দাহানু নামের ছোট্ট একটা জঙ্গল পরিবৃত জনপদ, আর তাকে ঘিরেই ভারতীয় রাজনীতি তোলপাড় বিগত কয়েক দিন ধরেই। রাজনীতির তোয়াক্কা না করেও বলা ভালো তোলপাড় ভারতীয় জন সমাজ। আতঙ্কে শিহরিত সভ্য মানুষ দুইজন সন্তের নির্মম হত্যা লীলায়। হয়তো এই ঘটনা চেপেই যেত নির্বাচিত সরকার। সরকার চেপে যেতেই চেপে গিয়েছিল মিডিয়া। জানাজানি হলো সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে। ঘটনা জানতেই সময় লেগে গেলো অনেক।
এতক্ষণে হয়তো সাধারণ মানুষ সকলেই দেখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক ভিডিও। একদল উন্মত্ত মানুষ পাশবিক প্রবৃত্তি নিয়ে দুইজন সর্বত্যাগী সন্তকে পিটিয়ে পিটিয়ে মারছে, আবার একে অন্যকে উৎসাহিত করছেন ভয়ংকর জিঘাংসা য়। “মার শোয়েব মার”… নাড়িয়ে দিয়েছে অসমুদ্র হিমাচল এর আপামর জনসাধারণ কে।
সারা বাংলার প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া ও চুপ করে থেকেছে এতগুলো দিন ধরে। শ্মশানের নীরবতা পালন করছে সবাই কোনো এক অজানা কারণে। কিন্তু এই ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে দ্রুত বদলে যেতে থাকা পটভূমি হয়তো এবার ভারত জুড়ে একটি বিরাট পরিবর্তন আনতে চলেছে। এই ঘোর নিন্দনীয় কাজের জন্য সরকারের নীরবতা ক্রুদ্ধ ভারতীয় সন্ত সমাজ। ক্ষোভে ফেটে পড়ছে বিভিন্ন আখরা।
আমরা এই কদিনে এই ঘটনার অভিঘাত সম্বন্ধে জানতে চেয়েছি আর শিউরে উঠেছি এর পরিণাম ভেবে। বাংলার এক নাগা সন্ত মহন্ত স্বামী সুন্দর গিরি মহারাজের বক্তব্য হলো, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওরা মারতে ছেয়েছিল আর মেরেছেও, কিন্তু বুঝতে পারেনি কাকে মারছে। হাত পড়েছে নাগা সাধুদের সবচাইতে দুর্ধর্ষ জুনা আখড়া র উপর। এর ফল ওদের ভুগতেই হবে”। আমরা তার সাথে কথা বলেই জানতে পারলাম বিভিন্ন নাগা মঠের মধ্যে পারস্পরিক বিষয়ে মতান্তর থাকতে পারে কিন্তু এই বিষয়ে সকলেই এক মত। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে নতুবা সমগ্র অঞ্চলটিকে ওনাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। শাস্তি দেবার সক্ষমতা নাগা মঠের আছে।
বাংলার বাইরে বিভিন্ন সন্ত এবং মঠের অবস্থাও তথৈবচ। আখড়া সমন্নয় কারি মহন্তের বক্তব্যে ও এক রাশ ক্ষোভ বেরিয়ে এসেছে বারুদের মত।তা৺র বক্তব্য সমস্ত মঠের সাধুদের মধ্যে একটি ভয়ংকর উত্তেজনা কাজ করছে। 3 তারিখ লকডাউন কাটলেই সমস্ত সন্তরা মহারাষ্ট্র সরকারের সনদ ঘেরাও করবেন এই ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য। যদি সরকার কোনো দিশা দিতে না পারেন, তবে সাধুরা তার পর অকুস্থলের দিকে এগিয়ে যাবেন আর নিজেরাই শাস্তি দেবেন। স্বভাবতই এই সন্ত দের এই ভয়ংকর রোষের মুখে চিন্তায় পড়েছে সরকার।
সরকারের চিন্তা বাড়িয়ে এবার নিজের বক্তব্য রাখলেন আর এক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, দাদী মা সাধ্বী রিতম্ভরা জি। উনিও জানিয়েছেন এই সন্ত হত্যার বিষয়টি ওনাকে কষ্ট দিয়েছে। উনিও এর বিচার চেয়েছেন অতি সত্তর। আমরা যোগাযোগ করেছিলাম বাংলার একটি ধর্মীয় সংগঠন ধর্মচক্র এর উপদেষ্টা বিশেষ পরিচিত মুখ তেজস্বী সাধু শ্রী কার্তিক মহারাজ (Shri Kartik Maharaj) এর সাথে। উনি দৃশ্যতই ভেঙে পড়েছেন এই ঘটনায়। ক্ষোভে ফুঁসে উঠে তিনি বলেন” এই ঘটনা সরাসরি আমাদের সনাতন হিন্দু ধর্মের উপর আঘাত। এই আঘাত নেমে এসেছে কিছু রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে। দশনামি আখড়া র ডাকে উনিও সন্ত দের মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) যাত্রার অপেক্ষায় আছেন। উনি আরো বলেন যে ধর্ম রক্ষার জন্য এবার আমাদের সকলকে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামতে হবে।