আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর আত্মা নিশ্চিত শান্তি পেলেন…।

ড. মুখার্জি, কাশ্মীরে, ধারা ৩৭০-এর কারণে তৈরি, দুই প্রধান-দুই নিশান-দুই সংবিধান এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ করা কালীন কাশ্মীরের কারাগারেই ২৩ জুন, ১৯৫৩ তার মৃত্যু হয়। এই কাশ্মীর সত্যাগ্রহের সময় অটল বিহারী বাজপেয়ী ও ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সঙ্গী ছিলেন এবং ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর এই ৩৭০ ধারার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।

১৯৪৭-এর 23 অক্টোবর কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। সম্পূর্ণ কাশ্মীর, গিলগিট-বাল্টিস্তান সমেত, বিনা শর্তে ভারতের অভিযোগ অন্তর্ভুক্তির জন্য কাশ্মীরের মহারাজ হরি সিং তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব, বি পি মেননের সামনে চুক্তিতে সই করেন। এই অন্তর্ভুক্তির চুক্তিতে কোনও দাবি ছিল না, কোন শর্ত ছিল না তাহলে ৩৭০ ধারা কোথা থেকে আসলো ?

এই ধারা ৩৭০ ১৯৫২-র ১৭ নভেম্বর থেকে লাগু হয়, অর্থাৎ এটি মূল সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৯৪৭-এর ২৬ অক্টোবর থেকে ১৯৫২-র ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ পাঁচ বছর কাশ্মীর নিয়ে কারো কোনও সমস্যা ছিলনা। একমাত্র ব্যতিক্রম শেখ-আবদুল্লাহ তার, মনে হয়েছিল যে কাশ্মীরে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার জন্য কিছু পৃথক ব্যবস্থা থাকা উচিত। এজন্য জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে কথা বলেন শেখ আব্দুল্লাহ রাজ্যের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাসূচক ধারার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান।

৩৭০ ধারার সম্পূর্ণ খসড়া শেখ আব্দুল্লাহ নেহেরুর সঙ্গে মিলে লেখেন। এত বড় ভূমিকা ছিল এন গোপালস্বামী আয়েঙ্গার যিনি আইসিএসসি ছিলেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। স্বাধীনতার পর রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা এবং মন্ত্রালয় হীন মন্ত্রী ছিলেন। পরে তাকে রেলমন্ত্রী করা হয়।

নেহেরু শেখ আবদুল্লাকে এই পরামর্শ দেন যে সংবিধানে ৩৭০ ধারার ব্যবস্থা করার পক্ষে গোপালস্বামী আয়েঙ্গারই যোগ্য ব্যক্তি, কারণ তিনি সংবিধান সভার সদস্য ছিলেন। পরবর্তী কালে, যখন নেহেরু কাশ্মীর সমস্যাকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে নিয়ে যান, তখন এই আয়েঙ্গারই মহাশয়ই ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

যেহেতু সর্দার প্যাটেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, এই ধরার জন্য তাঁর সম্মতিরও প্রয়োজন ছিল। এই প্রসঙ্গে ১৯৪৭-এর ২৭ ডিসেম্বর নেহেরু লিখেছেন –

“Gopalaswamy Ayyangar has been especially asked to help in Kashmir matters. Both for this reason and because of his intimate knowledge and experience of Kashmir, he had to be given full latitude. I really do not know where the States Ministry (Sardar Patel’s ministry) comes into the picture except that it should be kept informed for the steps taken. All this was done at my instance and I do not propose to abdicate my functions in regard to matters for which I consider myself responsible. May Is …”

এই সম্পূর্ণ কালখণ্ডে ভি শংকর আয়ার, আই এ এস অফিসার সর্দার প্যাটেল এর নিজস্ব সচিব ছিলেন। তিনি এই সম্পূর্ণ ঘটনাক্রমের সমস্ত নথিপত্র সযত্নে আগলে রেখেছেন। সেই নথিপত্র অনুসারে কাশ্মীর থেকে কোন দাবি না ওঠা সত্ত্বেও, নেহেরু শেখ আব্দুল্লার সঙ্গে, সরদার প্যাটেলকে নাজানিয়ে ৩৭০ ধারা চূড়ান্ত করেন গোপালস্বামী আয়েঙ্গারকে তারিখে দায়িত্ব দেওয়া হয় যাতে এই ধারা সংবিধান সভায় গৃহীত হয়।

প্রথমে এই খসড়াকে কংগ্রেস কার্যবাহিনীর সামনে রাখা হয়। সেখানে এটির পুরো বিরোধিতা হয়। সরদার প্যাটেল মধ্যস্থতা করে কার্যকারীনিকে এটি গ্রহণের জন্য আবেদন করেন।

যখন এই বিষয়টি সংবিধান সভায় উত্থাপন করা হয়, তখন ডাক্তার বাবাসাহেব আম্বেদকরের এই রাষ্ট্রবিভাজনকারী ধারাটি একদমই পছন্দ না হওয়ায়, তিনি সেটির তীব্র বিরোধিতা করেন। দুর্ভাগ্যবশত সেই সময় নেহেরুর ভাবমূর্তি ‘লারজার দন লাইফ’ হওয়ায় তার আগ্রহে ৩৭০ ধারাকে সংবিধানে যুক্ত করা হয়। পরে নেহেরুর আগ্রহে ১৯৫৪-র ১৪ই মে সংবিধানে ৩৫এ ধারা যুক্ত হয়। এই সম্পূর্ণ ঘটনা প্রবাহে ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর খুবই অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি ৩৭০ ধারাকে অস্থায়ী রাখার ব্যবস্থা করেন। লোকসভায় চর্চার সময় তিনি এই ধারার উপর কিছুই বললেন না।

জহরলাল নেহেরু, শেখ আব্দুল্লাহ এবং গোপালস্বামী আয়েঙ্গার এই ত্রয়ী বিগত সত্তর বছর ধরে কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার যে কাঠামো তৈরি করে রেখেছিলেন, তা আজ মোদী-শাহ-ডোভাল-এর ত্রয়ী ধ্বংস করে দিলেন..! আজ প্রকৃত অর্থেই ভারত ঐক্যবদ্ধ হল, এক হলো…!

প্রশান্ত পোল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.