ষষ্ঠ দফায় নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের ৪ টি জেলার মোট ৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে। উত্তর দিনাজপুরের ৯টি, নদীয়ার ৯টি, উত্তর চব্বিশ পরগনার ১৭টি এবং পূর্ব বর্ধমানের ৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হয়ে উক্ত জেলাগুলিতে ভোট শেষ হতে চলেছে ২২শে এপ্রিল।
উত্তর দিনাজপুরের ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৭ টি— চোপরা, ইসলামপুর, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘি, হেমতাবাদ ও কালিয়াগঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থান পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে আর রায়গঞ্জ ও ইটাহারের অবস্থান সীমান্ত-নিকটবর্তী স্থানে। ২০১৬’র বিধানসভায় ইসলামপুর, কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জ ছিল কংগ্রেসের আসন, চাকুলিয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের আর হেমতাবাদ সিপিএমের। ইসলামপুর তৃণমূলের দখলে আসে ২০১৯’র উপনির্বাচনে— ইসলামপুরের কংগ্রেস বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর।
উত্তর দিনাজপুরের পটপরিবর্তন হয় ২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনে। এই জেলার সবকটি বিধানসভা ক্ষেত্রে প্রচুর ভোট পায় ভারতীয় জনতা পার্টি এবং করণদিঘি, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জ নির্বাচনী লড়াইয়ে গেরুয়া পার্টিকে এগিয়ে দেয় বিপুল ভোটে। গত দুইটি নির্বাচনের পরিসংখ্যান ও জনমতের বিচারে, এ বছর চোপরা ও গোয়ালপোখর থাকতে চলেছে তৃণমূলের দখলে আর করণদিঘি, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জ জেতাবে বিজেপিকে। চাকুলিয়া ও ইসলামপুরের লড়াই আকর্ষণীয় হতে পারে। ইসলামপুরের বাম-ভোট যদি বিজেপিতে যায়, তবে ইসলামপুরেও জিতবে বিজেপি। একইভাবে, চাকুলিয়ার স্থানীয় রাজনীতিতে আন্তঃদল বোঝাপড়াটি কেমন অবস্থায় রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে চাকুলিয়াতেও জিতে যেতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি।
ইটাহার উত্তর দিনাজপুরের একমাত্র বিধানসভা আসন, যেখান থেকে এবার ভোটে লড়ছে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম। ওয়েইসির রাজনীতির কি প্রভাব ইটাহারের ওপর পড়ে, তীক্ষ্ণ নজর থাকবে সেইদিকে। ইটাহারের প্রায় ৫২% মুসলিম ভোটের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ যদি AIMIM এর দখলে যায় এবং ইটাহারের হিন্দু ভোট যদি বিজেপির পক্ষে এককাট্টা হয়, তবে ইটাহার আসনটিও যেতে পারে বিজেপির দখলে।
উত্তর দিনাজপুর নারী পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং নারীপাচারের মত অপরাধে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী। অতএব ভোটের দিন এ জেলায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটলে আশ্চর্যের নয়। ভুলে গেলে চলবে না, হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাঁর বাড়ির কাছে একটি দোকানের চালের রড থেকে ২০২০ সালের জুলাই মাসে। স্থানীয় অভিমত—দেবেন্দ্রনাথ রায় নারী পাচারকারী গ্যাং’এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন।
নদীয়া জেলার ৯টি আসনের মধ্যে নবদ্বীপ ছাড়া বাকি আটটিই পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী / সীমান্ত-নিকটবর্তী। কৃষ্ণনগর উত্তর, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, কালিগঞ্জ ও নাকাশিপাড়ার অবস্থান সীমান্ত-নিকটবর্তী স্থানে আর করিমপুর, তেহট্ট, পলাশিপাড়া ও চাপড়া বিধানসভা সীমান্তবর্তী। কৃষ্ণনগর উত্তর, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, নবদ্বীপ ও তেহট্ট জিততে পারে বিজেপি আর পলাশিপাড়া, করিমপুর ও নাকাশিপাড়ায় হতে পারে বিজেপি-টিএমসি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। নাকাশিপাড়ায় বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা পলাশিপাড়া ও করিমপুরের চেয়ে বেশি। ২০১১’র সেনসাস অনুযায়ী চাপড়া ও কালিগঞ্জে মুসলিম জনশতাংশ যথাক্রমে প্রায় ৬০% ও ৫৮%. এইদুটি আসন থাকবে টিএমসির দখলে। নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে নদীয়া জেলায় রিগিং–এর সম্ভাবনা।
বহু টানাপোড়েন ও দরকষাকষির পর তৃণমূলের ‘নাম্বার টু ম্যান’ মুকুল রায়কে দলে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে জেতানোর গুরুদায়িত্ব তাঁকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও শিবপ্রকাশ ঝা’এর মত নেতা জোরালো ভূমিকা নিয়েছেন মুকুল রায়ের পক্ষে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও এবং সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দক্ষতা সংশয়াতীত হলেও, মুকুল রায়ের নৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এক সুবৃহৎ অংশের মনে। তাঁরা জানেন— যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল অভিযুক্ত তার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড মুকুল রায়। কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে মুকুল রায়কে দাঁড় করানো তাই গেরুয়া পার্টির একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। নিজের এলাকা থেকে জনগণেশের আশীর্বাদ নিয়ে জিতে আসতে হবে শ্রী রায়কে।
