সিএএএবিরোধী প্রতিবাদ থেকে কৃষকরা কী শিখেছে: স্ট্রিট পাওয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করে নিজেদের দাবি হাসিল কাজ করা যায়

দালাল স্ট্রিট এবং মেইন স্ট্রিটের মধ্যে সংযোগ কখনো সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। স্টক মার্কেটগুলি ত্রৈমাসিকের পর থেকে সম্ভবত লাভ বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করছে। এমনকি দিল্লি যেমন একদিকে কোভিড -১৯ উভয়ের সাথে লড়াই করছে এবং অন‍্যদিকে আবার হাজার হাজার কৃষক সীমান্তে শিবির স্থাপন করে বসবাস শুরু করেছে এবং ভারত সরকার যে কৃষি সংস্কার বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করিয়েছে তাকে ফলপ্রসূ না হতে দেওয়ার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে সমানভাবে।

স্ট্রিট এই যুদ্ধে জিতলে দালাল স্ট্রিটের উদযাপন করার মতো কিছুই থাকবে না। প্রতিটি সংস্কারকে তাহলে এইভাবেই উশৃঙ্খল জনরোষের মুখে পড়ে পিছিয়ে আসতে হবে।

এই​ বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না যে, উৎপাদিত ফসলের ব‍্যাপারে একবার যদি ম্যান্ডি সিস্টেম বড়ো বড়ো চুক্তিভিত্তিক ক্রেতাদের সাথে প্রতিযোগিতায়​ নামতে বাধ্য হয়, তাহলে এমএসপিগুলিতে (ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের) কী হবে তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ থাকতেই​ পারে। সাধারণ ধারনা থেকে বলা যায় যে ক্রেতাদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতাটি কেবল বিক্রেতাদেরই উপকার করতে পারে।পরে একত্রিত হওয়ার পরে। তবে আন্দোলনকারী কৃষকরা রাজনৈতিক দল এবং স্বার্থান্বেষী উভয় পক্ষকেই স্বাগত জানানোর পথ খুলে রেখেছে। এমনকি যদি চুক্তি ভিত্তিক ক্রেতাদের সাথে সমানভাবে​ দৃঢ় মনোভাব নিয়ে দরকষাকষি করতে পারতো তাহলে আজ আর কৃষকদের এই সংগঠিত প্রতিবাদের আয়োজন করার প্রয়োজন পড়তো না, এমএসপিগুলির দরকার হতো না।

কিন্তু না, কৃষক সেন্টিমেন্টকে​ কাজে লাগিয়ে সরকার এবং তার সংস্কারের বিরোধিতা করে সামাজিক স্থিতাবস্থা নষ্ট করাই হলো আসল উদ্দ্যেশ্য। জামিয়া মিলিয়া থেকে শাহীন বাঘ পর্যন্ত বিরোধী সিএএ বিরোধী (নাগরিকত্ব সংশোধন আইন) বিক্ষোভ চলাকালীন যে পরোক্ষ-আক্রমণাত্মক প্রতিবাদ পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়েছিল, এখন তা আবারও দিল্লিকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য জনসমাগমের প্রতিবাদ এবং সমস্ত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাতিল করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে । যদি বর্তমানে কেন্দ্র এই প্রতিবাদ স্থগিত করতে না পারে তবে ভবিষ্যতে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে এটি আদর্শ হয়ে উঠবে, যেখানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়গুলি তাদের দাবি মেনে নেওয়ার এই স্ট্রিট পাওয়ারকে সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে ।

সিএএ-বিরোধী ও কৃষক বিক্ষোভগুলি ভারতীয় রাজ্যের দুর্বল প্রকৃতির বিষয়টিকে​ সবার সামনে তুলে ধরেছে, যেখানে জনতার ব্ল্যাকমেইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র উপায় হ’ল অতিরিক্ত বাহিনী (লাঠিচার্জ, টিয়ারগাস, এমনকি রাবার বুলেট) ব্যবহার করা, কিন্তু যদি এক্ষেত্রে সেটা না করা হয় তাহলে পরবর্তী সময়ে সরকারকে আরও খারাপ সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। যদি এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে তাহলে তা সমাজ তথা দেশের পক্ষে খুব একটা ভালো হবে না। এমনকি শাহীন বাঘের প্রতিবাদকারীদের যেমন বলা হয়েছিল সরকারী কাজের জায়গা বাদ দিয়ে নির্ধারিত জায়গায় প্রতিবাদ করুন। গনতন্ত্র জয়ী হবে…ইত‍্যাদি কিন্তু এক্ষেত্রে আদালতেরও​ সাহস হবে না এদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করার।

কৃষকদের ক্ষেত্রে এটি যাই ঘটুক না কেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তার ভবিষ্যতের রাস্তায় নেমে ব্ল্যাকমেইলের এই অস্বস্তিকর প্রক্রিয়াটি নিয়ে ভাবতে হবে।

