কংগ্রেসী আমলে কেন দূরদর্শনে বন্ধ হয়েছিল রামায়ণ ও চাণক্য অনুষ্ঠান?

সরকারী প্রসার ভারতী ওয়েবসাইট দূরদর্শন (DD) কে ভারত সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ‘স্বায়ত্তশাসিত’ জনসেবা সম্প্রচারকারী হিসাবে বর্ণনা করেছে। এখানে মূল শব্দটি “স্বায়ত্তশাসিত”।ডিডি একটি বিনোদনমূলক পরিষেবা প্রদানকারী চ্যানেল, যা ভয় বা পক্ষপাতহীন বা শাসকদলের শাসনের চাপ ছাড়াই একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দুটো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, কংগ্রেস আমলে ডিডি স্ব‌ইচ্ছায় কাজ করতে পারেনি।

খ্যাতিমান লোকশিল্পী মালিনী অবস্তি মার্চ মাসে নিউজ নেশনকে একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন, একটা সময় ছিল যখন তাঁকে পাবলিক ব্রডকাস্টার দূরদর্শনে গান করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁকে ভগবান রামের জন্মের একটি স্তোত্র গাইবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি সম্মত হয়েছিলেন কিন্তু ওই স্তবকের এক জায়গায় অযোধ্যায় ভগবান রামের জন্মের কথা উল্লেখ ছিল। হঠাৎ, কর্তৃপক্ষ এসে তাকে বারণ করে, এটি সম্প্রচার করা যাবে না এবং তাঁকে অন্য একটি স্তোত্র গাইতে বলা হয়েছিল।


তিনি জানিয়েছেন, কৌতুহলবশত কর্তৃপক্ষকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন তাঁকে থামিয়ে দেওয়ার কারণ কী? তিনি প্রত্যুত্তরে জানতে পেরেছিলেন, তিনি কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন করতে বাধ্য। কিন্তু একজন একনিষ্ঠ রামভক্ত হিসেবে তিনি স্টুডিও ছেড়ে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলেন।

রামায়ণ একটি হিন্দু মহাকাব্য এবং হিন্দু ধর্মতত্ত্বের মূল অংশ। রামায়ণ টিভি শোয়ের পরিচালক রামানন্দ সাগরের ছেলে প্রেম সাগর একটি বই প্রকাশ করেছে, সেখানে উল্লেখ করেছেন কীভাবে “রামায়ণ” টেলিভিশন শোকে ধর্মনিরপেক্ষ করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল।সাগরিকা ঘোষের বাবা এবং তৎকালীন দূরদর্শনের মহাপরিচালক ভাস্কর ঘোষ শো বন্ধ করার জন্য দুসপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রিয়তার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, কৌশলবিদ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চাণক্যকে ঘিরে ৪৭ এপিসোডের চাণক্য সিরিয়াস ১৯৯১ এবং ১৯৯২ সালে ডিডিতে সম্প্রপ্রচারিত হয়েছিল। ড. চন্দ্রপ্রকাশ দ্বিবেদীর রচিত ও পরিচালিত অনুষ্ঠানটি দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছিল।

ড.দ্বিবেদী বলেছেন, ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে এই অনুষ্ঠানটি বন্ধ করার জন্য বলা হয়। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছিল, চ্যানেলের কর্ম পরিকল্পনার সাথে এই অনুষ্ঠান খাপ খায় না। অথচ তিনি অবাক হয়েছিলেন, টিপু সুলতানের মতো ঐতিহাসিক শো তখন চ্যানেলে চালু ছিল।

রামায়ণ এবং চাণক্যের জীবন পাঠ ভারতীয় ইতিহাস এবং সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু কংগ্রেস-যুগে, ভারতের ঐতিহ্য প্রচারকারী শিল্পীরা প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আড়ালে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আমলাতান্ত্রিক এবং প্রশাসনিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.