পাহিমাংদেহিমহালক্ষ্মী – ষষ্ঠ পর্ব

ষষ্ঠ পর্ব

দেবি ! প্রসীদ পরমা ভবতী ভবায়

সদ্যো বিনাশয়ি কোপবতী কুলানি। 

বিজ্ঞাতমেতদধুনৈব যদস্তমেত-

ন্নীতং বলং সুবিপুলং মহিষাসুরস্য।।


হে দেবী তুমি দীপ্তিশালীনী এবং শ্রেষ্ঠা । তুমি মঙ্গলের জন্য প্রসন্না হও। তুমি ক্রুদ্ধ হলে যে তৎক্ষণাৎ বংশনাশ হয়। তাই মহিষাসুরের সুবিশাল সৈন্যবাহিনী কেবলমাত্র তোমার রোষে বিনষ্ট হয়েছে। 


তে সম্মতা জনপদেষু ধনানি তেষাং

তেষাং যশাংসি ন চ সীদতি ধর্ম্মবর্গঃ।

ধন্যাস্ত এব নিভৃতাত্মজভৃত্যদারা

যেষাং সদাভ্যুদয়দা ভবতী প্রসন্না।।
তুমি হয়ে যাদের উন্নতি বিধান কর তারা সকল দেশে সম্মান পায়। তাদের ধনসম্পদ , কীর্তি সকল এবং ধর্ম কর্ম সমুদয় অক্ষয় হয়। 
দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্

তোঃস্বস্থৈঃ স্মৃতা মতিমতীব শুভাং দদাসি।

দারিদ্র্যদুঃখভয়হারিণি ! কা ত্বদন্যা

সর্ব্বোপকারকরণায় সদার্দ্রচিত্তা।
হে দারিদ্রনাশিনী , হে দুঃখনাশিনী , হে ভয়নাশিনী , বিপদে পড়ে তোমাকে মনে করলে তুমি সকল জীবের ভয় দূর করে থাক। যারা সুস্থ , অর্থাৎ বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন , তারা তোমাকে মনে করলে তুমি তাদের শুভবুদ্ধি দান করে থাক সকলের মঙ্গল করার জন্য এমন দয়াদ্রহৃদয় তুমি ব্যতীত কেহ নাই। 
তাই তিনি অষ্টলক্ষ্মী রূপে পূজিতা। তিনি আদিম, তিনি পশুমাতা , তিনি শাকম্ভরি অন্নপূর্ণা , তিনি ধনসম্পদা , তিনি প্রজনন দেবী সন্তান দায়িনী, তিনি বুদ্ধি জ্ঞান বিদ্যা ও প্রজ্ঞা, তিনি বিজয়া বিজয়প্রদায়িনী, তিনি সকল যুদ্ধের ধৈর্য্য দায়িনী। 

সুবিশাল ভারতে বহুস্থানে দেবী মহালক্ষ্মী মন্দিরে পূজিতা হন। যেমন- 
শ্রীপুরম স্বর্ণ মন্দির, ভেলোর। 

  লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির (বিড়লা মন্দির), দিল্লি।  
 মহালক্ষ্মী মন্দির, মুম্বই।  
 লক্ষ্মী দেবী মন্দির, হাসান।  
 অষ্টলক্ষ্মী মন্দির, চেন্নাই।  
 কৈলা দেবী মন্দির, করুলি, রাজস্থান।  
 গোরভানাহল্লি মহালক্ষ্মী মন্দির।
খাজুরাহো লক্ষ্মী মন্দির।
উক্ত লক্ষ্মী মন্দিরগুলি ভারতে এবং বিশ্বে আপন আপন মহিমা ও কারুকার্যে সুবিখ্যাত। কেবলমাত্র ভারতে কেন …ভারত ছাড়িয়ে বৃহত্তর ভারতেও দেবী লক্ষ্মীর বহু মূর্তি ইত্যাদির প্রাপ্তি ঘটেছে। ভাগ্য এবং সমৃদ্ধির দেবী হিসাবে দেবী লক্ষ্মী উপাসিতা হন । সেখানে তিনি হিসাবে, কিশিজোতেন নামে পূজিতা। এর অর্থ ‘,’ শুভ স্বর্গ । কিশিজোতেনকে বিজনামের বোন হিসাবে বিবেচনা করা হয় , ইনি তমন বা বিসমন-দশ নামেও পরিচিত।দেবী লক্ষ্মী এখানে কিশিজোতেন নামে মানুষের জীবন রক্ষা করেন, মন্দের বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং ভাগ্য সমৃদ্ধি ঘটান।  প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় জাপানে, কিশিজোতেন শিশুদের ভাগ্য এবং সমৃদ্ধির জন্য জন্যই উপাসিতা হতেন।  কিশিজোতেন গিশার অভিভাবক দেবীও ছিলেন।

