১৩ এপ্রিল মাসের ১৯১৯ সালের তারিখ ছিল হিন্দুদের নববর্ষের দিন। সারা অমৃতসর (Amritsar) শহর উৎসব সাজে সজ্জিত ছিল। ১৬৯৯ সালে আনন্দপুর সাহিবে এই দিনেই গুরু গোবিন্দ সিং (Govind Singh) মোগল শক্তির অত্যাচারের বিরুদ্ধে হিন্দু পরিবারের সাহসী যুবকদের নিয়ে শিখ সৈনিক ‘খালসা’ সংগঠন স্থাপন করেছিলেন। আনন্দ মূখর দিনে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহণ করতে স্বর্ণমন্দিরের আশেপাশে এসেছিল। বিশহাজার মানুষ যার মধ্যে উৎসবের মেজাজ নিয়ে একটি ছোট গলির মধ্যে তিনদিক ঘেরা উদ্যানের একটা ছোট প্রবেশ পথ দিয়ে জালিয়ানওয়ালা বাগে (Jallianwala buggy) বিশেষ প্রার্থনা সভার জন্য জমায়েত হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও ছিল। নববর্ষের আনন্দ উৎসব, প্রার্থনা সভা। নেটিভদের এতটা স্পর্ধা, মেনে নিতে অসুবিধে হয়েছিলো ব্রিটিশ শাসকদের। একে ব্রিটিশ শাসন। তায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। সেই ধারা ভেঙে এতবড় জমায়েত।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অমৃতসর (Amritsar) শহরের পাঞ্জাবের (Punjab) গভর্ণর স্যার মাইকেল (Sir Michael) ও’ডায়ারের (Dyer) অনুমোদন ক্রমে বিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের নির্দ্দেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে কোনো সতর্ক বাণী নয়, সরাসরি জালিয়ানয়ালাবাগের (Jallianwala buggy) ছোটো প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর গুলিচালনার নির্দেশ দেন জেনারেল ডায়ার। আচমকা গুলিবর্ষণে হতচকিত হয়ে যান সাধারণ মানুষ। ভালো করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একের পর এক গুলিবিদ্ধ দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকে। ওই মাঠেই থাকা এক কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন বহু মহিলা ও শিশু। টানা ১০ মিনিটের ১৬৪০ রাউন্ড গুলিবর্ষণে একহাজারের বেশী মানুষ নিহত হয়েছিল। এই খবর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
খবর মাস খানেক পর রবীন্দ্রনাথের কাছে আসে । তিনি গান্ধীজির (Gandhiji) কাছে দীনবন্ধু (Dinobondhu) অ্যানড্রুজকে পাঠালেন। প্রস্তাব হল, গান্ধীজি (Gandhiji) ও রবীন্দ্রনাথ ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ পঞ্জাবে একসঙ্গে প্রবেশ করে আইন ভঙ্গ করে প্রতিবাদ জানাবেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব মান্য না হওয়ায় বড়লাটের কাছে একটি প্রতিবাদ পত্র লিখলেন। প্রতিবাদ পত্র পাঠানোর আগে সেটা অ্যানড্রুজকে পড়তে বলেন। তাঁর সেই চিঠি পড়ে অ্যানড্রুজ বলেছিলেন, ভাষাটা একটু নরম করা যায় কিনা। রবীন্দ্রনাথ কোন উত্তর না দিয়ে কেবল তাঁর দিকে ক্ষিপ্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকানোয় অ্যানড্রুজের মুখ বর্ণনায় বেরিয়ে ছিল—”Such a look as I had never seen in the eyes of Gurudev before or after।” ১৯১৯-এর ৩০মে রবীন্দ্রনাথ যে চিঠি ব্রিটিশ রাজশক্তিকে লিখেছিলেন, তার একটা অংশে লিখলেন, destruction of human lives, we must strongly assert that it can claim no political expediency, far less moral justification. The accounts of the insults and sufferings by our brothers in Punjab have trickled through the gagged silence, reaching every corner of India. “হতভাগ্য পাঞ্জাবীদিগকে যে রাজদন্ডে দন্ডিত করা হইয়াছে, তাহার অপরিমিত কঠোরতা ও সেই দন্ড প্রয়োগবিধির বিশেষত্ব, আমাদের মতে, কয়েকটি আধুনিক ও পূর্বতন দৃষ্টান্তবাদে সকল সভ্য শাসনতন্ত্রের ইতিহাসে তুলনাহীন।” তিনি চিঠিটি শেষ করেছিলেন এই বলে –These are the reasons which have painfully compelled me to ask Your Excellency, with due reference and regret, to relieve me of my title of Knighthood, which I had the honour to accept from His Majesty the King at the hands of your predecessor, for whose nobleness of heart I still entertain great admiration. “অন্তঃত আমি নিজের সম্বন্ধে এই কথা বলিতে পারি যে………নিজের সমস্ত বিশেষ সম্মান-চিহ্ন বর্জন করিয়া আমি তাহাদেরই পার্শ্বে নামিয়া দাঁড়াইতে ইচ্ছা করি।” আর তাই তাঁর অনুরোধ রাজাধিরাজ ভারতেশ্বর যেন তাঁকে দেওয়া ‘নাইট’ উপাধির সম্মান থেকে তাঁকে নিষ্কৃতি দান করেন।