখান থেকে দ্রোণগিরি ১৫ মাইলের পথ।একদিন সেখানে বেড়াতে এসে জীবনের পট পরিবর্তন হল তাঁর।

সেই  অপরিচিত তুষার রাজ্যে তাঁর নাম ধরে ডাক পড়ল – “শ্যমাচরণ” । চোখে পরলো কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন এক জটা জুটোধারী তেজদীপ্ত সন্ন্যাসী। সেই জ্যোতির্ময় পুরুষ এগিয়ে এসে শ্যামাচরণকে ধরলেন । একে একে লাহিড়ী মহাশয়ের পিতৃপুরুষের নামধাম জানিয়ে বললেন “ভয় কি ? জেনো আমি তোমার আপনজন । আমি তোমাকেই ডাকছিলাম।  এখন এসে গেছ..”
সন্ন্যাসীর মুখে  তখন অন্তরঙ্গ হাঁসি। সস্নেহে শ্যামাচরণকে তিনি একটি গুহা নিয়ে  গেলেন। সেখানে পড়েছিল দণ্ড ,কুমন্ডল, ধুনী ইত্যাদি। গুহার মধ্যে শ্যামাচরণ স্বল্প আলোয় সেসব দেখতে পেলেন। যোগী পুরুষ প্রশ্ন করলেন “কিগো ? কিছু চিনতে পারছো?  এসব তো তোমার ব্যবহারের জিনিস ? আগের জন্মে ব্যবহার করতে মনে নেই ?” লাহিড়ী মহাশয় খুব চেষ্টা করলেন স্মৃতি রোমন্থন করার। কিন্তু স্মৃতিতেই কিছু আসে না । কিংবদন্তি আছে গুরুদেবই তাঁর যোগবলে লাহিড়ী মহাশয়ের পূর্বজন্ম স্মৃতির কথা মনে পড়িয়ে ছিলেন। গুরুদেবকে চিনতে পেরে লাহিড়ী মশাই সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন।   গুরুদেব জানালেন , ” পূর্বজন্মের সাধনার  সমুন্নত অবস্থায় তোমার দেহত্যাগ হয়। এ জন্মে ঈশ্বর নির্দিষ্ট কিছু কাজ সম্পাদনের জন্য আবার এসেছো। এখন আমি তোমায় দীক্ষা দেবো। “

কিন্তু গুরু শিষ্য সংযোগ বেশিদিন থাকল না।  সেই দিনই গুরু জানিয়ে দিলেন , ” ৭ দিনের মধ্যে তোমায় দানাপুর ফিরতে হবে – কর্মস্থল থেকে চিঠি পাবে । ” তাই হল… তবু মাঝের কটা দিন রাণীক্ষেত নিজের তাঁবু উঠিয়ে এনে দ্রোণগিরিতেই বাবাজির কাছাকাছি তাঁবু গাড়লেন তিনি এবং সেখান থেকেই চাকরির কাজকর্ম চালাতে লাগলেন। ক্রমে দীক্ষার দিন ঠিক হলো।  গুরুদেব লাহিড়ী মহাশয়কে এক ঘটি তেল জাতীয় পানীয় দিয়ে পানের আদেশ দিলেন ।  লাহিড়ী মহাশয় সেটি পান করে গুরুদেবের নির্দেশের নদীর তীরে চলে এলেন। সঙ্গে সঙ্গে ভেদবমি শুরু হলো। ভীষণ অসুস্থতার মধ্যে নদীতে জোয়ার এলো। 
 কোনোও ক্রমে যমের সঙ্গে লড়াই করে জীবনটুকু সঙ্গে নিয়ে পরদিন ফিরলেন গুরুদেবের নিকট। গুরুদেব তাঁকে দেখে খুশি হয়ে ভালো-মন্দ খাওয়ালেন । সেদিন সন্ধ্যায় তাঁর দীক্ষা হলো।  বাকি দিন গুলোয় গুরুদেবের অকৃপণভাবে তাঁর সর্বস্ব বিদ্যা শক্তি অর্পণ করেছিলেন আর আত্মনিবেদিত শ্যামাচরণ সমস্ত গ্রহণ করেছিলেন ঐতান্তিক নিষ্ঠায় । অল্পদিনের  মধ্যেই তিনি বিপুল যোগ ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছিলেন।


#ক্রমশঃ 
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ পুরাণ পুরুষ যোগিরাজ শ্ৰী শ্যামাচরণ লাহিড়ী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.