 বিসমোন ও কিশিজোতেন প্রাচীন চীনা এবং জাপানি বৌদ্ধ সাহিত্যে পাওয়া গেলেও, এদের শিকড় হিন্দু ধর্মে দেবদেবীদের নিকট প্রাপ্ত হয়। 

প্রাচীন চীনে লক্ষ্মী লাহাক্ক্সেমি নামে উপাসিতা হতেন। তিনি ছিলেন শস্যদেবী। তিব্বতি বৌদ্ধ মার্গে দেবী লক্ষ্মী একটি বিশেষ দেবতা, বিশেষত গেলুগ বিদ্যালয়ে।  তাঁর শান্ত এবং রুদ্র উভয় রূপ রয়েছে। তাঁর দুটি রূপ হল –  প্যালডেন ল্যামো এবং শ্রী দেবী দুডসোল ডোকম বা কামধ্বত্বর্বরী ।  তিনি লাসা, তিব্বতের প্রধান মহিলা সুরক্ষক। তবে তিনি দেবী বসুধারা নামেও সুপরিচিতা। 

বালিতে দেবী লক্ষ্মী দেবী শ্রী নামে উপাসিতা হন। তিনি সেখানে  উর্বরতা এবং কৃষির দেবী ।

গোয়াল ভরা গাই আর পুকুর ভরা মাছ , সঙ্গে গোলাভরা ধান আর ডোল ভরা মুগ। এইতো মানব জীবনের চিরায়ত ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য বঙ্গ জীবনের অটুট অঙ্গে পরিণত হয়েছিল একসময়। সেই ঐতিহ্য বেশ ম্লান হলেও এখনো কিছু ধরে রেখেছে বঙ্গের গ্রামাঞ্চলগুলি, তার মধ্যে বর্ধমান অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গের শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমান। রাঢ় অঞ্চলের যে কোনো সম্পন্ন চাষী গৃহস্থ ঘরে এলেই দেখতে পাবেন বাড়ির মাঝ উঠানে প্রায় হাত বিশেক উঁচু ধানের গোলা। বাড়ির দুয়ার দিয়ে প্রবেশ পথেই তুলসী মহারাণী অবস্থান করছেন মঞ্চের উপর। গোলাতলায় চাষের সরঞ্জাম- কোদাল- দা , নিড়ানি, মাটি ভাঙার মুগুর, মই , লাঙল বা ট্রাক্টর, মই, মুনিশ আর রাখালের জামবাটি ইত্যাদি। গোলাঘরের সামনে দিকে থাকে কাঠের জানলা লাগানো।  এর ভিতর অনায়াসে প্রবেশ করে ধান রাখা যায় । ধান বের করা যায়। জানলার নীচে একটু সামান্য উঁচু মাটি লেপার থান। সেখানে খড়ি মাটি কি চালের গুঁড়ি দিয়ে নানান আল্পনা আঁকা।  বাড়ির গিন্নি বউ ঝিরা এখানেই ফুল জল ঠেকিয়ে নিত্যপূজা করেন। মা লক্ষ্মী সর্ব রূপে এখানেই তো অবস্থান করেন। 

অন্দরমহল থেকে বেরিয়েই খামার বাড়ি। সেখানে সংলগ্ন গোয়াল। গোয়াল ঘরের দেওয়াল ঘেঁষে খড়ের গাদা সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে। ধান মজুত করার পেল্লায় সব মরাই বা গোলা, উচ্চতা ত্রিশ কি চল্লিশ হাত। খড়ের বর পাকিয়ে তৈরি, কোন এক অদ্ভুত কৌশলে। সাধানরত বর জড়ানো মরাইয়ে ধান মজুত করা থাকে বিক্রির করার জন্য।  প্রতি খামার বাড়ির মরাইয়ের পাশে থাকে আঁস্তাকুড় বা সারকুড়। এখানে গোবর সার তৈরি হয় । 

