ভারতে জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোর দীর্ঘকালীন দাবি ছিলো কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা সরানো। কাশ্মীরের ভারতভুক্তির দাবী জানাতে গিয়ে প্রাণ পর্যন্ত বলিদান দিয়েছেন ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বহু আন্দোলন‚ বহু প্রাণ বলিদানের এত বছর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেই ধারা বাতিল হয়েছিল। আর এবার সুপ্রিম কোর্টও সিলমোহর লাগিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে ৩৭০ ধারা হটানো সম্পূর্ণভাবে বৈধ।
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন জানিয়েছে আরএসএস।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ তথা আরএসএস প্রথম থেকেই ৩৭০ ধারার বিরোধী ছিলো। বেশ কিছু বক্তব্য এবং নিরন্তর সংগ্রামের দ্বারা তারা এই ধারার বিরোধী আন্দোলন সক্রিয় রেখেছিলো। সঙ্ঘের মতে সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে। জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ অবশেষে ৩৭০ ধারার কারণে বছরের পর বছর ধরে যে অবিচারের শিকার হয়েছিল তা থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে তাদের শুভকামনা জানিয়েছেন আরএসএস প্রচার প্রমুখ সুনীল আম্বেকার।
১৯৫০ সালে সংবিধানে প্রথম ৩৭০ ধারা ঢোকানো হয়। তারপর থেকে আরএসএস কাশ্মীর ইস্যুতে মোট ২৭ টি প্রস্তাব পাস করেছে, যার বেশিরভাগই ৩৭০অনুচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত। প্রতিটি প্রস্তাবেই সঙ্ঘের বক্তব্য ছিলো যে ধারাটি দেশে “বিচ্ছিন্নতা” সৃষ্টি করছে।
আরএসএস-এর ইংলিশ মুখপত্র, অর্গানাইজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক সদাশিবরাও গোলওয়ালকর বলেছিলেন যে কাশ্মীরকে ধরে রাখার একটিমাত্র উপায় রয়েছে এবং তা হল ভারতের সাথে সম্পূর্ণ একীকরণ। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছিলেন যে ৩৭০ ধারা অবশ্যই বর্জন করতে হবে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য পৃথক পতাকা এবং পৃথক সংবিধান পরিত্যাগ করতে হবে।
স্বাধীনতার পর আরএসএস ৩৭০ ধারার বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিল। তা ছিলো ১৯৪৭ সালের ‘প্রজা পরিষদ আন্দোলন’। ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি ৩৭০ ধারা বাতিলের জন্য আরএসএস এর আন্দোলনকে স্লোগান দিয়েছিলেন: ‘এক দেশ মে দো বিধান, দো নিশান অর দো প্রধান না হো সক্তে’ (এক দেশে দুটি সংবিধান, দুটি চিহ্ন এবং দুটি মাথা থাকতে পারে না)।
আরএসএসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনমোহন বৈদ্য ২০১৯ সালে তার একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন যে সঙ্ঘ ১৯৫৩ সালে প্রথমবারের মতো একটি প্রস্তাব পাস করেছিল এবং জম্বু ও কাশ্মীরের প্রজা পরিষদের নেতৃত্বে ভারতে সাথে রাজ্যের সম্পূর্ণ একীকরণের জন্য আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল।
তারপর থেকে সঙ্ঘ অসংখ্যবার
প্রস্তাব পাস করেছে এবং নিয়মিতভাবেই ৩৭০ ধারা সম্পর্কে সারা দেশে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েছে।
এই বিষয়ে আরএসএস দ্বারা পাস করা সর্বশেষ প্রস্তাবটি ছিল ২০১০ সালে, যেখানে বলা হয়েছিল যে ৩৭০ ধারা আমাদের সংবিধানে একটি “অস্থায়ী এবং ক্ষণস্থায়ী বিধান” হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে তা বাতিল হওয়ার পরিবর্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৮৪‚ ‘৮৬‚’৯০‚৯৭‚২০০২‚২০০৪ সহ অসংখ্যবার কাশ্মীরের জন্য বিশেষ মর্যাদার বিরুদ্ধে রেজুলেশন পাস হয়েছিল।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে আগস্ট ২০১৯ এ ৩৭০ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্তকে বহাল রেখেছে।
ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াইয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এটা নিশ্চিত করেছেন যে রাষ্ট্রপতি একতরফাভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দিতে পারেন।