আবার মজার বিষয় যে সুপ্রিম কোর্ট গত ২ ডিসেম্বর,সরকারকে সমস্ত থানা ও জায়গাগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে, যেখানে তদন্ত সংস্থাগুলি সন্দেহভাজন এবং গ্রেপ্তার হওয়া​ মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। যদিও এটি তৃতীয় ডিগ্রি পদ্ধতির ব্যবহার রোধ করার জন্য একটি ভাল পরামর্শ, তবে অবাক হওয়ার কারণ এটাই যে, কেন একই স্তরের স্বচ্ছতা আদালতকক্ষ এবং বিচারকদের কক্ষে আনা যায় না, যেখানে শুনানি এবং মামলাগুলি রেকর্ড করা হয় এবং পরবর্তীকালে তাহলে পক্ষপাত বা ঘুষের জন্য পুনরুদ্ধার করতে সুবিধা হতো।

https://swarajyamag.com/politics/what-farmers-have-learnt-from-the-anti-caa-protests-blackmail-using-street-power-can-work

যাইহোক,এটি আবার অন্য গল্প। সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে ভবিষ্যতের এইরকম রাস্তার-ব্ল্যাকমেল কৌশলগুলি কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছে। যেহেতু বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে অত‍্যাচারী এবং দোষী হিসাবে দেখানোর জন্য সামাজিক মিডিয়া এবং জালি ভিডিওগুলি ব্যবহার করেছে – কিছু ক্ষেত্রে বা আংশিকভাবে সেগুলি সত্যি হতেই পারে – যদিও পুলিশকে তাদের নিজস্ব ভিডিও উপস্থাপনের জন্য, ক্ষতিগ্রস্থদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করার সমান প্রয়োজন রয়েছে এবং তাদের নিজস্ব ভিডিওগুলো সামনে আনার জন্য সময় দেওয়া উচিৎ।শুধুমাত্র থানাই যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে আসল ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরবে তা নয়, বিক্ষোভ চলাকালীন জনসমাবেশের সহিংসতা মোকাবেলা করার​ জন্য পুলিশ এবং অফিসারদের অবশ্যই বডি ক্যামেরা পরতে হবে যাতে তাদের সাথেও সত্যিকারের​ কী ঘটেছিল তার রেকর্ড থাকতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে পুলিশ সদস্যদের দেহক্যামগুলি আদর্শ; এখন ভারতেও এই প্রযুক্তি আনার সময় এসেছে।

থানায় এবং তাদের ব্যক্তির উপর ক্যামেরা থাকা নিশ্চিত করবে যে পুলিশ এবং প্রতিবাদকারী উভয়ই যথাযথ আচরণ করেছিল কিনা। উভয় পক্ষেরই জানা উচিত যে তারা যা বলে বা যা করে তা রেকর্ড করা যায় এবং প্রমাণ হিসাবে এনে দেখানোও যায় যে পুলিশকে কেন একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছিল। সমানভাবে, বিক্ষোভকারীরাও প্রশ্ন তুলতে পারবে যে তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ মানুষের সাথে আচরণ করার সময় পুলিশ তাদের সঠিক সন্মান দিয়েছিল কিনা?

শাহীন বাগের সময় বডি ক্যামেরা​ ব্যবহার করা উচিত ছিল যেখানে রোগী পুলিশ মহিলারা বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে সরকারী জায়গা থেকে এবং নির্ধারিত জায়গায় সরিয়ে দেয় যাতে ‘দাদীরা’ জনগণের অসুবিধা না করতে পারে। সমস্যাগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনেক সময় সরকারী জায়গা বা লোকালয়গুলি ব‍্যবহার করা যেতেই পারে, কিন্তু দীর্ঘকালীন প্রতিবাদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত জায়গা ব‍্যবহার করা উচিৎ নয়তো জনতাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিকেও সহিংসত আন্দোলন হিসাবে ধরা হতে পারে।

পুলিশ-প্রসাশন-বিচার ব্যবস্থার​ উচিৎ শক্তহাতে এইরকম কার্যকলাপ বন্ধ করা। নয়তো কোনো সঠিক কারণ ছাড়াই জনগণের এমন প্রতিবাদ এবং রাস্তায় সহিংসতা আদর্শ হয়ে উঠবে। এই মুহূর্তে রাষ্ট্র বেকায়দায় পড়েছে এবং জনতা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের মারধর করবে এটা যেমন গণতন্ত্র নয়; ঠিক তেমনই পুলিশ বাহিনী যদি জনতার হিংস্রতা রোধ করতে কিছুই করতে না পারে, তাহলে সেটাও কিন্তু গণতন্ত্রের সহায়ক নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.