 মরাই বা গোলার আরো কয়েটি নাম আছে , যেমন -হামার, বাকাড়ি , কড়ুই। বঙ্গের অন্যত্র ধান সংরক্ষণে ডোল বাঁদি বা ধানগলির ব্যবহার থাকলেও রাঢ় এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে কেবলমাত্র মরাই বা গোলাই ব্যবহৃত হয়।  এমন কি কড়ুই নামে একাধিক স্থান নাম রয়েছে। গোলা ,মরাই বা কড়ুই হলো দুই ধরণের। ১. খড় জড়ানো বরের গোলা

২. বাঁশের তৈরি স্থায়ী গোলা বা কড়ুই

বরের গোলা ঠিক লাট্টু বা পানের ডাবরের মতো দেখতে । প্রথমে বৃত্তাকার তলা গঠিত হয়। চারপাশে সাজানো হয় লম্বা খড়ের আঁটি দিয়ে।  এগুলিকে ঝুঁটো বলে। এবার ধান ঢালার সঙ্গে সঙ্গে , বর জড়াতে থাকেন অভিজ্ঞ কৃষক। যত উপরের দিকে ওঠে তত তার ব্যাস বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রায় ১০০ মণ পর্যন্ত ধান একটি বর জড়ানো মরাইয়ে থাকে অনায়াসে। মাথায় খড়ের ছাউনি। অনেকটা যেন বাঁশের মাথালি বা টোকার মতো। মাথার খড় গৌরঝুঁটির মতো বেঁধে একটি হুলুনি চাপা দেওয়া থাকে। যাতে বৃষ্টি পড়লে জল গোলার অভ্যন্তরে না ঢুকতে পারে।গোড়ায় একটি মোটা খড়ের বিনুনি দিয়ে গোলাকার চুড়ির মতো বানানো হয়। এর ফলে ইঁদুর ঢুকতে পারে না ।  বিক্রি করার সময় মাঝখান থেকে কিছুটা বর কেটে নিলে ধান খুব সহজেই বেরিয়ে আসতে থাকে হুড়হুড় করে। তারপর বস্তা বন্দী করা হয় সেই ধান। ধান বার করে নিলেও গোলা সেই পূর্বের মতো অক্ষত থাকে। বর পাকানো বেশ মজার। ল্যায়লি খড় জলে ভিজিয়ে বেশ নমনীয় করে নেওয়া হয় । একজন ডান পায়ের গোড়ালি দিয়ে পাক দিয়ে অন্যহাতে খড়ের গুছি ধরায়। আর একজন সেই বরকে একটি লাঠির মাঝে জড়িয়ে পাক দিতে দিতে পিছতে থাকে এবং বর ক্রমশ বেড়েই চলে। এইভাবে প্রায় আশি হাত বরের প্যাঁচ ঘরের পিছনে লম্বা করে টাঙিয়ে রাখে পাক ছাড়ানোর জন্য। 

বাঁশের নির্মিত গোলা খানিকটা ডুগডুগি মতো। এগুলি নির্মাণ করেন ডোমেরা বা বাঁশশিল্পীরা। প্রথমে বাঁশ জলে দিয়ে পচিয়ে রাখা হয়। তারপর বেশ খানিকটা পুড়িয়ে নিয়ে তাকে নিয়ে কাবারি করে তৈরি হয় বুনন প্রক্রিয়া। গোলা বসানো হয় আড়াই তিন ফুট উচ্চ মঞ্চ করে। ভালো করে বসিয়ে নিয়ে শুরু হয় ভিতরে মাটি লেপার কাজ। বেনাঘাসের কুচি , লকুঁড়ো আর গোবরমাটির প্রলেপ দিয়ে গোলাঘরটিকে হওয়া নিরোধক করা হয়। তারপর বেশ করে শুকিয়ে নিয়ে লালমাটি দিয়ে নিকিয়ে নেওয়া হয়।  
খড়ের চালের ত্রিকোণ মাথা। এখন অবশ্য টিনের চাল ব্যবহার হয়। গোলার বাইরে ভালো করে আলকাতরা দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে ঘুন না লাগে।এই গোলার দেওয়াল আল্পনা হয় ভারি চমৎকার। বর্গাকার স্থানটিতে একটি অসাধারণ বাস্তুতন্ত্রের ছবি আঁকা থাকে যত্ন করে। পিটুলিগোলা অল্পনার রেখা চিত্রে মূর্ত হয়ে ওঠে দেবীদেবতারা। চারিপাশে ধানের শীষ। পেঁচা আর লক্ষ্মীর প্যাজ। চাঁদ , সূর্য , গাছপালা , পাখি আর স্বস্তিক চিন্হ। তেল সিঁদুরের ফোঁটা দেওয়া প্রতিটি চিত্রে। দেবীদেবতার মূর্তি গুলি আসলে লক্ষ্মী নারায়ণের। 

