কোভিড মহামারির কালে শাখার সংখ্যা এবং নিজদের কর্মক্ষেত্রের পরিমাণ দুইই বাড়িয়েছে আরএসএস
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনমোহন বৈদ্য শনিবার পুনেতে আরএসএসের তিন দিনের বার্ষিক সমন্বয় সভার সমাপ্তিতে সাংবাদিকদের কাছে সভায় আলোচিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ও সঙ্ঘের অবস্থান তুলে ধরেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো মণিপুরের পরিস্থিতি।
মণিপুর নিয়ে মনমোহন বৈদ্য নিজেদের উদ্বেগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে মণিপুরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক কিন্তু সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কারণ সংঘর্ষ হচ্ছে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে।
তিনি বলেন‚ “মণিপুরের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ! আমাদের স্বয়ংসেবকরা এই বৈঠকে আমাদের রিপোর্ট করেছেন। আমরা সবাই আমাদের কাজ করছি কিন্তু কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্বের জন্য সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আরএসএসের কাজের অংশ হিসাবে আমাদের স্বয়ংসেবকরা দুই দলের সাথে যোগাযোগ করছে এবং উভয়ের জন্য সেবামূলক কাজ করা হচ্ছে।”
২০১৪ সাল থেকে সংঘের ৩৬টি সহযোগীর সংগঠনের মধ্যে একটি সংগঠন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর কাজকে সঙ্ঘ কীভাবে মূল্যায়ন করে‚ এই প্রশ্নের জবাবে, শ্রী বৈদ্য জানান‚ “১৬ইমে, ২০১৪ তারিখে, সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৮ই মে, দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্রে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছিল, যার প্রথম লাইন ছিল – ‘আজ, ১৮ই মে, ২০১৪, ইতিহাসে সেই দিন হতে চলেছে যেদিন ব্রিটেন অবশেষে ভারত ছাড়ে।”
তিনি আরও বলেন যে ২০১৪ এর পরে, ভারত ধীরে ধীরে তার সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে বিশ্বে আবির্ভূত হতে শুরু করেছিল। বিদেশী, প্রতিরক্ষা এবং শিক্ষা নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। সারা বিশ্ব এইদিকে তাকিয়ে আছে। তবে যা যা ক্ষতি করা হয়েছে তা পূর্বাবস্থায় আনতে কমপক্ষে আরও ২৫-৩০ বছর সময় লাগবে বলেও তিনি জানান।
সম্প্রতি উদ্ভূত ‘ভারত ও ইন্ডিয়া’ বিতর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শ্রী বৈদ্য বলেন যে বিশ্বের কোনো দেশেরই দুটি নাম নেই। “ভারত নামের সভ্যতাগত মূল্য রয়েছে এবং এই কারণেই এটি শুধুমাত্র ভারত হওয়া উচিত”।
সংরক্ষণের বিষয়ে আরএসএস-এর অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন যে ভারতীয় তফসিলি জাতি (এসসি)/তফসিলি উপজাতি (এসটি) লোকেরা বহুদিন ধরে সম্মান, সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। তাদের মূল স্রোতে আনতে সংবিধান অনুযায়ী যা কিছু সংরক্ষণ আছে তা দিতে হবে। এছাড়াও, এই সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত।
সমাজে মেয়েদের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন যে‚ ৩৬টি সহযোগী সংগঠনের ২৪৬ জন প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই একমত ছিল যে„কোনো সমাজের ক্ষুদ্রতম একক পরিবারে নারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
মিঃ বৈদ্য বলেন “সমাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, এটা প্রশংসনীয়। এই প্রেক্ষাপটে, সঙ্ঘের শতবর্ষী প্রকল্পের অধীনে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছিল। আরও বেশি নারী অংশগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য, ২০২৫ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ২১১টি সম্মেলন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ পর্যন্ত ১২টি প্রদেশে ৭৩টি এই ধরনের সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে, যেগুলো ভালো সাড়া পেয়েছে, যেখানে ১.২৩ লাখেরও বেশি নারী অংশগ্রহণ করেছে।
সঙ্ঘের কার্যক্ষেত্রের বিস্তার নিয়ে তিনি বলেন যে কোভিড এর আগে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৮‚৯১৩ টি স্থানে ৬২‚৪৯১ টি শাখা চলছিল। এছাড়া ২০‚৩০৩ টি স্থানে সাপ্তাহিক মিলন এবং ৮‚৭৩২ টি স্থানে মাসিক মিলন হত। মহামারী চলাকালীন সেবাকাযের ফলে জনসাধারণের সাথে জনসংযোগ বাড়ার ফলে ২০২৩ সালে, শাখার সংখ্যা বেড়ে ৬৮‚৬৫১ টি হয়েছে এবং তারা এখন ৬২‚৬১৩ টি স্থানে চলছে। অর্থাৎ কোভিড মহামারির কালে শাখার সংখ্যা এবং নিজদের কর্মক্ষেত্রের পরিমাণ দুইই বাড়িয়েছে আরএসএস!
সৌভিক দত্ত