বসুধৈব কুটুম্বকম

“অয়ং নিজঃ পরোবেতি গণনা লঘুচেতসাম।

উদার চরিতানাম তু বসুধৈব কুটুম্বকম।।“– “এটা আমার, ওটা অন্যের – এই ভাব শুধু এক ক্ষুদ্র স্বার্থবাদী মানুষের। এক উদার চেতনা সম্পন্ন মানুষ এই পৃথিবীর সবাইকে একই পরিবারভুক্ত ভাবে।“


১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার চিকাগো শহরের বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে ভারতবর্ষের প্রতিনিধি স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক ধার্মিক ভাসনের ১২৫ বছর পুর্ন হল। সমগ্র আমেরিকাবাসিদের ‘My Sisters and brothers of America’ সম্বোধন করে সেদিন স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ও ধর্মিয় আত্মার যে প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তা বিশ্ব আজও মনে রেখেছে। 
ধর্মের বিভিন্ন রূপের সাবলীল ব্যাখ্যা সেদিন তিনি করেছিলেন এবং সারা পৃথিবীকে মেনে নিতে বাধ্য করেছিলেন যে সব ধর্মই পরম সচ্চীদানন্দের অংশ। ধর্মিয় গোঁড়ামিকে উপেক্ষা করে সঠিক ধর্ম মেনে চলা মানবসভ্যতার ক্ষেত্রে কতটা প্রয়োজনীয় তাও তিনি সেদিন ব্যাখ্যা করেছিলেন। সারা বিশ্বকে তিনি সেদিন বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন হিন্দু সভ্যতার শিকড় নিয়োজিত আছে হিন্দু ধর্মের পটভূমিতে। সারা বিশ্বকে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করার যে সুত্র হিন্দু ধর্মের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে ব্যাখ্যা করা আছে তাই তিনি সেদিন বিশ্বের সামনে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন।

 একবিংশ শতাব্দীতে সারা পৃথিবী যখন ধর্মের রূপ কিরকম, ধর্মের পথ কিরকম, ধর্মমত প্রকাশের সঠিক উপায় কি, এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের সম্পর্কের পন্থা কিরকম হবে – সেই নিয়ে চুলচেরা বিচারে ব্যস্ত, ১২৫ বছর আগে স্বামীজি সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছেন। আধুনিক ভারতের জনগণে ধর্মিয় চেতনাকে সঠিকভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য স্বামিজির সেই কথাগুলি আজ স্মরণ করার বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পরেছে।


ভারতীয় সভ্যতার যে মূল মন্ত্র “বসুধইব কুটুম্বকম” তার অপুর্ব ব্যাখ্যা স্বামীজি চিকাগো শহরে করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “I am proud to belong to a religion which has taught the world both tolerance and universal acceptance. We believe not only in universal toleration, but we accept all religions as true. I am proud to belong to a nation which has sheltered the persecuted and the refugees of all religions and all nations of the earth.” আজ সম্প্রদায়, ভাসা, জাতিভেদের জাঁতাকলে মানব সভ্যতা ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে ধাবমান হতে চলেছে। ভারতের এই সামাজিক দুঃসময়ে স্বামিজির জীবনী, তাঁর চিকাগো ভাসনের সারমর্ম অনুধাবন করার বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পরেছে। স্বামী বিবেকানন্দ সারা বিশ্বকে হুশিয়ার করে চিকাগোয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন “I 
fervently hope that the bell that tolled this morning in honor of this convention may be the death-knell of all fanaticism, of all persecutions with the sword or with the pen and of all uncharitable feelings between persons wending their ways to the same goal.” বর্তমান ও আগামী পৃথিবীর মঙ্গলার্থে আমাদের তা মনে রাখা প্রয়োজন। 


©অদিতি চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.