উত্তর চব্বিশ পরগনার ১৭টি আসনের মধ্যে আমডাঙ্গা (২০১১ সেনসাস অনুযায়ী যেখানকার মুসলিম জনশতাংশ ৫৮% এর বেশি), সীমান্ত–নিকটবর্তী বাদুরিয়া ও সীমান্তবর্তী স্বরূপনগর থাকতে চলেছে তৃণমূলের দখলে আর নোয়াপাড়া ও উত্তর দমদমে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে যথাক্রমে টিএমসি-বিজেপির ও বিজেপি-সিপিএমের। ২০১৭’য় বাদুরিয়া, স্বরূপনগরের দাঙ্গা স্মর্তব্য। এই অঞ্চলদুইটি অপরাধপ্রবণ এবং গরুপাচারের সঙ্গে যুক্ত। বাকি ১২টি আসনেই জিততে পারে গেরুয়া পার্টি। বাগদা, বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, গাইঘাটার মত সীমান্তবর্তী মতুয়া-অধ্যুষিত তপশীলি বিধানসভাগুলি এবার বিজেপির হবে।
সীমান্ত-নিকটবর্তী হাবড়াও বিজেপির শক্ত ঘাঁটি যেখানে বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। নির্বাচনে পরাস্ত হওয়ার একটি নেতিবাচক ট্র্যাক রেকর্ড আছে রাহুল সিনহার। সমালোচকদের মতে, যেসব আসনে বিজেপি শক্তিশালী, সিলভার টনিকের বিনিময়ে সেই সব আসনে ইতিপূর্বে হেরেছেন রাহুল সিনহা। নিন্দুকে বলে—প্রতিটি পরাজয়ের পর ব্যক্তিগত অ্যাসেটের পরিমাণ বেড়েছে শ্রী সিনহার। পরিসংখ্যানগতভাবে হাবড়া বিজেপির জয়ের আসন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পার্টির ন্যাশনাল সেক্রেটারির পদ থেকে রাহুল সিনহাকে সরিয়ে দেওয়ার পর ২০২১’র নির্বাচনে হাবড়া থেকে তাঁকে দাঁড় করানো শ্রী সিনহার রাজনৈতিক সততার পুনর্মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে হওয়া সম্ভাব্য।
অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময় ১৯৯৯’র উপনির্বাচনে অশোকনগর জিতিয়েছিল বিজেপিকে। গত বছর অশোকনগরে পেট্রোলিয়াম আবিস্কৃত হওয়ার পর এ বছরের নির্বাচনেও অশোকনগরে জিতবে বিজেপি—বলছেন অশোকনগরের মানুষ।
বীজপুর (মুকুল রায়-পুত্র শ্রী শুভ্রাংশু রায় এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির হয়ে), নৈহাটি, ভাটপাড়া, জগদ্দল, খড়দা, ব্যারাকপুর আসনগুলি যেতে চলেছে বিজেপির দখলে। ২০১৯’র লোকসভাতে এই বিধানসভা ক্ষেত্রগুলি বিপুল ভোটে এগিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টিকে। তৃণমূল-বিরোধী অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি ফিলিং’এর পাশাপাশি অর্জুন সিং এর প্রভাব এবং ভারতীয় জনতা পার্টির নিয়মিত ও সুপরিকল্পিত প্রচারও এই আসনগুলিতে বিজেপির জয়ের কারণ হতে পারে।
পূর্ব বর্ধমানের ৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩টি— পূর্বস্থলী উত্তর, কাটোয়া ও গলসি যেতে চলেছে বিজেপির দখলে এবং বাকি পাঁচটি আসন—ভাতার, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, আউসগ্রাম ও পূর্বস্থলী দক্ষিণ জিতবে তৃণমূল। তপশীলি বিধানসভা আউসগ্রামে বিজেপি প্রার্থী কলিতা মাঝি গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। আউশগ্রামের মানুষ কলিতা মাঝিকে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করলে নারী-সশক্তিকরণের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ তৈরি করবে আউশগ্রাম। পূর্বস্থলী উত্তর থেকে বিজেপির প্রার্থী পণ্ডিত ব্যক্তি প্রফেসর গোবর্ধন দাস।
হিসাব ও জনমত অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২৪ টি থেকে সর্বাধিক ৩২টি আসন এই দফায় পেতে পারে বিজেপি।
Election Date | Constituency No. | Constituency Name | District |
22.04.2021 43 Assemblies | 28 | Chopra | Uttar Dinajpur 9 Assemblies Total Election Over |
29 | Islampur | ||
30 | Goalpokhar | ||
31 | Chakulia | ||
32 | Karandighi | ||
33 | Hemtabad | ||
34 | Kaliaganj | ||
35 | Raiganj | ||
36 | Itahar | ||
77 | Karimpur | Nadia 9 Assemblies out of 17 Total Election Over | |
78 | Tehatta | ||
79 | Palashipara | ||
80 | Kaliganj | ||
81 | Nakashipara | ||
82 | Chapra | ||
83 | Krishnanagar Uttar | ||
84 | Nabadwip | ||
85 | Krishnanagar Dakshin | ||
94 | Bagdah | Uttar 24 Parganas 17 Assemblies out of 33 Total Election Over | |
95 | Bangaon Uttar | ||
96 | Bangaon Dakshin | ||
97 | Gaighata | ||
98 | Swarupnagar | ||
99 | Baduria | ||
100 | Habra | ||
101 | Ashoknagar | ||
102 | Amdanga | ||
103 | Bijpur | ||
104 | Naihati | ||
105 | Bhatpara | ||
106 | Jagatdal | ||
107 | Noapara | ||
108 | Barrackpur | ||
109 | Khardaha | ||
110 | Dum Dum Uttar | ||
267 | Bhatar | Purba Bardhaman 8 Assemblies out of 16 Total Election over | |
268 | Purbasthali Dakshin | ||
269 | Purbasthali Uttar | ||
270 | Katwa | ||
271 | Ketugram | ||
272 | Mangalkot | ||
273 | Ausgram | ||
274 | Galsi |
দেবযানী ভট্টাচার্য্য Debjani Bhattacharyya