সাম্প্রতিক কালে বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিক আকাদেমির চতুর্থ বার্ষিক সভায় একটি চ্যাট শো আয়োজিত হয়েছিল। এই চ্যাট শোতে উপস্থিত ছিলেন দ্য তাসখন্দ ফাইল ছবির পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। ছবিটি নির্মিত হয়েছে ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জির রহস্য মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। ইন্ডিক অ্যাকাডেমি বিবেকবাবুকে তাঁর পরিচালিত বুদ্ধ ইন আ ট্র্যাফিক জ্যাম নির্মাণের কাহিনি নিয়ে একটি পুস্তক প্রকাশের জন্য অনুরধ করেন। বিবেক অগ্নিহত্রি রচিত আরবান নকশাল বইটি সর্বাধিক বিক্রিত পুস্তক ছিল এক সময়। ইন্ডিক আকাদেমি বিবেক বাবুর দ্য তাসখন্দ ফাইল ছবিটির ইন্টেলেকচুয়াল পার্টনার ।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু , স্বমহিমায় উজ্জ্বল ও প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। একটা সময় ভারত মানেই নেহরু এমনটাই মনে করা হত । তাঁর জীবৎকালে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠলেও ব্যাক্তিত্ত্বের উজ্জ্বলতায় সব কিছুই ঢাকা পড়ে যেত । নেহরুর মৃত্যুর পর কে প্রধানমন্ত্রী হবেন টা নিয়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয় । এরকম একটি সময়ে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার হিসেবে তুলে ধরা হয়। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ও ছোটখাটো চেহারার এই মানুষটিকে অনেকেই সেই সময় সঠিক মূল্য দিতে চান নি । ১৯৬৫তে পাকিস্তান এই ভুলটি করে এবং নিজেদের জন্য বিপদ ডেকে আনে । নেহরুর চিন্তাশীলতা ও দ্বিধাগ্রস্ততার স্থলে শাস্ত্রীজির নির্ভীকতা তাঁকে মুহূর্তের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৬৫ এর যুদ্ধের তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানি সৈন্যদের বিতারিত করে পাকিস্তানের সীমান্তের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং সীমান্তবর্তি ভারতের মরুভুমিতে পাকিস্তানি সেনারা ছত্রখান হয়ে যায়। শাস্ত্রীজি যুদ্ধের সময় বিপুল গন জাগরনের ব্যবস্থা করেন। সেই সময় ভারতীয়রা প্রতি সোমবার একবেলা করে উপোষ থেকে শাস্ত্রী ব্রত পালন করত । যুদ্ধের জন্য খাদ্য সঙ্কটের মোকাবিলা করতে এই ব্যাবস্থা গৃহীত হয় । ভারতিয়রা যুদ্ধের খরচ চালানর জন্য তাদের গহনা দান করেন শাস্ত্রীজির কথায় ।
যখন সমস্ত দেশ শাস্ত্রীজির দেশপ্রেম মন্ত্রে জাগরিত হয়ে উঠছে সেই সময় হথাত করেই শাস্ত্রীজির মৃত্যুর খবর শোনা যায় । ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচারিত হলেও কোনরকম ময়না তদন্ত হয় নি তাঁর মৃতদেহের । ফলত এই মৃত্যুকে ঘিরে রহসস্য ঘনীভূত হতে থাকে এবং মনে করা হয় শাস্ত্রীজির মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না । এখন পর্যন্ত এই মৃত্যুর কোন কিনারা হোয় নি। আশা করা যায় এই চলচিত্র আমাদের সামনে অনেক অজানা সত্যকে তুলে ধরবে । চলচিত্রতিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত চ্যাট শোটিতে উপস্থিত ছিলেন শেফালি বৈদ্য , গুরু প্রকাশ , বিনয় মঙ্গল , অর্জুন কাদিয়ান , গায়ত্রী আইয়ার প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ । বিবেক অগ্নিহোত্রী কেবলমাত্র এই অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতেই দুবাই থেকে বিমান যোগে আসেন । কেন এরকম একটি বিতর্কিত বিষয়ে ছবি করতে উদ্যোগী হয়েছেন সেই বিষয়ে আলোকপাত করেন বিবেক । বহু দিন থেকেই তিনি এই বিষয়ে গবেষণা করছিলেন এবং কাজ করতে গিয়ে দেখেন আঞ্চলিক সংবাদ সনস্থাগুলি এই বিষয়ে আনেক ভাল ভাল কাজ করেছে যা কেন্দ্রীয় এবং তথাকথিত নামী সংস্থাগুলিকে লজ্জায় ফেলে দেবে । ছত্তিসগড়ের এক বয়স্ক ভদ্রলোক বহু দিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করে বহু তত্থ্য সংগ্রহ করেছে।
শ্বেতা এই চলচিত্রের তরুণতম অভিনেত্রী। তিনি এই ছবিতে সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। শ্বেতা যে প্রজন্মের মানুষ সেই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা শাস্ত্রী জীর বিষয়ে খুব কমই জানেন, কিন্তু শ্বেতা জানান এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি সমস্ত ইতিহাসটা জেনেছেন এবং তাতে তিনি আপ্লুত । কোন কোন সংলাপ তাঁর চোখে জল পর্যন্ত এনে দিয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে শ্বেটা এঈ ছবিতে শাস্ত্রী জীর সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন ও সত্যের খোঁজ করেন । পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী শুটিং এর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে বলেন শুটিং শুরু হলে অভিনেতা অভিনেত্রীরা সকলেই নিজেদেরকে চরিত্রের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে ফেলেন। একটি দৃশ্য যেখানে শাস্ত্রী জীর মৃত্যুর তদন্তএর আলোচনা চলছে তা ক্রমাগত পনের মিনিট ধরে চলায় বিবেক সেটিকে সামান্য ছোট করে দিয়ে শুটিং ফ্লোর ত্যাগ করেন , ফিরে এসে তিনি দেখেন অভিনেতা অভিনেত্রীরা তখনো তাঁদের আলোচনা থামান নি এবং শ্বেতার মতো তরুণী অভিনেত্রী বারবার প্রশ্ন তুলছেন আমরা নেহরুর দেশের মানুষ বলে পরিচিত হই তবে কেন শাস্ত্রী জীর দেশের মানুষ হিসাবে পরিচিতি হব না । এইভাবে যদি আমরা পঞ্চাশ বছরের পেছনের সত্যকে ভুলে যাই তাহলে ৫০০ বছর আগের ইতিহাস কিভাবে মনে রাখব । এইভাবে নতুন প্রজন্মের মনে শাস্ত্রী জীর জন্য জিজ্ঞাসা তৈরি হচ্ছে । এই সময় যখন সোশ্যাল মিডিয়া মতাদর্শ ঠিক করে দেয় সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই ছবি সত্যের খোঁজ করেছে ছবিটি । একজন মৃত মানুষকে ঘিরে ছবিটি তৈরি হলেও অবশ্যই থ্রিলারের স্বাদ পেতে সাহায্য করবে এবং দেখার পর এক দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা ও অনুরণনের ছাপ রেখে দেবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.