এসব নিয়ে রাঢ়ের গাঁ ঘরে, কবিয়াল দলে কত শত ধাঁধাঁ বাঁধা হতো আগে….
বামা নয় , শ্যামা নয়, নয় সিদ্ধেশ্বরী ।স্বামীর বুকের উপর দাঁড়িয়ে থাকে বলো কোন দেবী?
মা ব্রহ্মময়ী মহাকালী রূপে মহাদেবের বুকের উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। তা ব্যতীত তাঁর কোন রূপ আর এমনটি করবেন? উত্তরটি প্রতিপক্ষ রসিয়ে বলতেন – 

 এই তো তোমার কথার জবাব কথায় মিটে গেল।

মা লক্ষ্মী নারায়ণের বুকে দাঁড়াইলো। 

দেওয়াল আলপনার পাশাপাশি পৌষপার্বণের সময় গোলাবাড়িতে চারিদিক থেকে এমন বিচিত্র আলপনা আঁকা হয় , যাতে মা ধনধান্যকুল লক্ষ্মী সেই আলপনা পথ বেয়ে এসে পা দিয়ে মরাইয়ে উঠবেন। কি সুন্দর সেই লোকাচার তাই না ?

দিবারাত্রি এক করে শস্য উৎপাদন রাষ্ট্র ও সমাজের খাদ্য প্রদান এবং উন্নয়নের জন্য । রাত্রি জেগে শস্য সংরক্ষণ। রাত্রি জেগে প্রকৃতিরূপী মহামায়ার নিকট ফসল উৎপাদনের কাল জুড়ে প্রার্থনা করা ,যেন বৃষ্টি হয় , সেই জলে অঙ্কুরোদগম হয় , আবার বৃষ্টি যেন অসময়ে না হয় , তবে পাকটো ধানে পোকা লাগবে। বন্যা যেন না হয়, খরা যেন না হয়। ব্রহ্মময়ী যেনো সদয় হন। দেবী দেখেন যে তাঁর অমৃতের সন্তানরা কর্ম করছেন। যিনি কর্ম করেন তিনিই তো ফল লাভ করেন। তাই দিবরাত্রি জাগরণ , কর্ম সম্পাদন …রাত্রি জেগে কোজাগরী ব্রত পালন।  রাত্রি জেগে ব্যবসায়ী প্রার্থনা করেন ব্যবসায় যেনো বাঁধা না আসে, ব্যবসার সপ্ত ডিঙ্গা মধুকর যেন কোনো ভুলে নষ্ট না হয়। 
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন৷
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোস্ত্বকর্মণি৷৷

কোজাগরী পূর্ণিমার ব্রতের রাত্রি, জোৎস্না প্লাবিত মাঠের মধ্যে দিয়ে মহালক্ষ্মী আসেন দেখতে কে কে জাগরণ করে কর্ম সম্পাদন করছেন। যিনি কষ্টসহিষ্ণু তিনিই লক্ষ্মী লাভ করবেন। এই তো জীবন…লোভ লালসা হিংসা দ্বেষ মোহ মায়া ত্যাগ করে যে বা যাঁরা কেবল দেশ ,জাতি ও সমাজের ভালোর জন্য কষ্ট করেন ,ত্যাগ করেন এবং যুদ্ধ করেন তাঁরাই লক্ষ্মী লাভ করেন। সেই তো আসল শক্তি সাধনা।
শক্তি না থাকলে জগতে ন্যায়, ধর্ম কিছুই রাখা যায় না । শক্তিহীনের দ্বারা আত্মজ্ঞানও লাভ হয় না। তাই

উপনিষদে আছে –
নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ গীতা জ্ঞানে অর্জুনকে সেই শক্তিমন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছেন –
ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতৎ ত্বয্যুপপদ্যতে।ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্ব্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় সেই মহামায়া মায়া এবং যোগমায়া নামে অভিহিত হয়েছেন। সেখানে কৃষ্ণ পার্থকে বলছেন –
দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া।

 মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে।।
অর্থাৎ , মায়া যখন অবিদ্যা তখন সেই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন। এই মহামায়ার সংসারে জাগতিক চাওয়া পাওয়া , দুঃখ যন্ত্রনা হতে মুক্তি পেয়ে বিদ্যারূপী পরম ব্রহ্মস্বরূপ , যোগ স্বরূপ মায়াকে প্রাপ্ত হবার নিমিত্ত সকল জাগতিক চাহিদা পরিত্যাগ করে আমার স্মরণ নাও। মায়ার সংসারে জীবকুল জাগতিক বিষয় বন্ধনে আবদ্ধ থেকে তাই আমি তাঁদের গোচর হই না। মূঢ় লোকে তাই আমাকে অজ ও অব্যয় বলে জানতে পারেন না।  চন্ডীতে আদি পরাশক্তি মহামায়া এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় তিনিই বিষ্ণুমায়া, যোগমায়া এবং মহামায়া হিসাবে অবস্থান করছেন। 

এই শক্তি শুধু শরীরের নয়  – এই শক্তি মানসিক শক্তি, অর্থ শক্তি ,  বিদ্যা শক্তি , জনশক্তি – পৃথিবীর সর্ব বস্তু , এমন কি জড়ের অন্তরালে যে মহাশক্তি সুপ্ত হয়ে আছেন, সেই আদিশক্তি মূলশক্তি।
প্রথম আদি তব শক্তি–

আদি পরমোজ্জ্বল জ্যোতি তোমারি হে
             গগনে গগনে ॥
তোমার আদি বাণী বহিছে তব আনন্দ,
জাগিছে নব নব রসে হৃদয়ে মনে ॥
মানব হৃদয়ে মনে যদি দুঃখীর দুঃখ দূর করার ইচ্ছা হয়, অর্থশক্তি না থাকলে তা পারে না। যদি প্রবলের অত্যাচার থেকে দুর্বলকে রক্ষা করতে হয় তবে শারীরিক শক্তি না থাকলে সম্ভব হয় না। যদি কঠোর সাধনার শক্তি না থাকে তবে আত্মজ্ঞান লাভ হয় না। কাজেই জীবনকে সার্থক করে তুলতে হলে সর্বপ্রকার শক্তি অর্জন অবশ্যই প্রয়োজন। তাই সেই মহাশক্তি মহামায়া মহাদেবী মহাবিদ্যা মহাশক্তির আরাধনা চিরন্তর। 

ত্রিধা চকার চাত্মানং স্বেচ্ছয়া প্রকৃতি স্বয়ং। 

        মায়া বিদ্যা চ পরমেত্যেবং সা      ত্রিবিধাঽভবৎ॥   

      মায়া বিমোহিনী পুংসাং যা সংসার-প্রবর্তিকা।     

    পরিস্পন্দানিশক্তি র্যা পুংসাং যা পরমা মতা। 

        তত্ত্বজ্ঞানাত্মিকা চৈব সা সংসার-নিবর্তিকা॥
অর্থাৎ, মূলপ্রকৃতি পরব্রহ্ম ভগবতী স্বয়ং স্বেচ্ছায় নিজ শক্তিকে মায়া, বিদ্যা এবং পরমা এই ত্রিবিধরূপে বিভক্ত করেন। 
— ভগবতীর অবিদ্যারুপী মায়াশক্তি বিমোহিনী সংসার-প্রবর্তিকা শক্তি, ভগবতীর এই মায়া শক্তি সংসার বন্ধনের মূল । 
— যে শক্তি পরিস্পন্দাদি ব্যাপার-বিধায়িনী চৈতন্যময়ী সঞ্জীবনী শক্তি সে ভগবতীর পরমা শক্তি । 
— আর তত্ত্বজ্ঞানাত্মিকা সংসার-নিবর্তিকা শক্তি হলো ভগবতীর বিদ্যা শক্তি । ভগবতীর এই বিদ্যা শক্তি হলো সংসার হতে মুক্তির হেতু, শুদ্ধবিদ্যা ….
অহং রুদ্রেভির্ব্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃঅহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা।
সেই মহাপরমা শক্তিকে আমার প্রণাম জানাই।

সমাপ্ত
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১ .শ্ৰী শ্ৰী চণ্ডী

২. মেয়েদের ব্রত কথা

৩. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা

8.বাংলার মুখ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.