গলায় কোপ, পা ভেঙে আগুন ধরিয়েছিল ধর্ষকরা, যন্ত্রণার কথা বললেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা

ভোর ৪টে। রায়বরেলী যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে স্টেশন যাচ্ছিলেন তরুণী।  গণধর্ষিতা হয়েছেন।  রক্তে ভিজেছে শরীর, মন।  অপরাধীদের শাস্তি দিতেই হবে, এই প্রতিজ্ঞা ছিল শরীরের প্রতিটি শিরায়, উপশিরায়।  রেলগেটের সামনে আসতেই ঘিরে ধরে পাঁচজন।  তার মধ্যে তিনজন তরুণীর খুব চেনা।  সেই মুখ, নির্লজ্জ চোখ, কঠিন মুখে ফুটে বেরোচ্ছে প্রতিহিংসা।  আর্তনাদ করে উঠেছিলেন তরুণী। 

আধপোড়া শরীর নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা।  তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টায় অভিযুক্ত পাঁচজনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঘটনার দিনের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন পুলিশ কর্তাদের।  বিবরণ দিযেছেন যন্ত্রণার প্রতিটা মুহূর্তের কথা।

নির্যাতিতার কথায়, গত সপ্তাহেই জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছিল অপরাধীরা সে কথা তিনি জানতেন।  তাই একদম কাকভোরেই আদালতে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন।  কিন্তু বুঝতে পারেননি অপরাধীরা শিকারির মতো তাঁরই জন্যে ওৎ পেতেছিল রেল স্টেশনের গেটের পাশেই। সেই নির্জন স্থানে তিনি পৌঁছতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর।

ভোরের আলো তখনও সেভাবে ফোটেনি। তরুণীর চিৎকার তাই শুনতে পাননি এলাকাবাসী। পাঁচজনের মধ্যে তিনজনেই ধর্ষণে অভিযুক্ত। বাকি দু’জন তাঁর অপরিচিত ছিল। যদিও পরে পুলিশ জানিয়েছে, বাকিরা ছিল ওই ছেলেদেরই বাবা। তরুণীকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে পাঁচজন। প্রথমে ধমকধামক, আদাসতে সাক্ষী দিতে যাওয়ার জন্য হুমকি। এর পরেও তরুণীর নির্ভীক, সাহসী আচরণ দেখে আর সহ্য হয়নি অপরাধীদের। নির্যাতিতার কথায়, “প্রথমে সপাটে লাঠির গা কষিয়ে দেয় আমার পায়ে। যন্ত্রণায কঁকিয়ে উঠি। তারপর আবার, বারবার। সামনে, পিছন থেকে দফায় দফায় লাঠির ঘা পড়তে থাকে আমার সারা শরীরে।”

পা ভেঙে মাটিতে বসে পড়লে একজন তরুণীর গলায় বসিয়ে দেয় ছুরির কোপ। রক্তে ভিজে যায় মাটি। যন্ত্রণায় তরুণী যখন ছটফট করছেন সকলে মিলে তাঁর গায়ে ডালতে থাকে পেট্রল। তার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জ্বালাপোড়ার সেই যন্ত্রণা আর মুখ ফুটে বলতে পারেননি তরুণী। পুলিশকে জানিয়েছেন, বাঁচার একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন তিনি।  গায়ে আগুন নিয়েই রাস্তা ধরে চিৎকার করতে করতে ছুটতে শুরু করেছিলেন। তার পরে ওই অবস্থাতেই এক জনের মোবাইল চেয়ে, তা থেকে ফোন করেন পুলিশকে।  তার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছে উদ্ধার কর তাঁকে।

পুলিশ জানিয়েছে, গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত ছিল শিবম ত্রিবেদী।  জামিনে ছাড়া পেয়ে নিজের গ্রামে ফিরে এসেছিল। তার পর তরুণীকে পুড়িয়ে মারার ছক সাজিয়েছিল সেই। তাকে সাহায্য করে আরও একজন শুভম ত্রিবেদী। সেও ধর্ষণে অভিযুক্ত ছিল।  উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সূত্রের খবর, যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আগুন লাগানোর অভিযোগ করেছেন তরুণী, তাঁদের সকলকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশি তদন্ত কত দ্রুত, কী ভাবে এগোচ্ছে, তা বিশদে জানতে চেয়ে, জাতীয় মহিলা কমিশন রিপোর্ট চেয়েছে পুলিশের কাছে। নির্যাতিতার চিকিত্‍‌সার যাবতীয় খরচ রাজ্য সরকারই বহন করবে বলে ঘোষণা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুনীল গুপ্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, লখনউয়ের কিং জর্জেস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে প্রথমে ভর্তি ছিলেন দগ্ধ তরুণী। অবস্থা ক্রমে খারাপ হওয়ায় সফদরজঙে তাঁকে উড়িয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানেই ডাক্তার শালাব কুমারের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। নির্দিষ্ট একটি আইসিইউ তৈরি করা হয়েছে তাঁর জন্য। সফদরজং হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান শালাব কুমার জানিয়েছেন, ক্ষত বাড়ছে দ্রুত। তরুণীর অবস্থা ক্রমেই আশঙ্কাজনক হচ্ছে আরও বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.