১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবে অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গুলিতে বহু ভারতীয় নিহত হয়েছিলেন। শনিবার ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে এদিন একটি ডাকটিকিট ও নতুন ১০০ টাকার কয়েন প্রকাশ করলেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু।

এদিন জালিয়ানওয়ালাবাগের শহিদদের স্মারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে উপরাষ্ট্রপতি ভিজিটর্স বুকে লেখেন, আমি নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। এই স্থানে ১০০ বছর আগে যাঁরা জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাঁদের সেলাম জানাই। তাঁরা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সেজন্য তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল।

উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে জালিয়ানওয়ালাবাগে যান পাঞ্জাবের রাজ্যপাল ভি পি সিং বাদনোর। পাঞ্জাব পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা সেখানে শহিদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান। এর পরে উপরাষ্ট্রপতি ডাকটিকিট ও কয়েন প্রকাশ করেন।

১০০ বছর আগে বৈশাখীর দিনে ব্রিটিশের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জালিয়ানওয়ালাবাগে নারী ও শিশু সহ কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। ব্রিটিশ বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে জনতার ওপরে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়।

শনিবার বেঙ্কাইয়া নায়ডু বাদে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং জালিয়ানওয়ালাবাগে শহিদ স্মারকে শ্রদ্ধা জানান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পাঞ্জাবের আর এক মন্ত্রী নভজ্যোৎ সিং সিধু। একই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষও এদিন জালিয়ানওয়ালাবাগে শহিদ স্মৃতি পরিদর্শন করেন।

শনিবার ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার ডোমিনিক অ্যাসকুইথ ওই গণহত্যার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ক্ষমা চাইবে কিনা সেকথা তিনি সরাসরি জানাননি। এর আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-ও ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু অমরিন্দর সিং বলেন, ওতে হবে না। ব্রিটিশ সরকারকে নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হবে।

জানলিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কলঙ্কিত অধ্যায় বলে পরিচিত। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছিল, মারা গিয়েছেন ৩৭৯ জন। যদিও বেসরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে ক্লরা হয়। ভারতীয় ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, সেদিনের গুলিবর্ষণে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রগতিশীল মানুষজন ব্রিটিশ সরকারের নিন্দা করেন। ভারতের অভ্যন্তরেও ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.