CAA : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাঙালি হিন্দুদের প্রতি অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত #IndiaSupportsCAA

১৯৫০ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নেহেরুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের সময় তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছিলেন, “ভারতের বিভাজন যখন নিশ্চিত, আমি তখন বাংলা ভাগের পক্ষে জনমটি গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলাম। কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম যে বাংলা ভাগ না করলে আসাম সহ পুরো বাংলাই পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হতো। সেই সময়ে আমি এবং অনেকেই পূর্ববঙ্গে অবস্থিত হিন্দুদের আশ্বস্ত করেছিলাম যে ভবিষ্যতে পাকিস্তান সরকারের হাতে যদি তারা লাঞ্ছিত হন, নাগরিকত্বের ন্যূনতম শর্ত যদি লঙ্ঘিত হয়, তাহলে স্বাধীন ভারত এবং তার নাগরিক স্রেফ নির্বাক দর্শক হয়ে বসে থাকবে না। গত আড়াই বছর তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে, অতীতের দুর্দশার সমস্ত উদাহরণকেও ছাপিয়ে গেছে। আমরা যেন ভুলে না যাই যে পূর্ববঙ্গে অবস্থিত বাঙালি হিন্দুরা ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাকবচের হকদার। এই হকদার তারা স্রেফ মানবিকতার খাতিরে নয়, বরং কয়েক প্রজন্ম ধরে নিঃশর্তে ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও বৌদ্ধিক উত্তরণে তাদের অবদানের জোরে। ওপারের যেসবমনীষীর স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটেছে ও যারা হাসিমুখে দেশের জন্য ফাঁসিকাঠে ঝুলেছেন, আজ তাদেরও সমষ্টিগত দাবি এটা।” স্বাধীনতা এসেছে অনেক মানুষের কান্নার বিনিময়ে। দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তারা যদি ওপর থেকে দেখতেন স্বাধীনতাও কত মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে অসহনীয় কষ্ট, আমি নিশ্চিত তারাও তাদের সাথে সমানতালে কাঁদতেন। ধরা যাক মাষ্টারদার কথা। যে বীরগাথা তিনি রচনা করেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য সেই চট্টগ্রামই চলে গেল পাকিস্তান নামক এক নব্যগঠিত রাষ্ট্রে!কুখ্যাত র্যাডক্লিফ লাইন শুধু একটি ম্যাপের ওপর দাগ টেনে জমি, জল, গাছ, নদী নালাই ভাগ করেনি, ভেঙে টুকরো করে দিল মানুষের আত্মা, মানুষের অস্তিত্বকে।
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কুয়েজের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স ইন সলিটুড’ এ লেখা আছে, কোন দেশের মাটি তখনই তাদের হয় যখন কোন পূর্বপূরুষ সেই মাটিতে সমাধিস্থ হন। হিন্দুদের মৃতদেহ সমাধিস্থ করার প্রথা নেই, কিন্তু চিতায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দেহ তো মাটিতেই মিশে যায়। সেই পূর্বপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত মাটি, আকাশ, জল, বায়ু ছেড়ে এক কাপড়ে চলে আসতে হয় লক্ষ লক্ষ পূর্ববঙ্গে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালীদের – শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে। এখানে এসে অবর্ণনীয় কষ্ট, লড়াই, ঘাম ঝরিয়ে মানুষগুলি নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন, কিন্তু পরিচয়ের প্রশ্নে তারা চিরকালই থেকে গেছেন উদ্বাস্তু। অথচ এ ভারতবর্ষে তাদের ততটাই অধিকার, যতটা বাকিদের। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহজিকে ধন্যবাদ, এই সমস্ত মানুষের নাগরিকত্বের দাবিকে অবশেষে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। স্বাধীনতার সত্তর বছর পর এই স্বীকৃতি এলো, এটা অবশ্যই আমাদের লজ্জা! কিন্তু ইংরেজিতে একটা কথা আছে-বেটার লেট দ্যান নেভার! অবশ্য রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অপপ্রচার চলবেই! ধর্মনিরপেক্ষতার নামে একচক্ষু উস্কানি থাকবেই। কিন্তু তাতে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মর্যাদা বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হয় না। এই আইন শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক মানুষকে নাগরিকত্ব প্রদানের আইন, কারুর নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার আইন নয়। আমার স্থির বিশ্বাস, বাংলার মানুষ এই অপপ্রচারকে বিশ্বাস করবেন না।
ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়
(অধিকর্তা, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন, নয়া দিল্লী)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.